Header Ads

Header ADS

82 সংস্পর্শ সোহব্বত


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ


* নিজের অন্তরকে তাদের সঙ্গলাভে নিশ্চিন্ত করো যারা নিজেদের রবের সন্তুষ্টির সন্ধানে সকাল-সাঁঝে তাঁকে ডাকে এবং কখনো তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরাবে না,১৮:কাহাফ: ২৮


وَ اصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَ الْعَشِیِّ یُرِیْدُوْنَ وَجْهَهٗ وَ لَا تَعْدُ عَیْنٰكَ عَنْهُمْۚ تُرِیْدُ زِیْنَةَ الْحَیٰوةِ الدُّنْیَاۚ وَ لَا تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَهٗ عَنْ ذِكْرِنَا وَ اتَّبَعَ هَوٰىهُ وَ كَانَ اَمْرُهٗ فُرُطًا


* সৎসংগে সর্গবাস অসৎ সঙ্গ সর্বনাশ,সৎ লোকের শাহচর্য তোমাকে সৎ বানাবে


* চোর কুতুবে পরিণত, কারামাতে গাউছে পাক:পবিত্র বাগদাদ নগরীতে এক প্রসিন্ধ চোর,গাউছে পাকের ঘরে প্রবেশ করে,হযরত খিজির (আ.)ঘরে প্রবেশ করে হযরত বড়পীরকে বললেন,আজ ইরানের নেহাওন্দ শহরের কুতুব ইনতিকাল করেছেন,গাউছুল আযম চোরকে তওবা করায়ে এমন জামালী ফয়েজের দৃষ্টি দিলেন যে, এক মুহুর্তে সে যাবতীয় মারেফাত তত্ত্ব ও গুপ্ত রহস্যের অধিকারী হয়ে কুতুবে পরিণত হয়ে ইরানের নেহাওন্দ শহরে চলে গেলো।


یک زمانہ صحبت با اولیاء -- بہتر از صد سالہ طاعت بے ریا


* বন্ধুর দোষ সংশোধনে ব্যর্থ হলে কৌশলে যথাসম্ভব বন্ধুত্ব এরিয়ে চলবে,যেমনটি করেছিলেন, আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদেক (রহঃ)। ইমাম জাফর সাদেকের এক বন্ধু ছিলো,একদা বন্ধু ও তার চাকর ইমামের সাথে বাজারে যায়,চাকর অন্যাত্রে ফিরে আসলে বন্ধু গালাগালি করে


* ইমাম গাযযালী (রহঃ) বন্ধু নির্বাচনে ৩টি গুণের কথা উল্লেখ করেন,১. বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ


২.বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময় এবং


৩. বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পুণ্যবান


* জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাওয়ার কয়েকটি কারণ বর্ননা করবেন,এক,৭৪: আল-মুদ্দাস্সির: ৪০


فِیْ جَنّٰتٍﰈ یَتَسَآءَلُوْنَۙ -- عَنِ الْمُجْرِمِیْنَۙ


مَا سَلَكَكُمْ فِیْ سَقَرَ --- قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّیْنَۙ


وَ لَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِیْنَۙ --- وَ كُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآئِضِیْنَۙ -- وَ كُنَّا نُكَذِّبُ بِیَوْمِ الدِّیْنِۙ


* দুই, আমরা এমন লোকদের সাথে চলাফেরা করতাম যারা ছিল অসৎ,রোজ হাশরে প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ দল বা বন্ধুদের সাথে উত্থিত হবে। তাই আল কোরআনে এ মর্মে হুশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে,৩:ইমরান:২৮


لَا یَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُوْنَ الْكٰفِرِیْنَ اَوْلِیَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِیْنَۚ وَ مَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَلَیْسَ مِنَ اللّٰهِ فِیْ شَیْءٍ اِلَّاۤ اَنْ تَتَّقُوْا مِنْهُمْ تُقٰىةًؕ وَ یُحَذِّرُكُمُ اللّٰهُ نَفْسَهٗؕ وَ اِلَى اللّٰهِ الْمَصِیْرُ


* কাফেরদের কুফরী স্বভাব নিজের আখলাকে বহি: প্রকাশ ঘটবে,সে বিষাক্ত সাপ থেকেও ভয়ংকর। বিষাক্ত সাপ কেবল তোমার জীবনের ক্ষতি করবে কিন্তু অসৎ বন্ধু তোমার জীবনের সাথে সাথে তোমার ঈমানও শেষ করে দিবে। ৪: আন-নিসা:১৪০


