157 দুনিয়ায় বাদশাহী করেও আখেরাত কামাই করা যায়,প্রমান করলেন,উমর ইবনে আবদুল আজীজ
* ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির এই দুই জিনিসের মায়ায় মানুষ আল্লাহকে ভূলে যায়,মুনাফিকূন-৯
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
* সেদিন অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে লাগবে না,২৬: আশ-শুআরা:৮৮
یَوْمَ لَا یَنْفَعُ مَالٌ وَّ لَا بَنُوْنَۙ -- اِلَّا مَنْ اَتَى اللّٰهَ بِقَلْبٍ سَلِیْمٍؕ
* প্রথমত বলা হয়েছে,ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের একটি সাময়িক সৌন্দর্য-শোভা মাত،১৮: আল-কাহাফ:৪৬
اَلْمَالُ وَ الْبَنُوْنَ زِیْنَةُ الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا١ۚ وَ الْبٰقِیٰتُ الصّٰلِحٰتُ خَیْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَّ خَیْرٌ اَمَلًا
* এরপর বলা হয়েছে,অর্থ-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি আসলে পরীক্ষার সামগ্রী ৮: আল-আনফাল:২৮
وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَ اَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ١ۙ وَّ اَنَّ اللّٰهَ عِنْدَهٗۤ اَجْرٌ عَظِیْمٌ۠
* এই দুটির মধ্যে ধনীর জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালন ও মানুষের অধিকার আদায়ের পরীক্ষা আর গরিবের জন্য ধৈর্যের পরীক্ষা,২০: ত্ব-হা:১৩১
وَ لَا تَمُدَّنَّ عَیْنَیْكَ اِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا١ۙ۬ لِنَفْتِنَهُمْ فِیْهِ١ؕ وَ رِزْقُ رَبِّكَ خَیْرٌ وَّ اَبْقٰى
* সম্পদের পিছনে মানুষ ঘুরতেছে, তাকাসুর:1
أَلْهٰىكُمُ التَّكَاثُرُ -- حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ
* আল্লাহ সবাইকে ধনী হওয়ার সুযোগ দেননি,সবাই রাজা হলে প্রজা হবে কে, 42:আশ-শূরা:27
وَلَوْ بَسَطَ اللَّهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهِۦ لَبَغَوْا فِى الْأَرْضِ وَلٰكِن يُنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَآءُ ۚ إِنَّهُۥ بِعِبَادِهِۦ خَبِيرٌۢ بَصِيرٌ
* ইচ্ছা করলেই ধনী হওয়া যাবেনা, রিজিকের চাবি তাঁর হাতে,কোন বান্দা না খেয়ে মরবে না,এই একিন আমাদের থাকতে হবে,তার ভান্ডারে কোন অভাব নেই ৬:আনয়াম:৫৯
وَ عِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَیْبِ لَا یَعْلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَؕ وَ یَعْلَمُ مَا فِی الْبَرِّ وَ الْبَحْرِؕ وَ مَا تَسْقُطُ مِنْ وَّرَقَةٍ اِلَّا یَعْلَمُهَا وَ لَا حَبَّةٍ فِیْ ظُلُمٰتِ الْاَرْضِ وَ لَا رَطْبٍ وَّ لَا یَابِسٍ اِلَّا فِیْ كِتٰبٍ مُّبِیْنٍ
* এই পরিক্ষায় পাশ করা কঠিন, তবে যাদের হৃদয়ে আছে আল্লাহর ভয় তারা কভু পথ ভুলে যায় না,আল্লাহর প্রেম ছাড়া এই দুনিয়ায় কারো কাছে কোন কিছু চায়না,
