106 সৃষ্টির সেরা মানুষ হল নেক আমল কারিগন
* আহসান আকৃতিতে মানুষকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব। দৈহিক শক্তি নয় জ্ঞানের দিক থেকে, আকৃতির দিক থেকে, পোশাক পরিচ্ছেদ, চলাফেরার স্বাধীনতা, নানা রংবেরঙের খাবার। দেহ সোজা করে; যে নিজের হাত দিয়ে পানাহার করে
* সব মানুষ আহসান আকৃতির কিন্তু সবাই স্রেষ্ট নয়
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِیْۤ اَحْسَنِ تَقْوِیْمٍ٘
ثُمَّ رَدَدْنٰهُ اَسْفَلَ سٰفِلِیْنَۙ
* মুফাস্সিরগণ সাধারণত এর দু'টি অর্থ বর্ণনা করেছেন। #এক, আমি তাকে যৌবনের পর বার্ধক্যের এমন এক অবস্থার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি যেখানে সে কিছু চিন্তা করার, বুঝার ও কাজ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে;
#দুই. আয়াতের দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, আমি তাকে জাহান্নামের সর্বনিম্ন পর্যায়ের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি। সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করার পর যখন মানুষ নিজের দৈহিক ও মানসিক শক্তিগুলোকে দুস্কৃতির পথে ব্যবহার করে তখন আল্লাহ তাকে এর উপযুক্ত প্রতিদান হিসেবে জাহান্নামকে তার আবাসস্থল বানিয়ে দেন। [কুরতুবী]
* নোবেল পুরস্কার পাইলেই শ্রেষ্ঠ হওয়া যায় না শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য দুটি গুণ লাগবে ঈমান আর আমল। কোটি টাকার মালিক বড় অফিসার আর বড় নেতা হলেই সৃষ্টির সেরা হয় না। সব মানুষ সুন্দর কিন্তু সবাই স্রেষ্ট নয়
* সৃষ্টির অধম তথা জানোয়ার স্বভাবের মানুষ আর স্রেষ্ট মানুষ আল্লাহর দৃষ্টিতে ৯৮ বাইয়েনাহ ৬-৭
اِنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ وَ الْمُشْرِكِیْنَ فِیْ نَارِ جَهَنَّمَ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا١ؕ اُولٰٓئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِیَّةِؕ
الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ١ۙ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَیْرُ الْبَرِیَّةِؕ
* মানুষ তার কর্মে স্রেষ্ট হবে
* মানুষের এমন কিছু নেক আমল আছে যা পর্বতমালা, লোহা,আগুন,পানি, বায়ু, এর চেয়ে শক্তিশালী যে ডান হাতে দান-খাইরাত করলে তার বাম হাতের কাছে অজানা থাকে। ব্যক্তির দান যদি এত মূল্যবান হয় তাহলে ব্যক্তির মূল্য কত
الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ١ۙ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَیْرُ الْبَرِیَّةِؕ
* নোবেল বিজয়ী কাকে দেওয়ার দরকার আর দেই কাকে
* সব মানুষ শক্তিশালী নয়, তবে ঐ মানুষ
يَا رَبِّ هَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الْجِبَالِ
تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ بِيَمِينِهِ يُخْفِيهَا مِنْ شِمَالِ
* সৃষ্টির সেরা মানুষ হল নেক আমল কারিগন। তাহলে যারা সুদ ঘুষ মদ মালে ভেজাল ইত্যাদি পাপকর্মে লিপ্ত হয় তারা কি সৃষ্টির সেরা নাকি নিকৃষ্ট?