وَ قَدْ نَزَّلَ عَلَیْكُمْ فِی الْكِتٰبِ اَنْ اِذَا سَمِعْتُمْ اٰیٰتِ اللّٰهِ یُكْفَرُ بِهَا وَ یُسْتَهْزَاُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتّٰى یَخُوْضُوْا فِیْ حَدِیْثٍ غَیْرِهٖۤ ﳲ اِنَّكُمْ اِذًا مِّثْلُهُمْؕ اِنَّ اللّٰهَ جَامِعُ الْمُنٰفِقِیْنَ وَ الْكٰفِرِیْنَ فِیْ جَهَنَّمَ جَمِیْعَا


* ঈমানদারদের দেখতে পাবেন না যারা আল্লাহ-বিদ্বেষী, রাসূল বিদ্বেষী, ইসলাম বিদ্বেষী তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে,৫৮-মুজাদিলাহ,:২২


لَا تَجِدُ قَوْمًا یُّؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ یُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَهٗ وَ لَوْ كَانُوْۤا اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِیْرَتَهُمْؕ أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِیْ قُلُوْبِهِمُ الْاِیْمَانَ وَ اَیَّدَهُمْ بِرُوْحٍ مِّنْهُؕ وَ یُدْخِلُهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِیْنَ فِیْهَاؕ رَضِیَ اللّٰهُ عَنْهُمْ وَ رَضُوْا عَنْهُؕ أُولَٰئِكَ حِزْبُ اللّٰهِؕ اَلَاۤ اِنَّ حِزْبَ اللّٰهِ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ۠


* মোমেনদের বন্ধু হবে তিন শ্রেনীর মানুষ, বন্ধু বা সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর তা হল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের সাথেই কেবল বন্ধুত্ব করা। যারা আল্লাহর শত্রু রাসূলের শত্রু তাদের সাথে সম্পর্ক বর্জন করা। ৫:-মায়িদাহ:৫৫


اِنَّمَا وَلِیُّكُمُ اللّٰهُ وَ رَسُوْلُهٗ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوا الَّذِیْنَ یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَ یُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَ هُمْ رٰكِعُوْنَ


* বন্ধুরা মুত্তাকীরা ছাড়া অবশিষ্ট সব বন্ধুই সেদিন একে অপরের দুশমন হয়ে যাবে,৪৩:যুখরুফ: ৬৭


اَلْاَخِلَّآءُ یَوْمَئِذٍۭ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الْمُتَّقِیْنَؕ۠


* প্রতিদান দিবসে কারো প্রতি জুলুম করা হব না,কোন হামিম ও পাওয়া যাবে না,৪০-মু’মিন,১৭


اَلْیَوْمَ تُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍۭ بِمَا كَسَبَتْؕ لَا ظُلْمَ الْیَوْمَؕ اِنَّ اللّٰهَ سَرِیْعُ الْحِسَابِ


وَ اَنْذِرْهُمْ یَوْمَ الْاٰزِفَةِ اِذِ الْقُلُوْبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كٰظِمِیْنَ۬ؕ مَا لِلظّٰلِمِیْنَ مِنْ حَمِیْمٍ وَّ لَا شَفِیْعٍ یُّطَاعُؕ


* দুনিয়াতে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তার সঙ্গেই হাশর হবে,বুখারী،৬১৬৮: সহিহ


الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَب


মানুষের প্রত্যেকটি দলকে তার নেতা সহকারে ডাকা হবে।১৭: বনী ইসরাঈল:৭১


یَوْمَ نَدْعُوْا كُلَّ اُنَاسٍۭ بِاِمَامِهِمْۚ فَمَنْ اُوْتِیَ كِتٰبَهٗ بِیَمِیْنِهٖ فَأُولَٰئِكَ یَقْرَءُوْنَ كِتٰبَهُمْ وَ لَا یُظْلَمُوْنَ فَتِیْلًا


* সেজন্য বন্ধু নির্বাচনে হতে হবে সৎ আল্লাহ ওয়ালা মানুষ,দর্জী, ডাক্তার হতে চান,ডাক্তারের সোহব্বত নিতে হবে, আল্লাহ ওয়ালা হতে হলে, আল্লাহ ওয়ালা লোকদের সংস্রব নিতে হবে