* সম্পদ সবাইকে আল্লাহ ভূলা করতে পারে না ১, হযরত ওমর রা: অর্ধেকটা পৃথিবীর প্রেসিডেন্ট ছিলেন তারপরও সাধারণ জীবন যাপন বেছে নিয়েছেন, পানি চাইলেন মধু মিস্রিত পানি দিলে পান করলেন না, তাফসীরে নূরুল কোরআন 26 খন্ড পৃষ্ঠা 53 ওমর দেখে যাবেরের হাতে গোস্ত,সাহাবী দাওয়াত খাবারের প্রশংসা করা হযরত ওমর রা: বলেছিলেন (নূরুল কুর 26/54)৪৬: আল-আহক্বাফ: ২০
أَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِي حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا
* এই সম্পদ দিয়ে আল্লাহ পরিক্ষা করেন,সম্পদ সবাইকে আল্লাহ ভূলা করতে পারে না ২,বাদশাহী করেও আখেরাত কামাই করা যায়,প্রমান করলেন,উমর ইবনে আবদুল আজীজ
* উমর ইবনে আবদুল আজীজ বাদশা হয়ে সম্পদ সামনে ছিল নেননি:বাদশাহী করেও আখেরাত কামাই করা যায়, তিনি প্রমান করলেন,ফিরিয়ে দিলেন এক লাখ দিনার খলীফা উমর ইবনে আবদুল আজীজ র:এর মৃত্যুর সময় যখন উপস্থিত হলাে তখন তার স্ত্রীর ভাই মাসলামা ছুটে এলেন
* কাবুলের প্রেসিডেন্ট দোস্ত মাহমুদ খান তাঁর পুত্র যুদ্ধের মাঠ থেকে পলায়ন করে,স্ত্রী মানতে রাজি নয়(ওয়াজ ওখুতবা-১/৪০০ বাদশাহের স্ত্রী হওয়ার পরও আল্লাহকে ভূলে নাই
_______________
100 বাদশাহী করেও আখেরাত কামাই করা যায়, তিনি প্রমান করলেন
ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আমরা যেন গাফেল না হই
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
(আল মুনাফিকূন - ৯)
মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত
* উমর ইবনে আবদুল আজীজ বাদশাহয়ে সম্পদ সামনে ছিল নেননি:
বাদশাহী করেও আখেরাত কামাই করা যায়, তিনি প্রমান করলেন-
* ঈদের দিনেও নতুন কাপড় জুটলাে না রাজপুত্রদের হা , তিনি বাদশাহী করে দেখালেন । পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাদশাহী । কোন । এক ঈদের উৎসব নিয়ে এলাে । তিনি ঘরে গিয়ে দেখলেন , তার ছােট ছোট বাচ্চারা কাদছে । বাচ্চারা কেন কাদছে । ' স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন । " ওরা বলছে , আমাদের বন্ধুরা ঈদের জন্য নতুন নতুন কাপড় বানিয়েছে । আমাদের বাবা তাে আমীরুল মুমিনীন । অথচ আমাদের কাপড় - চোপড় কত পুরাতন । প্রায় ছিড়ে যায় যায় অবস্থা । এখনাে নতুন কাপড় এলাে না । আমাদেরকে নতুন কাপড় দিতে হবে । ' স্ত্রী বললেন । ‘ আমার কাছে তাে এখন পয়সা নেই । আমি কোথেকে নতুন কাপড় এনে দেবাে ? ' উমর ইবনে আবদুল আজীজ বললেন । রাষ্ট্রীয় কোষাগার বায়তুলমাল । সেখান থেকে বেতন নিতেন । যে বেতন পেতেন তাতে খুব কষ্টে দু'বেলার রুটি তরকারি জুটতো । তবুও স্ত্রী । বললেন , “ তাহলে এখন কি করবেন ? বাচ্চাদেরকে কি করে বুঝাবেন ? নিজেরা ততা ধৈর্য ধরতে পারবাে । কিন্তু বাচ্চারা তাে ধৈর্য ধরতে পারে না । ' সন্তানের সুখের জন্য মানুষ তাে ঈমানও বিক্রি করে দেয় । নিজের সব অর্জন বিসর্জন দিয়ে দেয় । তারপরও সে সন্তান বাবার চরম অবাধ্য হয় । বাবাকে বলে , তুমি আমাদের জন্য কি করেছো ? আমাদেরকে দেয়ার মতাে কি আছে তােমার ? দু'বেলা খাবার ছাড়া আর কি দিয়েছে আমাদের ?
