134 গান বাদ্য
134 গান বাদ্য
ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে গান-বাজনা করা হারাম ও কবীরা গুণাহের অন্তর্ভূক্ত। তা যে কোন গানই হোক না কেন। যেমন- নবী তত্ত্ব, মুর্শীদি, জারী, কাওয়ালী, পল্লীগীতি, ভাওয়ালী, ভক্তিমূলক ইত্যাদি যে কোন প্রকার গানেই হোক না কেন। তবে বাজনা বা বাদ্য-যন্ত্র ব্যতীত হামদ, না’ত, কাসীদা, গজল ইত্যাদি পাঠ করা ও শোনা জায়েয রয়েছে। তাই কিতাবে উল্লেখ আছে, ইলম দু’প্রকার।
(১) “ইলমে আরুজী” অর্থাৎ ছন্দ প্রকরন যেমন- “বালাগাল উলা বিকামালিহী ……… ও মীলাদ শরীফ-এ পাঠকৃত কাসীদাসমূহ, যা গানের সূরে পাঠ করা হয় না।
(২) “ইলমে মুসীক্বী” অর্থাৎ রাগ-রাগীনী বা গানের সূর। কাজেই বাদ্য-যন্ত্র বা বাজনাতো শরীয়তে সম্পূর্ণই নাজায়েয। সাথে সাথে বাদ্যবিহীন ইলমে মুসীক্বীও নাজায়েয।
মূলতঃ গান-বাজনা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অকাট্য ও কেৎয়ী দলীল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে হারাম সাব্যস্ত হয়েছে। মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকের অসংখ্য স্থানে গান-বাজনা করতে ও শুনতে নিষেধ করেছেন। যেমন কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻣَﻦ ﻳَﺸْﺘَﺮِﻱ ﻟَﻬْﻮَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻟِﻴُﻀِﻞَّ ﻋَﻦ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻋِﻠْﻢٍ ﻭَﻳَﺘَّﺨِﺬَﻫَﺎ ﻫُﺰُﻭًﺍ ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻣُّﻬِﻴﻦٌ
অর্থ: “লোকদের মধ্যে কিছু এরূপ আছে যে, ﻟﻬﻮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ “লাহওয়াল হাদীছ ” অবলম্বন করে, এ কারণে যে, (লোকদেরকে) বিনাজ্ঞানে খোদা তা’য়ালা উনার পথ হতে ভ্রষ্ট করে এবং তা হাসি-ঠাট্টারূপে ব্যবহার করে। তাদের জন্য অপমান জনক শাস্তি আছে।” (সূরা লুকমান: আয়াত শরীফ ৬)
এ আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ‘লাহওয়াল হাদীছ’ অবলম্বন করে, সে দোজখের কঠিন শাস্তি প্রাপ্ত হবে, কাজেই তা হারাম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ‘লাহওয়াল হাদীছ’ কি? উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ‘লাহওয়াল হাদীছ’-এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাছীর ৮ম খণ্ড, ৩/৪ পৃষ্ঠা য় উল্লেখ আছে,
ﻟﻤﺎ ﺫﻛﺮ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺣﺎﻝ ﺍﻟﺴﻌﺪﺍﺀ ﻭ ﻫﻢ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﻬﺘﺪﻭﻥ ﺑﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻳﻨﺘﻔﻌﻮﻥ ﺑﺴﻤﺎﻋﻪ ( ﺍﻟﻰ ) ﻋﻄﻒ ﺑﺬﻛﺮ ﺣﺎﻝ ﺍﻻﺷﻘﻴﺎﺀ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﻋﺮﺿﻮﺍ ﻋﻦ ﺍﻻﻧﺘﻔﺎﻉ ﺑﺴﻤﺎﻉ ﻛﻼﻡ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﺍﻗﺒﻠﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﺳﺘﻤﺎﻉ ﺍﻟﻤﺰﺍﻣﻴﺮ ﻭ ﺍﻟﻐﻨﺎﺀ ﺑﺎﻻﻟﺤﺎﻥ ﻭ ﺍﻻﺕ ﺍﻟﻄﺮﺏ ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻓﻰ ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻭ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻣﻦ ﻳﺸﺘﺮﻯ ﻟﻬﻮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻟﻴﻀﻞ ﻋﻦ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﻫﻮ ﻭ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻐﻨﺎﺀ . ﺭﻭﻯ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻦ ﺟﺮﻳﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻰ ﺍﻟﺒﻜﺮﻯ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺍﻧﻪ ﺳﻤﻊ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻭ ﻫﻮ ﻳﺴﺌﻞ ﻋﻦ ﻫﺬﻩ ﺍﻻﻳﺔ ﻭ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻣﻦ ﻳﺸﺘﺮﻯ ﻟﻬﻮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻟﻴﻀﻞ ﻋﻦ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺭﺿﻰ ﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺍﻟﻐﻨﺎﺀ ﻭ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺬﻯ ﻻ ﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﻫﻮ ﻳﺮﺩﺩﻫﺎ ﺛﻼﺙ ﻣﺮﺃﺕ، ﻭﻛﺬﺍ ﻗﺎﻝ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﺟﺎﺑﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻭﺣﻀﺮﺕ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺟﺒﻴﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﻣﺠﺎﻫﺪ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﻣﻜﺤﻮﻝ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺷﻌﻴﺐ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﻠﻰ ﺑﻦ ﺑﺬﻳﻤﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻭ ﻗﺎﻝ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﻟﺒﺼﺮﻯ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻧﺰﻟﺖ ﻫﺬﻩ ﺍﻻﻳﺔ ﻓﻰ ﺍﻟﻐﻨﺎﺀ ﻭﺍﻟﻤﺰﺍﻣﻴﺮ
অর্থ: “যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত সৌভাগ্যবানদিগের আলোচনা করলেন যারা মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব কর্তৃক পথ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন এবং তা শ্রবণে উপকৃত হন, তখন উক্ত হতভাগ্যদের আলোচনায় প্রবৃত্ত হলেন যারা আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কুরআন শরীফ শ্রবণ করার উপকারিতা হতে বিমুখ হয়েছে এবং বংশীধ্বনী সমূহ, কন্ঠস্বর ও সঙ্গীত যন্ত্র সমূহ কর্তৃক অনুষ্ঠিত সঙ্গীত শ্রবণ করতে অগ্রসর হয়েছে, যেরূপ হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন- ﻭ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻣﻦ ﻳﺸﺘﺮﻯ ﻟﻬﻮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻟﻴﻀﻞ ﻋﻦ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ এ আয়াত শরীফ সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ, তা ( ﻟﻬﻮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ) সঙ্গীত বা গান-বাজনা।
হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে- ﻭ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻣﻦ ﻳﺸﺘﺮﻯ ﻟﻬﻮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻟﻴﻀﻞ ﻋﻦ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ এ আয়াত শরীফ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য মা’বুদ বা উপাস্য নেই। উনার শপথ করে বলতেছি, ( ﻟﻬﻮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ) ‘লাহওয়াল হাদীছ’-এর অর্থ- সঙ্গীত বা গান-বাজনা। তিনি তিনবার এরূপ বলেছেন।
এরূপ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সাইদ ইবনে যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুজাহিদ মাকতুল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আলী ইবনে বোজায়মা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা ( ﻟﻬﻮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ) ‘লাহওয়াল হাদীছ’-এর অর্থ- সঙ্গীত বা গান-বাজনা বলেছেন। হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, ‘এ আয়াত শরীফটি সঙ্গীত ও বাদ্যসমূহ সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে।”
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হল যে, সূরা লুকমান-এর ৬ নং আয়াত শরীফখানা সঙ্গীত ও বাদ্য সমূহ নিষিদ্ধ হওয়ার সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। তাই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও বহু তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ﻟﻬﻮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ এর অর্থ সঙ্গীত বা গান-বাজনা বলে উল্লেখ করেছেন।
গান-বাজনা হারাম হওয়া সম্পর্কিত ২য় আয়াত শরীফখানা হচ্ছে সূরা নজম-এর ৬১নং আয়াত শরীফ , মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ﺃَﻓَﻤِﻦْ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺗَﻌْﺠَﺒُﻮﻥَ - ﻭَﺗَﻀْﺤَﻜُﻮﻥَ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺒْﻜُﻮﻥَ - ﻭَﺃَﻧﺘُﻢْ ﺳَﺎﻣِﺪُﻭﻥَ
অর্থ: “তোমরা কি এ কথার (কুরআন শরীফ-এর) উপর আশ্চর্য্যান্বিত হচ্ছো ও হাস্য করছো এবং ক্রন্দন করছো না, অথচ তোমরা সঙ্গীত বা গান-বাজনা করছো?”