________________________________________________________
আহসান আকৃতিতে মানুষকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব। দৈহিক শক্তি নয় জ্ঞানের দিক থেকে, আকৃতির দিক থেকে, পোশাক পরিচ্ছেদ, চলাফেরার স্বাধীনতা, নানা রংবেরঙের খাবার। দেহ সোজা করে; যে নিজের হাত দিয়ে পানাহার করে
* কেবলমাত্র মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলম্বিত দেহ সোজা করে; যে নিজের হাত দিয়ে পানাহার করে। তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যথোপযোগী বানিয়েছেন। তাতে পশুর মত বেমানান ও অসামঞ্জস্য নেই। প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তার মাঝে উচিত ব্যবধানও রেখেছেন। তাতে বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা, বোঝশক্তি, প্রজ্ঞা, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন। যার ফলে মানুষ আসলে তাঁর কুদরতের প্রকাশস্থল এবং তাঁর শক্তিমত্তার প্রতিবিম্ব।
* ৫. তারপর আমরা তাকে হীনতাগ্রস্তাদের হীনতমে পরিণত করি—(১)
(১) মুফাস্সিরগণ সাধারণত এর দু'টি অর্থ বর্ণনা করেছেন। এক, আমি তাকে যৌবনের পর বার্ধক্যের এমন এক অবস্থার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি যেখানে সে কিছু চিন্তা করার, বুঝার ও কাজ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে; ছোট শিশুর মত হয়ে যায়। দুই. আয়াতের দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, আমি তাকে জাহান্নামের সর্বনিম্ন পর্যায়ের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি। সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করার পর যখন মানুষ নিজের দৈহিক ও মানসিক শক্তিগুলোকে দুস্কৃতির পথে ব্যবহার করে তখন আল্লাহ তাকে এর উপযুক্ত প্রতিদান হিসেবে জাহান্নামকে তার আবাসস্থল বানিয়ে দেন। [কুরতুবী]
* ৬. কিন্তু তাদেরকে নয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে; এদের জন্য তো আছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।(১)
(১) এ আয়াতে মুমিন সৎকর্মশীলগণ এর ব্যতিক্রম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেসব মুফাসসির “আসফালা সাফেলীন” এর অর্থ করেছেন, বার্ধক্যের এমন একটি অবস্থা যখন মানুষ নিজের চেতনা ও স্বাভাবিক জ্ঞান-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে, তারা এই আয়াতের অর্থ এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, বয়সের এই পর্যায়েও তারা ঐ ধরনের সৎকাজগুলো করেনি বলে তাদের ভালো প্রতিদান দেবার ক্ষেত্রে কোন হেরফের হবে না, কমতি হবে না। বাৰ্ধক্যজনিত বেকারত্ব ও কর্মহ্রাস পাওয়া সত্বেও তাদের আমলানামায় সেসব কর্ম লিখিত হয়, যা তারা শক্তিমান অবস্থায় করত। [তাবারী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কোন মুসলিম অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা মুসাফির হলে আল্লাহ তা'আলা আমল লেখক ফেরেশতাগণকে আদেশ দেন, সুস্থ অবস্থায় সে যেসব সৎকর্ম করত, সেগুলো তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করতে থাক।” [বুখারী: ২৯৯৬, মুসনাদে আহমাদ: ২/১৯৪, ৩/২৫৮]
পক্ষান্তরে যেসব মুফাস্সির “ফিরিয়ে দেবার” অর্থ ‘জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে নিক্ষেপ করা’ করেছেন তাদের মতে, মহান আল্লাহ তা'আলা মানুষকে সুন্দর গঠনে সৃষ্টি করে তাকে অনেক নেয়ামত দান করেছেন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে দুনিয়ায় খেল-তামাশায় মত্ত হয়ে যায়। এই অকৃতজ্ঞতার শাস্তি হিসেবে তাদেরকে জাহান্নামের হীনতম ও নিম্নতম পর্যয়ে পৌছে দেয়া হবে। কিন্তু যারা মুমিন ও সৎকর্মী, তাদেরকে নিকৃষ্টতম পর্যায়ে পৌছানো হবে না; বরং তারা জান্নাতে এমন পুরস্কার পাবে যার ধারাবাহিকতা কোনদিন শেষ হবে না, যে পুরষ্কারের কোন কমতি হবে না। [বাদা'ই'উত তাফসীর, সা’দী]
৯৮ আল-বাইয়েনাহ, আয়াত: ৬
اِنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ وَ الْمُشْرِكِیْنَ فِیْ نَارِ جَهَنَّمَ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا١ؕ اُولٰٓئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِیَّةِؕ
আহলি কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তারা নিশ্চিতভাবে জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। তারা সৃষ্টির অধম।
৯৮ আল-বাইয়েনাহ, আয়াত: ৭
اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ١ۙ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَیْرُ الْبَرِیَّةِؕ
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তারা নিশ্চিত ভাবে সৃষ্টির সেরা।
هِ
* আবার সব মানুষ মানুষ না আল্লাহর দৃষ্টিতে বহু মানুষ জানোয়ারের কাতার আছে
* আল্লাহ মানুষকে নেয়ামত দিয়েছেন প্রত্যেকটা নেয়ামতের হিসাব হবে বিচারের দিনটি নির্দিষ্ট আছে সূরা নাবা 101 থেকে 17
78:6)
اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَرْضَ مِهٰدًاۙ
শব্দার্থ: أَلَمْ = নিকি, نَجْعَلِ = আমরা বানাই, الْأَرْضَ = ভূমিকে, مِهَادًا = বিছানাস্বরূপ,
অনুবাদ: একথা কি সত্য নয়, আমি যমীনকে বিছানা বানিয়েছি?