কারণ , ওর জন্যই তাে বাপ খােদার নাফরমানী করেছে । আল্লাহ । তাআলার সন্তুষ্টিকে জলাঞ্জলী দিয়েছে । এজন্য এ সন্তান কখনাে বাবার বাধ্যগত হবে না । মা - বাবাকে সে জুতাপেটা করেও নির্বিকার থাকবে । ‘ উমর ইবনে আবদুল আজীজ ( র ) এর স্ত্রী বললেন , তাহলে ওদেরকে কি করে বুঝাবোে ? ' তাহলে আমিই বা কি করে বুঝাবাে ? ' উমর বললেন । রাখুন , আমার মাথায় একটি বুদ্ধি এসেছে । আপনি এক মাসের অগ্রিম বেতন উঠিয়ে নিন । এতে নিশ্চয় ওদের জামা - কাপড়ের ব্যবস্থা হয়ে যাবে । আমরা একটা মাস ধৈর্য ধরে কাটিয়ে দেবাে । ' স্ত্রী বুদ্ধি দিলেন । “ ঠিক আছে । ' উমর ইবনে আবদুল আজীজ বললেন । মাজাহিম তার গােলাম এবং রাজ কোষাগারের নিয়ন্ত্রকও । তাকে ডেকে বললেন , ‘ মাজাহিম মিয়া শােন , আমাকে এক মাসের অগ্রিম বেতন দিয়ে দাও ' । মাজাহিম শুধু খলীফা উমর ইবনে আবদুল আজীজের কর্মচারীই না , তার অধীনস্ত গােলামও । সে বলে উঠলাে , আমীরুল মুমিনীন ! ' আমি একটা কথা বলতে চাচ্ছি । ভুল হলে মাফ করে দেবেন । আপনি আমাকে এই জামানত দেবেন যে , আপনি কি আগামী এক মাস জীবিত থাকবেন ? অথচ আপনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ নিতে চাচ্ছেন । আপনি এক মাস জীবিত থাকবেন এ কথার জামানত দিতে পারলে বায়তুলমাল থেকে আপনি আপনার প্রয়ােজনীয় পয়সা নিয়ে নিন । আর যদি জামানত দিতে না পারেন তাহলে কেয়ামতের দিন আপনার গলা পাকড়াও করা হবে । '
উমর ইবনে আবদুল আজীজ ( রা ) চিৎকার করে বলে উঠলেন , ' না , না , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রসঙ্গে বলেছেন ,
كم من مقبل لا يكمله
এমন কত মানুষ আছে যারা দিনের সূর্যোদয় দেখতে পারে , কিন্তু সূর্যাস্ত দেখার আগেই দুনিয়া ছেড়ে চলে যায় ।
و كم من مستقبل لغد لا يدركه
আর এমন কত মানুষ আছে যারা আগামীকালের অপেক্ষায় থাকে । কিন্তু আগামীকালের সূর্যোদয় দেখতে পারে না । ' প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর মুখনিঃসৃত এই অনিবার্য সত্যবাণীটি হযরত উমর ইবনে আবদুল আজীজ ( র ) -এর মনে পড়লাে । তিনি বললেন , শােন বাচ্চারা ! এখানে ধৈর্য ধরাে । যা চাওয়ার আছে জান্নাতে গিয়ে । চাইবে পেয়ে যাবে । আমার কাছে এখন আর কিছু নেই তােমাদেরকে দেয়ার মতাে । আল্লাহর নির্দেশ ভাঙ্গেননি । নির্দেশের সীমা অতিক্রম করেননি । ব্যচ্চাদের মনের সাধ - স্বপ্ন ভেঙ্গেছেন । নিজের মনের ইচ্ছার বলি দিয়েছেন প্রয়ােজনকে বিসর্জন দিয়েছেন । এভাবেই “ লা - ইলা - হা ইল্লাল্লাহ ' এর গােলাম হয়ে যেতে হবে । স্ত্রী সন্তানদের গােলাম নয় । ব্যবসা বাণিজ্যের গােলাম নয় । বাদশাহীর গােলাম । নয় । ক্ষমতার গোলাম না ।( বেহেশতী নারী-১৯১)