এ আয়াত শরীফখানা নাযিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে তাফসীরে ইবনে জারীর, ২৭ খণ্ড, ৪৩/৪৪ পৃষ্ঠা য় উল্লেখ আছে যে,
ﻋﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﻮﻟﻪ ﺳﺎﻣﺪﻭﻥ ﻗﺎﻝ ﻫﻮ ﺍﻟﻐﻨﺎﺀ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﺍﺫﺍ ﺳﻤﻌﻮﺍ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺑﻐﻨﻮﺍ ﻭ ﻟﻌﺒﻮﺍ ﻭﻫﻰ ﻟﻐﺔ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﻴﻤﻦ
অর্থ: “হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, তিনি হযরত ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে রেওয়ায়েত করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম ﺳﺎﻣﺪﻭﻥ ‘সামিদুন’ (সামুদ ধাতু হতে উৎপন্ন হয়েছে)। এর অর্থ সঙ্গীত বা গান-বাজনা, যখন কাফিরেরা কুরআন শরীফ শ্রবণ করত, সঙ্গীত বা গান-বাজনা করত ও ক্রীড়া কৌতুকে লিপ্ত হত, এটা ইয়ামেনবাসীদের ভাষা।”
উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায়
তাফসীরে দুররে মানছুর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৩১/১৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ﺍﺧﺮﺝ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﻟﻔﺮﻳﺎﺑﻰ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻮ ﻋﺒﻴﺪ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﺒﺪ ﺑﻦ ﺣﻤﻴﺪ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﻟﺒﺰﺍﺯ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻦ ﺟﺮﻳﺮ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻤﻨﺬﺭ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺣﺎﺗﻢ ﻭ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻰ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻋﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻓﻰ ﻗﻮﻟﻪ ﻭﺍﻧﺘﻢ ﺳﺎﻣﺪﻭﻥ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻐﻨﺎﺀ ﺑﺎﻟﻴﻤﺎﻧﻴﺔ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﺍﺫﺍ ﺳﻤﻌﻮﺍ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺗﻐﻨﻮﺍ ﻭ ﻟﻌﺒﻮﺍ
অর্থ: “হযরত আব্দুর রজ্জাক’ ফারইয়াবি, আবূ উবাইদ, আব্দইবনে হুমাইদ, ইবনে আবিদ্দুনইয়া, বাজ্জাজ, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনজির, ইবনে আবী হাতেম এবং বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম ﻭَﺃَﻧﺘُﻢْ ﺳَﺎﻣِﺪُﻭﻥَ এর (ব্যাখ্যায়) হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে রেওয়ায়েত করেন, তিনি বলেন, ইয়ামেনবাসীদের ভাষায় (সামুদ শব্দের) অর্থ- সঙ্গীত। যখন কাফিরেরা কুরআন শরীফ শ্রবণ করতো, সঙ্গীত ও ক্রীড়া-কৌতুক করতো।”