(78:7)
وَّ الْجِبَالَ اَوْتَادًا۪ۙ
শব্দার্থ: وَالْجِبَالَ = এবং পাহাড়-পর্বতকে, أَوْتَادًا = কীলকস্বরূপ,
অনুবাদ: পাহাড়গুলোকে গেঁড়ে দিয়েছি পেরেকের মতো?
(78:8)
وَّ خَلَقْنٰكُمْ اَزْوَاجًاۙ
শব্দার্থ: وَخَلَقْنَاكُمْ = এবং তোমাদেরকে আমরা সৃষ্টি করেছি, أَزْوَاجًا = জোড়ায়জোড়ায়,
অনুবাদ: তোমাদের (নারী ও পুরুষ) জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি?
(78:9)
وَّ جَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًاۙ
শব্দার্থ: وَجَعَلْنَا = এবং আমরা বানিয়েছি, نَوْمَكُمْ = তোমাদের ঘুমকে, سُبَاتًا = বিশ্রাম (শান্তিরবাহন) ,
অনুবাদ: তোমাদের ঘুমকে করেছি শান্তির বাহন,
(78:10)
وَّ جَعَلْنَا الَّیْلَ لِبَاسًاۙ
শব্দার্থ: وَجَعَلْنَا = এবং আমরা বানিয়েছি, اللَّيْلَ = রাতকে, لِبَاسًا = আবরণস্বরূপ,
অনুবাদ: রাতকে করেছি আবরণ
(78:11)
وَّ جَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا۪
শব্দার্থ: وَجَعَلْنَا = এবং আমরা বানিয়েছি, النَّهَارَ = দিনকে, مَعَاشًا = জীবিকা অর্জনেরসময়,
অনুবাদ: এবং দিনকে জীবিকা আহরণের সময়?
(78:12)
وَّ بَنَیْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًاۙ
শব্দার্থ: وَبَنَيْنَا = এবং আমরা নির্মাণকরেছি, فَوْقَكُمْ = তোমাদের উপর , سَبْعًا = সাত, شِدَادًا = সুদৃঢ় (আকাশ) ,
অনুবাদ: তোমাদের ওপর সাতটি মজবুত আকাশ স্থাপন করেছি
(78:13)
وَّ جَعَلْنَا سِرَاجًا وَّهَّاجًا۪ۙ
শব্দার্থ: وَجَعَلْنَا = এবং আমরা বানিয়েছি, سِرَاجًا = প্রদীপ (সূর্য) , وَهَّاجًا = উজ্জ্বল,
অনুবাদ: এবং একটি অতি উজ্জ্বল ও উত্তপ্ত বাতি সৃষ্টি করেছি?
(78:14)
وَّ اَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرٰتِ مَآءً ثَجَّاجًاۙ
শব্দার্থ: وَأَنْزَلْنَا = আমরা বর্ষণকরেছি, مِنَ = হতে, الْمُعْصِرَاتِ = মেঘমালা, مَاءً = পানি , ثَجَّاجًا = মুষলধারে,
অনুবাদ: আর মেঘমালা থেকে বর্ষণ করেছি অবিরাম বৃষ্টিধারা,
(78:15)
لِّنُخْرِجَ بِهٖ حَبًّا وَّ نَبَاتًاۙ
শব্দার্থ: لِنُخْرِجَ = এ জন্যযে আমরা বের করব, بِهِ = তাদিয়ে, حَبًّا = শস্য, وَنَبَاتًا = ওউদ্ভিদ,
অনুবাদ: যাতে তার সাহায্যে উৎপন্ন করতে পারি শস্য, শাক সবজি
(78:16)
وَّ جَنّٰتٍ اَلْفَافًاؕ
শব্দার্থ: وَجَنَّاتٍ = এবং বাগিচা সমূহ , أَلْفَافًا = ঘনসন্নিবিষ্ট,
অনুবাদ: ও নিবিড় বাগান?