* ফিরিয়ে দিলেন এক লাখ দিনার খলীফা উমর ইবনে আবদুল আজীজ ( র ) এর মৃত্যুর সময় যখন উপস্থিত হলাে তখন তার স্ত্রীর ভাই মাসলামা ছুটে এলেন । উমর ইবনে আবদুল আজীজের স্ত্রী হযরত ফাতেমাকে মাসলামা বললেন , আমীরুল মুমিনীনের পােষাকটা পাল্টে দাও না । এটা কেমন ময়লা হয়ে গেছে । ' “ ভাইজান । আল্লাহর কসম করে বলছি , আমীরুল মুমিনীনের এই একজোড়া পােষাকই আছে । এটা পরিবর্তন করবাে কিভাবে ? ' উমর ইবনে আবদুল আজীজ ( র ) এর স্ত্রী ফাতেমা বললেন । মাসলামা এবার আমীরুল মুমিনীন উমরকে বললেন , ' আমীরুল
আমীরুল মুমিনীন ! আপনার স্ত্রী সন্তানদেরকে এমন নিঃস্ব অসহায় অবস্থায় রেখে যাচ্ছেন । একথা বলে তিনি একটি থলে তার দিকে এগিয়ে দিলেন এবং
। বললেন , ' এখানে এক লাখ টাকা আছে । এটা আপনার ছেলে মেয়েদেরকে দিয়ে দেবেন । ওরা তাে আমারও ভাগ্নে - ভাগ্নি । “ তােমার এক লাখ টাকা নিয়ে এখান থেকে চলে যাও । আর এ টাকা । ওদেরকে দিয়ে এসে যাদেরকে জুলুম অত্যাচারের কারণে এটা তােমার হাতে এসেছে । আমার সন্তানদেরকে আমি হারাম খাওয়াতে চাই না । ' তারপর তিনি তার সন্তানদেরকে ডেকে বললেন , ‘ আমার প্রিয় ছেলে মেয়েরা আমার সামনে দুটো পথ ছিলাে । একটা হলাে , তােমাদের জন্য যেকোন ভাবে হােক সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতাম । এবং নিজেও জাহান্নামে যেতাম আর তােমাদের জন্য তা নিশ্চিত করে । যেতাম । আর দ্বিতীয় পথ ছিলাে , তােমাদেরকে তাওয়াক্কুল শেখাতাম এবং নিজের ও তােমাদের জান্নাত নিশ্চিত করে যেতাম । আমার প্রিয় সন্তানেরা ! আমি তাে জাহান্নামের আগুন সইতে পারবাে না এজন্য আমি তােমাদেরকে দ্বিতীয় পথে পরিচালিত করেছি । তােমাদেরকে আমি আল্লাহর কাছে চাইতে শিখিয়েছি । প্রয়ােজন হলে তার কাছ থেকে চেয়ে নেবে । তিনিই তােমাদের অভিভাবক । তার মৃত্যুর পর তাকে যখন কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হলাে তখন হঠাৎ আকাশ থেকে শীতল বাতাসের একটি ঝাপটা উড়ে এলাে । বাতাসের সঙ্গে উড়ে এলাে ধবধবে সাদা কাগজের একটি টুকরাে । হাজারাে মানুষ সেটা । স্বচক্ষে দেখলাে , তাতে লেখা ছিলাে ?