অতএব, এ আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সঙ্গীত বা গান-বাজনা হচ্ছে কাফিরদের খাছ আমল। যা ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম।
গান-বাজনা হারাম হওয়া সম্পর্কে ৩য় আয়াত শরীফ হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ﻭَﺍﺳْﺘَﻔْﺰِﺯْ ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﺑِﺼَﻮْﺗِﻚَ
অর্থ: “এবং (হে ইবলিস) তুই তাদের মধ্য হতে যাকে পারিস নিজের শব্দ দ্বারা পদস্খলিত কর।” (সূরা বনী ইসরাইল: আয়াত শরীফ ৬৪)
এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায়
তাফসীরে ইবনে জারীর-এর ১৫/৭৬ পৃষ্ঠা য় আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন,
ﻋﻦ ﻣﺠﺎﻫﺪ ﻗﻮﻟﻪ ﻭﺍﺳﺘﻔﺰﺯ ﻣﻦ ﺍﺳﺘﻄﻌﺖ ﻣﻨﻬﻢ ﺑﺼﻮﺗﻚ ﻗﺎﻝ ﺑﺎﻟﻠﻬﻮ ﻭ ﺍﻟﻐﻨﺎﺀ ﻋﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻭﺍﺳﺘﻔﺰﺯ ﻣﻦ ﺍﺳﺘﻌﺖ ﻣﻨﻬﻢ ﺑﺼﻮﺗﻚ ﻗﺎﻝ ﺻﻮﺗﻪ ﻛﻞ ﺩﺍﻉ ﺩﻋﺎ ﺍﻟﻰ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﻠﻪ . ﻭ ﺍﻭﻟﻰ ﺍﻻﻗﻮﺍﻝ ﻓﻰ ﺫﻟﻠﻚ ﺑﺎﻟﺼﺤﺔ . ﻓﻜﻞ ﺻﻮﺕ ﻛﺎﻥ ﺩﻋﺎﺀ ﺍﻟﻴﻪ ﻭﺍﻟﻰ ﻋﻤﻠﻪ ﻭﻃﺎﻋﺘﻪ ﻭﺧﻼﻓﺎ ﻟﻠﺪﻋﺎﺀ ﺍﻟﻰ ﻃﺎﻋﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻬﻮ ﺩﺍﺧﻞ ﻓﻰ ﻣﻌﻨﻰ ﺻﻮﺗﻪ .
অর্থ: “হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত আয়াত শরীফ সম্বন্ধে বলেন, শয়তানের শব্দ অর্থ হচ্ছে ক্রীড়া ও সঙ্গীত বা গান-বাজনা।
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, শয়তানের শব্দের অর্থ যে কোন আহ্বানকারী আল্লাহ পাক উনার বিরুদ্ধাচরণের দিকে আহ্বান করে। এ মতগুলোর মধ্যে সমধিক ছহীহ এই যে, যে কোন শব্দে শয়তানের দিকে, এর কার্য্যরে ও আদেশ পালনের দিকে আহ্বান করা হয় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার বন্দিগির আহ্বানের বিপরীত হয়, তা শয়তানের শব্দের অন্তর্ভুক্ত হবে। এতে বুঝা যায় যে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ব্যাপক অর্থ গ্রহণ করেছেন, অর্থাৎ সঙ্গীতও এর অন্তর্গত। হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই ব্যাপক অর্থ সমর্থন করেছেন।
কুরআন শরীফ-এর উপরোক্ত তিনখানা আয়াত শরীফ ও তার ব্যাখ্যামূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সঙ্গীত বা গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি করা ও শোনা সম্পূর্ণ হারাম ও কবীরা গুনাহ।
“গান-বাজনা” ও “বাদ্য-যন্ত্র” হারাম হওয়া সম্পর্কে অসংখ্য হাদীছ শরীফও বর্ণিত রয়েছে, যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
ﺍﺳﺘﻤﺎﻉ ﺍﻟﻤﻼﻫﻰ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺟﻠﻮﺱ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻓﺴﻖ ﻭﺗﻠﺬﺫ ﺑﻬﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﻔﺮ
অর্থ: “গান শোনা গুণাহের কাজ, গানের মজলিসে বসা ফাসেকী এবং গানের স্বাদ গ্রহণ ও প্রশংসা করা কুফরী।”
অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ﺍﻟﻐﻨﺎﺀ ﻳﻨﺒﺖ ﺍﻟﻨﻔﺎﻕ ﻓﻰ ﺍﻟﻘﻠﺐ ﻛﻤﺎ ﻳﻨﺒﺖ ﺍﻟﻤﺎﺀ ﺍﻟﺰﺭﻉ
অর্থ: “পানি যেরূপ জমীনে ঘাস উৎপন্ন করে “গান-বাজনা” তদ্রুপ অন্তরে মুনাফেকী পয়দা করে।”
(বায়হাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান)
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন,
ﺑﻌﺜﺖ ﻟﻜﺴﺮ ﺍﻟﻤﺰﺍﻣﻴﺮ ﻭﺍﻻﺻﻨﺎﻡ
অর্থ: “আমি “বাদ্য-যন্ত্র” ও “মুর্তি” ধ্বংস করার জন্যে প্রেরিত হয়েছি।”
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
ﻋﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﻧﺎﻓﻊ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻛﻨﺖ ﻣﻊ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻓﻰ ﻃﺮﻳﻖ ﻓﺴﻤﻊ ﻣﺰﻣﺎﺭﺍ ﻓﻮﺿﻊ ﺍﺻﺒﻌﻴﻪ ﻓﻰ ﺍﺫﻧﻴﻪ ﻭﻧﺎﻋﻦ ﺍﻟﻄﺮﻳﻖ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺠﺎﻧﺐ ﺍﻻﺧﺮ ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ﻟﻰ ﺑﻌﺪ ﺍﻥ ﺑﻌﺪ ﻳﺎ ﻧﺎﻓﻊ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻫﻞ ﺗﺴﻤﻊ ﺷﻴﺌﺎ ﻗﻠﺖ ﻻ ﻓﺮﻓﻊ ﺍﺻﺒﻌﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﺫﻧﻴﻪ ﻗﺎﻝ ﻛﻨﺖ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺴﻤﻊ ﺻﻮﺕ ﻳﺮﺍﻉ ﻓﺼﻨﻊ ﻣﺜﻞ ﻣﺎ ﺻﻨﻌﺖ ﻗﺎﻝ ﻧﺎﻓﻊ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻭ ﻛﻨﺖ ﺍﺫ ﺫﺍﻙ ﺻﻐﻴﺮﺍ
অর্থ: হযরত না’ফে রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা কোন এক পথে আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা উনার সাথে ছিলাম। এ সময় তিনি বাঁশীর সুর শুনতে পেলেন। তখনই তিনি নিজের দু অঙ্গুলী দু কান মুবারক-এর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিলেন এবং সে রাস্তা হতে অপর রাস্তা দিয়ে সরে গেলেন। বহুদূর যাওয়ার পর আমাকে বললেন, হে নাফে’ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু! এখন কি আপনি কোন কিছু শুনতে পান? আমি বললাম, না। এবার তিনি উভয় কান মুবারক হতে অঙ্গুলী মুবারক সরিয়ে ফেললেন। অতঃপর বললেন, একবার আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ছিলাম, তখন তিনি (কোথাও হতে) বাঁশীর আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং আমি যা করেছি তিনিও তা করলেন। হযরত নাফে’ রদ্বিয়ল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বলেন, তখন আমি ছোট ছিলাম। (আহমদ ও আবূ দাঊদ শরীফ)
অর্থাৎ যে বাঁশীর সুর আমাদের প্রিয় নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘৃণা করেছেন এবং যাকে শয়তানের বাদ্যযন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনাদের থেকে শুরু করে পরবর্তী সর্বযুগের ইমাম ও ফকীহ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যাকে হারাম বলে ফতওয়া দিয়েছেন, তাকে চিত্ত-বিনোদনের নামে গ্রহণ করে নেয়ার কোন অবকাশ নেই। বরং তা সম্পূর্ণ হারাম।