صحبت صالح ترا صالح کند --- صحبت طالع ترا طالع کند


* নেক লোকের শাহচর্য থাকার ফলে ইমান নিয়ে মৃত্যু হওয়া নসীব হলো,ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত মুফাচ্ছির, দার্শনিক ও বিখ্যাত আলেম। তাঁর মৃত্যুর বিছানায় শয়নকালীন সময়ে শয়তান এসে তাকে জিজ্ঞাস করল, ‘আল্লাহ’ যে এক তার প্রমাণ কি?তার পীর হযরত নজমুদ্দীন কোবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি সে সময় নামাযের জন্য ওযু করছিলেন


__________


* নবী বংশের মহান ইমাম হযরত জাফর সাদিক (আঃ) বলেছেন, একজন মুসলমানের জন্য এটা কখনই ঠিক নয় যে, সে একজন গুনাহগারের সাথে বন্ধুত্ব করবে।কারো মধ্যে ভালো গুণ দেখে বন্ধুত্ব করার পরও যদি তার মধ্যে খারাপ গুণ দেখা যায় তাহলে কি করতে হবে ? এক্ষেত্রে প্রথমে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সে যদি নিজেকে সংশোধন করতে রাজি না হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে বন্ধুর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যেমনটি করেছিলেন, আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদেক (রহঃ)।‘ইমাম জাফর সাদেকের এক বন্ধু ছিলো ; যে সব সময় ইমামের সাথে ঘোরাফেরা করতো। একদিন ইমাম বাজারে গেলেন। সঙ্গে সেই বন্ধু ও তার কাজের ছেলেটি ছিলো। বাজারে ঘুরতে ঘুরতে কাজের ছেলেটি কৌতুহল বশতঃ এটা ওটা দেখছিলো এবং মাঝে মাঝে পরিচিত লোকদের সাথে কথা বলছিলো। এতে সে তার মনিবের কাছ থেকে একটু পিছিয়ে পড়লো। আর এদিকে ইমাম ও তার বন্ধুটি বাজারের মাঝখানে চলে গেল। হঠাৎ পেছনের দিকে তাকিয়ে কাজের ছেলেকে না দেখে ইমামের বন্ধুর মেজাজ বিগড়ে গেল। কিছুন পর ছেলেটি ফিরে এলে মনিব তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। ইমামের সামনেই সে কাজের ছেলেটির বাপ-মা তুলে গালি দিলো। লোকটির অশ্লীল কথাবার্তা শুনে ইমাম অবাক হয়ে তার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হায় আল্লাহ! একি করলে তুমি! ছেলেটির বাপ-মা তুলে গালি দিলে? আমি তো মনে করেছিলাম তুমি একজন ধার্মিক ও খোদাভীরু লোক। এখন দেখছি সামান্য তাকওয়াও তোমার মধ্যে নেই !’ইমামের কথা শুনে লোকটি বলল, আপনাকে আর কি বলবো, এই ছেলেটি আসলেই বদ। তার মা সিন্ধু থেকে এসেছিলো। ওই বেটির জন্মেরও কোন ঠিক ছিল না। তাছাড়া সে মুসলমানও ছিল না। সে ক্ষেত্রে তাকে কিছু বলা মোটেও অন্যায় হয়নি।’ইমাম বললেন, ‘আমি জানি ওই মহিলা একজন অমুসলিম ছিল। কিন্তু তোমার জানা দরকার, প্রত্যেক ধর্মেরই নিজ নিজ আইন কানুন আছে। একজন অমুসলিম তার নিজ ধর্মের আইন অনুযায়ী বিয়ে করলে অশুদ্ধ হয় না। তাদের বিয়ের পর সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করলেও তা অবৈধ হয় না। তুমি ছেলেটির মাকে অন্যায়ভাবে অপবাদ দিয়েছো। তাই তোমার সাথে বন্ধুত্ব রাখা আমার পক্ষে আর সম্ভব না। আজ থেকে তোমার সাথে আমার সম্পর্কের অবসান হলো। এ ঘটনার পর ইমাম জাফর সাদেকের সাথে ওই লোকটিকে আর কখনই দেখা যায়নি।’


★ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত মুফাচ্ছির, দার্শনিক ও বিখ্যাত আলেম। তাঁর মৃত্যুর বিছানায় শয়নকালীন সময়ে শয়তান এসে তাকে জিজ্ঞাস করল, ‘আল্লাহ’ যে এক তার প্রমাণ কি? তখন তিনি আল্লাহর একত্ববাদের উপর শয়তানের মোকাবেলায় মোট ৩৬০টি দলিল উপস্থাপন করলেন, শয়তানের কাছে তার সব দলিলই হেরে গেল। আর একটি দলিমাত্র বাকী। শয়তান যদি এটাকেও হারিয়ে দিতে পারে, তাহলে ইমাম রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহির মত আলেমকে ইহজগত থেকে ঈমান হারা হয়ে বিদায় নিতে হবে।এদিকে তার পীর হযরত নজমুদ্দীন কোবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি সে সময় নামাযের জন্য ওযু করছিলেন। পরিশেষে ইমাম রাযীর এ দুরবস্তা দেখে তাঁর নিকট জালালীয়াত এসে গেল। তখন তিনি ওযু রত ছিলেন, এতাবস্থায় তিনি ওযুর বদ্না শয়তানের দিকে নিক্ষেপ করে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন,হে ইমাম রাযী! তুমি শয়তানকে বলে দাও, আমি অন্তর দিয়ে আল্লাহকে এক স্বীকার করছি। আমার নিকট দলিলের কোন প্রয়োজন নেই। “বিনা দলিলে আল্লাহ্ এক”। 


আল্লাহর অলীর ক্ষমতার মাধ্যমে,নিক্ষিপ্ত ঐ বদ্না তাঁর আস্তানা থেকে কয়েক’শ মাইল দূরে ইমাম রাযীর মৃত্যু শয্যায় তাঁর মাথার পাশে গিয়ে পড়ল। তিনি স্বীয় মোর্শেদের সেই আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং বলিষ্ঠ কন্ঠে বলে দিলেন, “বিনা দলিলে আল্লাহ এক।” আর কলেমা শরীফ পাঠ করতে করতে তিনি ইহজগত ত্যাগ করেন। (9)


9. سير أعلام النبلاء للذهبي ২২/১১৩


বিশ্ববিখ্যাত ইমাম আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহির সখরাতের ঘটনার দিকে খেয়াল করলেও ছোহবত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সহজে অনুভব করা যায়। বিশুদ্ধ ঈমান ও সৎ জিন্দেগী গড়ে তুলতে আউলিয়ায়ে কেরামের ছোহবতে আসতে হবে।


()চোরকে কুতুবে পরিণত করা:()


--------কারামাতে গাউছে পাক:


পবিত্র বাগদাদ নগরীতে এক প্রসিন্ধ চোর ছিল। কোনদিন সে ধরা পড়েনি। সে বহু আমির ওমরাহের বাসায় চুরি করেছে। কিন্তু কেউ ধরতে পারেনি। সে একদিন গভীর রাতে গাউসে পাকের ঘরে ঢুকলো তখন গাউসে পাক ঘরের এক পার্শ্বে ইবাদত ও মুরাকাবায় মশগুল ছিলেন। চোর ঘরে তন্ন তন্ন করে তালাশ করলো কিন্তু কিছুই পেলনা। অবশেষে নিরাশ হয়ে ঘর হতে চলে যেতে চাইলো। কিন্তু চোখে দেখতে পাচ্ছে না। হতাশ হয়ে ঘরের এক কোণে চুপ করে বসে রইলো। আশা ভোরের আলোতে চলে যেতে সক্ষম হবে। সে ঘরে বসে কোন রকমে রাত পোহাচ্ছে। এমতাবস্থায় হযরত খিজির (আ.)ঘরে প্রবেশ করে হযরত বড়পীরকে বললেন ---আজ ইরানের নেহাওন্দ শহরের কুতুব ইনতিকাল করেছেন। আজ রাতের মধ্যে একজন কুতুব নিয়োগ করে ঐ শহরে পাঠিয়ে দিন। হযরত বড়পীর খাদেমকে ডেকে বললেন, আমার ঘরের কোনে একজন লোক চুপ করে বসে আছে তাকে আমার নিকট নিয়ে এসো। খাদেম লোকটিকে ধরে নিয়ে আসলো। চোর ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো। চোর অত্যন্ত কাকুতি মিনতি করে বলতে লাগলো,হুজুর আমি কোন দিন ধরা পড়িনি আজ আপনার কাছে ধরা পড়লাম। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করুন। আর কেন দিন চুরি করবো না।