بـسـم الـلـه الـرحـمـن الـرحـم بـرائـة مـن الـلـه لـعـمـر ابـن عـبـد الـعـزيـز مـن الـنار
পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি । এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে উমর ইবনে আবদুল আজীজের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির প্রমাণপত্র । ' এই প্রমাণপত্রের সঙ্গেই ইসলামের পঞ্চম খলীফা উমর ইবনে আবদুল আজীজ ( র ) -কে কবরস্থ করা হলাে । এটাই শ্রেষ্ঠ মা - বাবার পরিচয় । শ্রেষ্ঠ মা - বাবার অমর গল্প । ।( বেহেশতী নারী-১৯৩)
( বেহেশতী নারী-191-194)
______________
----------------------
* উমর ইবনে আবদুল আজীজ বাদশাহয়ে সম্পদ সামনে ছিল নেননি:
বাদশাহী করেও আখেরাত কামাই করা যায়, তিনি প্রমান করলেন
* কাবুলের কাবুলের বেগমের ঘটনা কাবুলের বেগম দোস্ত মুহাম্মদ খান প্রচুর ধন - সম্পদ ও ঐশ্বর্যের মালিক ছিলেন । একবার তাঁর স্বামী হয়রান ও পেরেশান হয়ে অন্দর মহলে প্রবেশ করলেন । বেগম দাঁড়িয়ে স্বামীকে অভ্যর্থনা জানাতেই স্বামী বললেন , “ আজ একটি দুঃসংবাদ এসেছে । শত্রুরা দেশ আক্রমন করেছে আমি আমাদের শাহযাদাকে সৈন্য সহ দুশমনের মোকাবেলা করতে পাঠিয়ে দিয়েছি । ” বেগম বললেন , “ বেশ কাজ করেছেন । আপনি ঘাবড়াবেন না । আল্লাহ্ আপনাকে সাহায্য করবেন । পরের দিন দুঃখে কাতর বাদশাহ্ তাঁর বেগমের কাছে গিয়ে বললেন , “ খবর খুব দুঃখের এসেছে । শাহযাদা পরাজিত হয়ে পালিয়ে আসছে । বিজয়ী শত্রুরা দেশের মধ্যে প্রবেশ করছে । এবার দেশ যাবে , বাদশাহীও যাবে । ” বেগম বললেন , “ সম্পূর্ণ মিথ্যা খবর এটা । আপনি একথা মোটেই বিশ্বাস করবেন না । ” বাদশাহ্ বললেন , “ মিথ্যা নয় । সরকারী তথ্য বিভাগের এলান এটা । গোয়েন্দা বিভাগও এই খবর দিয়েছে । ” বেগম বললেন , “ আপনার সরকারী তথ্য - বিভাগ মিথ্যা । গোয়েন্দা বিভাগও ভুল খবর দিয়েছে । এটা একটা মিথ্যা খবর । এরূপ হতেই পারে না । ” বাদশাহ্ বললেন , “ সারা দেশের সরকারী ব্যবস্থা খবর দিয়েছে । এ খবর সত্য হওয়ার পিছনে যুক্তি রয়েছে । ” বেগম বললেন , “ সকল সরকারী ব্যবস্থা খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা পরিবেশন করেছে । ” বাদশাহ্ দেখলেন বেগমের কথার কোন যুক্তি নাই । যুক্তিহীন বিতর্ক করাই স্ত্রীলোকের স্বভাব । সুতরাং এই বিতর্কে সময় নষ্ট না করাই উচিৎ । বাদশাহ্ বাহিরে চলে গেলেন । তার পরের দিন বাদশাহ্ অন্দর মহলে প্রবেশ করে আনন্দ ও উল্লাসে ফেটে পড়লেন । বললেন , “ প্রিয়তমা ! আপনি যা বলেছিলেন সেই কথাটিই সত্য হয়েছে । আমাদের সন্তান