স্মর্তব্য যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর আলোকে ইমাম-মুজাতাহিদ তথা ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা ফতওয়া দেন যে, “গান-বাজনা” বা “বাদ্য-যন্ত্র” সম্পূর্ণই হারাম। এটাকে হালাল বলা কুফরী।
যেমন আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে আযীযী”-এর ১ম খন্ডের ৬৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,
ﺩﺭﻣﻐﻨﯽ ﮔﻔﺘﮧ ﮐﮧ ﻟﮭﻮ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ﻏﻨﺎﺀ ﺍﺳﺖ ﻭﺍﮞ ﺣﺮﺍﻡ ﺍﺳﺖ ﺑﺎﯾﮟ ﻧﻨﺺ ﻭ ﻣﺴﺘﺤﻞ ﺍﮞ ﮐﺎﻓﺮ ﺍﺳﺖ
অর্থ: “ মুগনী” কিতাবে উল্লেখ আছে, ﻟﻬﻮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ হচ্ছে- “গান-বাজনা”, সঙ্গিত। এ আয়াত শরীফ দ্বারা তা হারাম সাব্যস্ত হয়েছে। যে ব্যক্তি এটাকে হালাল জানবে সে কাফের হবে।”
“ জামিউল ফতওয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ﺍﺳﺘﻤﺎﻉ ﺍﻟﻤﻼ ﻫﻰ ﻭﺍﻟﺠﻠﻮﺱ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻭﺿﺮﺏ ﺍﻟﻤﺰﺍﻣﻴﺮ ﻭﺍﻟﺮﻗﺺ ﻛﻠﻬﺎ ﺣﺮﺍﻡ ﻭﻣﺴﺘﺤﻠﻬﺎ ﻛﺎﻓﺮ
অর্থ: “গান-বাজনা” শ্রবন করা, “গান-বাজনার” মজলিশে বসা, “বাদ্য-যন্ত্র” বাজানো, “নর্ত্তন-কুর্দ্দন” করা সবই হারাম, যে ব্যক্তি এগুলোকে হালাল মনে করবে সে ব্যক্তি কাফির।” অনুরূপ প্রায় সকল ফিক্বাহের কিতাবেই “গান-বাজনা”, “বাদ্য-যন্ত্র” ইত্যাদিকে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে। সুতরাং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সংক্ষিপ্ত দলীল দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, “গান-বাজনা”, “বাদ্য-যন্ত্র” ইত্যাদি সব হারাম ও নাজায়েয। এগুলোকে হালাল মনে করা কাট্টা কুফরী। কাজেই কোন অবস্থাতেই “গান-বাজনা” করা ও শোনার অনুমতি শরীয়তে নেই তা যে কোন প্রকার গানই হোক না কেন।
কেউ কেউ বলে সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “গান-বাজনা” করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ) যারা এরূপ বলে তারা উনার উপর চরম মিথ্যা তোহমত দেয়। কারণ তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ্ পাক উনার খাছ ওলী তথা “হাবীবুল্লাহ্”। যিনি সারা জীবন সুন্নতের পুরিপূর্ণ অনুসরন-অনুকরন করেছেন। উনার পক্ষে কি করে হারাম “গান-বাজনা” করা সম্ভব? বিদয়াতীরা এ ব্যাপারে একটি দলীলও পেশ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “সামা” পাঠ করেছেন। আর বিদয়াতী, ভন্ড ফক্বীরেরা এটাকেই প্রচার করছে “গান-বাজনা” বলে। অথচ “গান-বাজনার” সাথে “সামা”-এর বিন্দুমাত্রও মিল নেই।