(78:17)
اِنَّ یَوْمَ الْفَصْلِ كَانَ مِیْقَاتًاۙ
শব্দার্থ: إِنَّ = নিশ্চয়ই, يَوْمَ = দিন, الْفَصْلِ = বিচারের, كَانَ = আছে, مِيقَاتًا = নির্দিষ্ট,
অনুবাদ: নিঃসন্দেহে বিচারের দিনটি নির্ধারিত হয়েই আছে।
যে দান গোপনে করা হয় সে দান পাহাড় লোহার চেয়ে শক্তিশালী
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الأَرْضَ جَعَلَتْ تَمِيدُ فَخَلَقَ الْجِبَالَ فَعَادَ بِهَا عَلَيْهَا فَاسْتَقَرَّتْ فَعَجِبَتِ الْمَلاَئِكَةُ مِنْ شِدَّةِ الْجِبَالِ قَالُوا يَا رَبِّ هَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الْجِبَالِ قَالَ نَعَمِ الْحَدِيدُ . قَالُوا يَا رَبِّ فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الْحَدِيدِ قَالَ نَعَمِ النَّارُ . فَقَالُوا يَا رَبِّ فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ النَّارِ قَالَ نَعَمِ الْمَاءُ . قَالُوا يَا رَبِّ فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الْمَاءِ قَالَ نَعَمْ الرِّيحُ قَالُوا يَا رَبِّ فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الرِّيحِ قَالَ نَعَمِ ابْنُ آدَمَ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ بِيَمِينِهِ يُخْفِيهَا مِنْ شِمَالِهِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مَرْفُوعًا إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ .
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা যখন দুনিয়া সৃষ্টি করেন তখন তা দুলতে থাকে। তাই তিনি পর্বতমালা সৃষ্টি করে তাকে দুনিয়ার উপর স্থাপন করেন। ফলে দুনিয়া শান্ত হয়। পর্বতমালার শক্ত কাঠামোতে ফেরেশতাগণ বিস্মিত হয়ে বলেনঃ হে প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে পর্বতমালা হতেও কঠিন কোন কিছু আছে কি? আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হ্যাঁ, লোহা। তাঁরা বললেনঃ হে রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে লোহা হতেও শক্ত ও মজবুত কোন কিছু আছে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আগুন।তারা বললেনঃ হে প্রতিপালক! “আগুন হতেও আপনার সৃষ্টির মধ্যে শক্তিমান ও কঠিন অন্য কিছু আছে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, পানি। তাঁরা বললেনঃ প্রভু হে! আপনার সৃষ্টির মধ্যে পানি হতেও শক্তিশালী কিছু আছে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, বায়ু। অবশেষে ফেরেশতাগণ বললেনঃ হে প্রতিপালক! বায়ু হতেও বেশি কঠিন ও শক্তিশালী আপনার সৃষ্টির মধ্যে কিছু আছে কি? আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ হ্যাঁ, সেই আদম সন্তান, যে ডান হাতে দান-খাইরাত করলে তার বাম হাতের কাছে অজানা থাকে।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৩৬৯
হাদিসের মান: দুর্বল হাদিস
* আল্লাহর কোন সৃষ্টি সবচেয়ে শক্তিশালী
আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি আসমান-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র—সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। তাঁর একেকটি ক্ষুদ্র সৃষ্টিও মানুষকে মনে করিয়ে দেয় তিনি কত বড়, কত মহান ও কতটা ক্ষমতাধর। সাধারণত মানুষ পিঁপড়াকে অনেক ছোট প্রাণী হিসেবে জানে। কিন্তু এই ছোট্ট একটি পিঁপড়াতে যে মহান আল্লাহ কী নিপুণ কারিগরি রেখেছেন, তা জানলে যে কেউ হতভম্ব হয়ে পড়বে।
একটু চিন্তা করে দেখুন তো, আমরা কোথাও মিষ্টিজাতীয় জিনিস রেখে দিলেই মুহূর্তেই সেখানে শত শত পিঁপড়া জড়ো হয়। এটা কিভাবে সম্ভব? কে তাদের কাছে এই মিষ্টিজাতীয় জিনিসের বার্তা পৌঁছায়? তাদের তো দৃষ্টিশক্তিও অতটা তীক্ষ� হওয়ার কথা নয়। মহান আল্লাহ তাদের মধ্যে স্থাপন করে দিয়েছেন একটি বিশেষ ধরনের অ্যান্টেনা, যার মাধ্যমে তারা অন্য পিঁপড়াদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। সেই বিশেষ অ্যান্টেনার সিগন্যালের মাধ্যমে তারা আশপাশে রাখা খাবারের ঘ্রাণ পেয়ে যায়। ফলে মুহূর্তেই তারা সেখানে হাজির হয়ে যেতে সক্ষম হয়। মহান আল্লাহ তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকেই এভাবে বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ করে বলছেন, আল্লাহ তাআলা যখন দুনিয়া সৃষ্টি করেন, তখন তা দুলতে থাকে। তাই তিনি পর্বতমালা সৃষ্টি করে তাকে দুনিয়ার ওপর স্থাপন করেন। ফলে দুনিয়া শান্ত হয়। পর্বতমালার শক্ত কাঠামোতে ফেরেশতারা বিস্মিত হয়ে বলেন, হে প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে পর্বতমালা হতেও কঠিন কোনো কিছু আছে কি? আল্লাহ তাআলা বলেন, হ্যাঁ, লোহা।