দয়ার সাগর গাউছুল আযম বললেন--তুমি আমার ঘরে বড় আশা করে ঢুকেছো। তোমাকে খালী হাতে বিদায় দিতে আমার লজ্জা লাগছে। কাউকে খালী হাতে বিদায় দেয়া আমার স্বাভাব নয়। এসো! কাছে এসো। আজ তোমাকে এমন দৌলত দেবো, যা তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতের বাদশাহ্ বানিয়ে দেবে। অতঃপর গাউছুল আযম চোরকে তওবা করায়ে এমন জামালী ফয়েজের দৃষ্টি দিলেন যে, এক মুহুর্তে সে যাবতীয় মারেফাত তত্ত্ব ও গুপ্ত রহস্যের অধিকারী হয়ে কুতুবে পরিণত হয়ে ইরানের নেহাওন্দ শহরে চলে গেলো।।


* * একজন ভালো মানুষ বানানোর জন্য নামাজের তালিম দিতে হবে :—


 একদা এক চরিত্রহীনা কুলটা পরম ভ্রষ্টা সুন্দরী রমণী কোথাও হতে বুস্তান শহরে এসে লোকদেরকে কুকর্মে লিপ্ত করতে লাগলো ৷ প্রত্যেকবার দেহ ভোগের বিনিময়ে তাকে 200 দেরহাম দিতে হতো ৷ তার রূপ ও সৌন্দর্য এতই মোহনীয় ও আকর্ষণীয় ছিল যে, এই বিরাট অংক করতে ধনী গ্রাহকরা মোটেই কুণ্ঠিত হতো না ৷ এক মাসকাল শহরের বুকে তারে হারাম ব্যবসার চলতে থাকার কুফল এই দাঁড়ালো যে, অনেক সমৃদ্ধশালী পরিবার সর্বস্বহারা এবং অনেক লোক চরিত্রের দিক থেকে ধংস হয়ে গেল ৷ সমাজের শুভাকাঙ্ক্ষী চিন্তাশীল লোকেরা তৎকালের মশহুর অলি হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি এর নিকট উপস্থিত হয়ে এই বিষয়ে তাকে বিস্তারিত জানান ৷ লোকেরা তার নিকট আরজ করল হুজুর শহরের বুক হতে এ পাপ নিবারণের কোন সুব্যবস্থা করুন ৷ নতুবা অল্পদিনের মধ্যেই শহর ধ্বংস হয়ে যাবে ৷ লোকদের মুখে এ ঘটনা শোনার পর একদা মাগরিবের নামাজ শেষে হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি দুইশত দিরহাম সাথে নিয়ে ওই রমনীর বাড়ির দিকে যাত্রা করলেন এবং তার ঘরের দরজার সামনে পৌঁছে সেখানেই বসে রইলেন ৷ যথাসময়ে যথারীতি গ্রাহকদের আগমন শুরু হল ৷ কিন্তু গৃহদ্বারে হযরত বায়েজিদকে বসা দেখে সকলেই ফিরে গেল ৷ আনুমানিক রাত দশটা পর্যন্ত গড়ে কোন গ্রাহক প্রবেশ না করায় রমণীর মনে ভাবনা জাগল যে, অন্যান্য দিন এতক্ষণে গ্রাহকদের সীমাহীন ভিড় লেগে যায়, আর একজন ও আসলো না ৷ এর কারণ কি ? সে তখন নিজের চাকরকে অবস্থা জানার জন্য বাইরের দিকে পাঠিয়ে দিল ৷ চাকর ঘরের দরজায় এসে দেখল, হযরত বায়েজিদ বুস্তামি রহমাতুল্লাহি বসে রয়েছেন ৷ আর লোকরা দরজা পর্যন্ত এসে তাকে দেখে ফিরে যাচ্ছে ৷ সকলের মনে বিস্ময় জাগল যে, বাইজিদ রহমতুল্লাহি আজ এই দেহ করতে পসারিণীর গৃহদ্বারে কেন এসেছেন? চাকরটি হযরত বায়েজিদ কে নিশ্চয়ই চিনত না ৷ সে ঘরের অন্দরে যেয়ে রমণীকে খবর দিল ৷ যে মিসকিন গ্যাসের এক ব্যক্তি ঘরের দরজায় বসে রয়েছে তাকে দেখে অন্যান্য লোকজন এসে ফিরে যাচ্ছে ৷