এ প্রসঙ্গে “ফাওয়ায়েদুল ফুওয়াদ” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, একদা দিল্লীর ৫০০ আলেমের সাথে সুলত্বানুল আউলিয়া হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাহাছ হয়। কারণ দিল্লীর সেই আলিমরা অপবাদ দিয়েছিল যে, হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “গান-বাজনা” করেন। বাহাছে যখন এ প্রশ্ন উত্থাপন করা হলো- তখন হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি কস্মিনকালেও “গান-বাজনা” করিনা বরং আমি “সামা” করি। আর আমার “সামা” পাঠের শর্ত হচ্ছে-
(১) সেখানে কোন “বাদ্য-যন্ত্র” থাকবে না,
(২) কোন বেগানা মহিলা থাকবে না,
(৩) কোন নাবালেগ দাড়ীবিহীন বালক থাকবে না,
(৪) যে ছন্দ বা ক্বাছীদাগুলো পাঠ করা হবে তা শরীয়ত সম্মত হতে হবে,
(৫) তা মহান আল্লাহ্ পাক ও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে আকৃষ্টকারী হতে হবে,
(৬) আর যাঁরা শুনবে, তাঁরা সবাই বুযুর্গ পরহেজগার ও আল্লাহ্ওয়ালা হতে হবে।
যখন হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একথা বললেন, তখন দিল্লীর আলিমরা উনাকে হক্ব বলে মেনে নিলেন এবং নিজদের ভুলের জন্য লজ্জিত হলেন। কাজেই পূর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যে “সামা” পাঠ করেছেন তা এরূপই ছিল। সেই “সামা”র সাথে বর্তমান জারী বা কাওয়ালীকে তুলনা করা কূফরী বৈ কিছুই নয়। অতএব, প্রমাণিত হলো- সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জীবনে কখনোই “গান-বাজনা” করেননি। যারা উনার নামে মিথ্যা তোহমত দেয় তারা চরম ফাসেক ও কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার।
কেউ কেউ বলে থাকে “বুখারী শরীফ”-এর ৫ম খণ্ডে “গান-বাজনা” জায়িয লেখা আছে, তারা চরম জাহিল ও বিদয়াতী। আর জাহিল বলেই বুখারী শরীফ-এর ৫ম খন্ড দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে। অথচ মূল বুখারী শরীফ-এর কোন ৫ম খন্ডই নেই। যারা বুখারী শরীফ-এর ৫ম খণ্ডে “গান-বাজনা” জায়িয লেখা আছে বলে থাকে তারা যেন- বুখারী শরীফ-এর যেখানে “গান-বাজনা” জায়েয বলা হয়েছে সে অংশটুকু বাংলায় অনুবাদ করে দেয়। তবেই তার মিথ্যা দলীলের হাক্বীক্বত প্রকাশ পেয়ে যাবে। মূলতঃ বুখারী শরীফ-এর কোথাও যদি “গান-বাজনা” জায়িয লেখা থাকতো তবে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “ আদাবুল মুফরাদ ” কিতাবে “গান-বাজনা” হারাম বললেন কেন? কাজেই যারা এ ব্যাপারে বুখারী শরীফ-এর দলীল দেয় তারা চরম জাহিল, ভন্ড, বিদয়াতী ও প্রতারক।
মূলকথা হচ্ছে ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে বিবাহ অনুষ্ঠানসহ সকল স্থানেই “গান-বাজনা” করা হারাম। এটাকে হালাল বলা কুফরী। সুলতানুল হিন্দ গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জীবনে কখনো “গান-বাজনা” করেননি। আর শুধু বুখারী শরীফ নয় বরং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোথাও “গান-বাজনা” জায়িয বলা হয়নি।
No comments