যুদ্ধে জয়ী হয়েছে । দুশমনকে বিতাড়িত করে বিজয়ীর বেশে সে ফিরে আসছে । ” বেগম বললেন , “ আলহামদুলিল্লাহ্ ! মহান আল্লাহ্ কতই না ভাল । তিনি কথাকে সমুন্নত রেখেছেন এবং আমার কথাকে সত্যে পরিণত করেছেন । ” বাদশাহ্ বললেন , “ আপনি গতকাল কিভাবে এত জোর দিয়ে বলতে পেরেছিলেন বেগম , যে আমার সকল সরকারী ব্যবস্থা মিথ্যা ? আপনার কি কোন ' এলহাম ' হয়েছিল ? ” বেগম বললেন , “ কথাটির সাথে এলাহামের কোন সম্পর্ক নাই । তবে কথাটি গোপনীয় । এই রহস্য আমি কারো কাছে খুলতে চাই না । " বাদশাহ্ বললেন , “ এতই কি গোপনীয় যে স্বামীর কাছেও গোপনীয় থেকে যাবে ? ” বেগম বললেন , “ গোপনীয় এইজন্যে যে , এই রহস্য উদ্ঘাটন করতে হলে আমাকে ফিরে যেতে হবে সেই দিনগুলিতে যখন এই শাহযাদা গর্ভে ছিল । আল্লাহ্ পাকের কাছে আমি ওয়াদা করেছিলাম যতদিন এই সন্তান পেটে থাকবে আমি হারাম কোন খাদ্য গ্রহণ করবো না । সেই ওয়াদা আমি পুরাপুরি রক্ষা করেছিলাম । হারাম খাদ্য তো দূরের কথা কোনরূপ সন্দেহজনক পথে উপার্জিত খাদ্যের গ্রাসও আমি গ্রহণ করিনি । কারণ হারাম খাদ্য থেকে উৎপাদিত রক্তে লালিত সন্তান চরিত্রহীন এবং কাপুরুষ হয়ে থাকে । এছাড়া যখন বুকের দুধ পান করিয়েছি তখন প্রথমে ওযূ করেছি পরে দুই রাকাত নফল নামায পড়েছি । অতঃপর যিকির করতে - করতে আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হয়ে দুধ পান করিয়েছি । সুতরাং একদিকে পবিত্র রক্তে গঠিত হয়েছে তার দেহ অপরদিকে এবাদতের মাধ্যমে অর্জিত খোদা - ভীতি সঞ্চারিত হয়েছে তার অন্তরে । অতএব যার অন্তরে খোদা ভীতি আছে তার অন্তরে দুনিয়ার কোন কিছুর ভয় স্থান পেতে পারে না । সে যুদ্ধে শহীদ হতে পারে কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করতে পারে না । তাই সরকারী ব্যবস্থায় পরিবেশিত খবর ' আমার ছেলে পরাজিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেছে মিথ্যা বলে দাবী করেছিলাম । ” সুতরাং দেখা যায় কাবুলের রাণী বেগম দোেত মুহাম্মদ খান অজস্র ধন - দৌলত ও ঐশ্বর্যের মধ্যে থেকেও একজন পরহেজগার ও মুত্তাকীর জীবন অতিবাহিত করেছেন । দীনদার হওয়ার জন্যে যেমন ধনী হওয়া জরুরী নয় , তেমনি গরীব হওয়াও জরুরী নয় । অজস্র ধন - দৌলত ও আরাম আয়েশের মধ্যে থেকেও নারীগণ পুরুষের মতই দীনদার হতে পেরেছে । কোন কোন ক্ষেত্রে নারী সম্প্রদায় অধিক অগ্রসর হয়ে ইসলামী জীবনের সুখ ও শান্তি পুরুষের চেয়ে অধিক ভোগ করেছে । এরা জীবনেও সুখী , মরণেও একজন কামিয়াব বেহেশ্তী । –সূত্র: কারী মুহাম্মদ তাইয়েব ( রহঃ
No comments