 এ খবর পেয়ে রমণীটি ওই চাকর মাধ্যমে নবাগত লোকটিকে হযরত বায়েজিদ জিজ্ঞাসা করল, কিরূপে এখানে আসলেন, আমার এখানে তো গরিব লোকের আসার কথা নয় ৷ কারণ এখানকার রেট অনেক চড়া, বলুন আপনি কি উদ্দেশ্যে এসেছেন হযরত বাইজিদ রাহমাতুল্লাহ জবাবে বললেন, আমি রমণীর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছি এ কথাটি শুনে চাকরটি ব্যঙ্গাত্মক সুরে বলল আরে জনাব তিনি খুব উঁচুদরের রমনী, দুইশত দেরহামের কম হলে তিনি কারো সাথে কথা বলেন না ৷ তখন হযরত বাইজিদ বললেন আমি 200 দেরহাম দিতে রাজি আছি সারকথা হযরত বায়েজিদ রহমতউল্লাহ ঘরের ভেতর তাসরিফ নিলেন এবং নগদ দুইশত দিরহাম প্রদান করিয়া মহিলাটি কে বলল আজকের জন্য তুমি আমার হয়ে গেছ ৷ সুতরাং আমি যা বলব তোমাকে তাই মানতে হবে ৷ মহিলা উত্তর করলো জিহা, আপনি ঠিকই বলেছেন, তখন তিনি বললেন প্রথমে তুমি তোমার পরিধানের এই সমস্ত রেশমি কাপড় বদলিয়ে সাদা পোশাক পর, তারপর ওযু কর, একখানি জায়নামাজ সহ আমার নিকট চলে আসো, তার নির্দেশ অনুযায়ী কাপড় বদলিয়ে 


জায়নামাজসহ তার সামনে হাজির হল, তিনি হুকুম করলেন, জায়নামাজে কিবলামুখি হয়ে দাড়াও সে হুকুম তামিল করলো, তাকে কেবলা মুখী অবস্থায় জায়নামাজে দাঁড় করিয়ে দিয়ে হযরত বায়েজিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি অত্যন্ত কাকুতি-মিনতির সাথে আল্লাহপাকের দরবারে কে বলে মোনাজাত করতে লাগলেন, হে আল্লাহ তুমি সর্বজ্ঞ সবকিছুই তুমি দেখাও আমার সাধ্য যতটুকু ছিল আমি ব্যয় করেছি, ব্যভিচারের ঘৃণ্য পর্যায় হতে বের করে এনে আমি তাকে নামাজির বেশে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি, আমার দায়িত্ব আমি পালন করেছি, অবশিষ্ট আছে শুধু তার মনের গতি পরিবর্তন করে দেয়া এ তোমার ওই করণীয় কাজ, এবার তুমি তোমার দায়িত্ব পালন কর, পতিতার ঘরে বসেও লোকটি খোদাকে ভুলেননি বরং তার হেদায়েতের জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে করুণ ফরিয়াদ জানাচ্ছেন, এ অভাবনীয় ব্যাপার দেখে রমণীর মনে ভাবান্তর ঘটলো, আল্লাহর ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল, নিজের আজীবনের সমস্ত পাপাচারের কথা স্মরণ করে অনুশোচনায় ভরায় ভীতি বিহ্বল অন্তরে ভাবতে লাগলো, নিজেতো পাপীয়সি আছি, আল্লার বহু বান্দা কেও পাপে লিপ্ত করেছি, দিবারাত্রি শুধু পাপের খেলায় করেছি, এ অবস্থায় আমার না জানি কি অবস্থা ঘটবে, সেই সব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ এক মুহুর্তে সজোরে আল্লাপাক নাম উচ্চারণ করে সে হযরত বাইজিদ এর পাক কদমে লুটিয়ে পড়ে, আরজ করল হুজুর আমাকে তোওবা করান, এবং আপনার সেবিকা রূপেই হতভাগিনী কে কবুল করুন, হযরত বাইজিদ রহমতুল্লাহি তাকে তওবা করালেন, ওই মুহূর্তে হতেই যাবতীয় পাপ কাজ ছেড়ে দিল, এবং শেষ পর্যন্ত ওই জমানার ইবাদত গুজার সতী সাদুবি মহিলাঔ হিসেবে অতুলনীয় মর্যাদার অধিকারী হলো ৷ ওয়াজে বেনজির পৃষ্ঠাঃ 180

No comments

Powered by Blogger.