লোহা অত্যন্ত শক্তিশালী ধাতু। পবিত্র কোরআনে এই লোহার নামেই একটি সুরা আছে—সুরা হাদিদ। ‘হাদিদ’ শব্দের অর্থ হলো লোহা। সেই সুরার ২৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি আরো নাজিল করেছি লোহা, তাতে প্রচণ্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে।’ ওই আয়াতে মহান আল্লাহ স্পষ্ট করেছেন যে এই শক্তিশালী ধাতুটি পৃথিবীতে সৃষ্ট কোনো ধাতু নয়। আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি আরো নাজিল করেছি লোহা’ অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরে থেকে নাজিল করেছি। লোহার একটি অণু তৈরি করার জন্য যতটুকু শক্তির প্রয়োজন তা এই পৃথিবী কেন, গোটা সৌরজগতেও নেই।
এ প্রসঙ্গে প্রফেসর আর্মস্ট্রং বলেন, সম্প্রতি বিজ্ঞান বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের গঠনপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পেরেছে। এই গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। লোহার একটি অণু তৈরি করতে যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন, তা এতই বেশি যে সমগ্র সৌরজগতের শক্তিও এর জন্য পর্যাপ্ত নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, লোহার একটি অণু তৈরি করতে সৌরজগতের মোট শক্তির চার গুণ শক্তি প্রয়োজন। কাজেই বিজ্ঞানীরা বর্তমানে বলছেন যে লোহা পৃথিবীতে সৃষ্ট কোনো পদার্থ নয়, লোহা এসেছে পৃথিবীর বাইরে থেকে। লোহা তৈরির জন্য প্রয়োজন কোটি ডিগ্রি তাপমাত্রা, যার জন্য প্রয়োজন সূর্যের চেয়েও বড় কোনো গলিত নক্ষত্রের বিস্ফোরণ। আল্লাহু আকবার।
হাদিসের তৃতীয় অংশে ফেরেশতারা মহান আল্লাহর কাছে আরজ করলেন, হে রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে লোহার চেয়েও শক্তিশালী কোনো কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আগুন। আমরা ওপরের আলোচনায়ই জেনে এসেছি যে লোহা তৈরির জন্য কোটি ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রয়োজন। আর তা হতে পারে আগুনের মাধ্যমে। দুনিয়ায়ও আমরা আগুনের মাধ্যমে লোহাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে পারি। যত বড় বড় দালানকোঠা, গাড়ি কিংবা মেশিন—সব কিছুতেই লোহার প্রয়োজন হয়। এরপর ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করলেন, হে প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আগুন থেকেও শক্তিমান ও কঠিন অন্য কিছু আছে কি? উত্তরে আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, পানি। পানিকে আল্লাহ তাআলা এতটা শক্তিশালী করেছেন যে সেই আগুন শক্তিশালী সৃষ্টিকে মহান আল্লাহর হুকুমে নিভিয়ে দেয়। এরপর ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করলেন, হে প্রভু! আপনার সৃষ্টির মধ্যে এমন কিছু কি আছে, যা পানির চেয়েও বেশি শক্তিশালী? উত্তরে মহান আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, বাতাস। বাতাসকে মহান আল্লাহ এতটাই শক্তিশালী বানিয়েছেন যে সে সাগরের পানিতে ঢেউয়ের সৃষ্টি করে। কখনো মহান আল্লাহর হুকুমে সুনামির মাধ্যমে সাগরের পানিকে তুলে নিয়ে কোনো জনপদকে গ্রাস করে নিতে পারে। অবশেষে ফেরেশতারা বললেন, হে প্রতিপালক! বাতাস থেকেও বেশি কঠিন ও শক্তিশালী আপনার সৃষ্টির মধ্যে কিছু আছে কি? আল্লাহ তাআলা বললেন, হ্যাঁ, সেই আদমসন্তান, যে ডান হাতে দান-খয়রাত করলে তার বাঁ হাতের কাছে অজানা থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৬৯)
এই হাদিসে মহান আল্লাহ সেই আদমসন্তানকে তাঁর সৃষ্ট শক্তিশালী সৃষ্টি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যে গোপনে আল্লাহর রাস্তায় দান করে। এর জন্য প্রয়োজন হয় ঈমানের শক্তির, যে শক্তি মহান আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মাঝে সেতুবন্ধ স্থাপন করে। এর চেয়ে বড় কোনো শক্তি মহান আল্লাহ তাঁর আর কোনো সৃষ্টিকে দেননি।
No comments