64/71 প্রতিবেশীর হক /বান্দার হক
* আয়াতুল হুকুকি আশারা
وَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْئًا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ بِذِی الْقُرْبٰى وَ الْیَتٰمٰى وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْجَارِ ذِی الْقُرْبٰى وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ١ۙ وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَاۙ - انساء-- 36
* বাপ-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো। নিকট আত্মীয় ও এতিম-মিসকিনদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্বসাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাধীন বাদী ও গোলামদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো। সব আল্লার বান্দা ঠিক কিনা
* ভাল ব্যবহার করা এটা বান্দার হক। ভালো ব্যবহার হবে যাদের সাথে। পিতা মাতা সন্তান স্বামী স্ত্রীর আত্বীয় প্রতিবেশীর হক। বাদ গেলো কে?
* বিশেষ করে আমি প্রতিবেশীর কথাই বলব ইসলামিক প্রতিবেশীর গুরুত্ব অপরশীম।
* জিবরাঈল আলাইহিস সালাম নবীজির কাছে প্রত্যেকবারই প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে আলোচনা করতেন
* এক ব্যক্তি বলেলে ইয়া রাসুল আল্লাহ আমি যে ভালো এটা কেমন করে বুঝবো নবীজি প্রতিবেশীর সার্টিফাই এর কথা উল্লেখ করলেন
* আমার ভালো সার্টিফিকেট দিবে কে? প্রতিবেশী। দূরের মানুষের কাছে আমি আমার প্রকৃত চরিত্র লুকিয়ে রাখতে পারি
* একজন প্রতিবেশী অন্য একজন প্রতিবেশীর দায়িত্ব হলো
#সৎ ব্যবহার করা।
#নিজের জিহ্বা হাত থেকে নিরাপদ রাখবে
#খোঁজ নেওয়া। তরকারীর একটু জোল হলেও পাঠিয়ে দাও
* প্রতিবেশীর হক অনাদায়ী মুমিন নয়
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قال سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِى يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ
* #হযরত জাফর বিন তৈয়্যার নবীজীর আপন চাচাতো ভাই মুতার যুদ্ধে শহীদ হলে নবীজি সান্ত্বনা দেন তিন দিনের খাবারের ব্যবস্থা করেন
* প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়ায় মহিলা নামাজ রোজা দানকারী হওয়ার পর ও নবীর ঘোষণা করেন জাহান্নামী
* একজন মন্দ প্রতিবেশীর সাথে ইমাম আবু হানিফার র: কি ব্যবহার করলেন। প্রতিবেশীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়
* হজরত সাহল বিল আবদুল্লাহ তাসতারি র:-এর একজন অগ্নি উপাসক প্রতিবেশী ছিল। প্রতিবেশীর ঘর থেকে প্রতিদিন প্রচুর ময়লা-আবর্জনা তার অলক্ষে ঘরে এসে পড়ত।
وَ لَا تَسْتَوِی الْحَسَنَةُ وَ لَا السَّیِّئَةُ١ؕ اِدْفَعْ بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ فَاِذَا الَّذِیْ بَیْنَكَ وَ بَیْنَهٗ عَدَاوَةٌ كَاَنَّهٗ وَلِیٌّ حَمِیْمٌ
_________________________
৪: আন-নিসা:আয়াত: ৩৬
وَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْئًا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ بِذِی الْقُرْبٰى وَ الْیَتٰمٰى وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْجَارِ ذِی الْقُرْبٰى وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ١ۙ وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَاۙ
আর তোমরা সবাই আল্লাহর বন্দেগী করো। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। বাপ-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো। নিকট আত্মীয় ও এতিম-মিসকিনদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্বসাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাধীন বাদী ও গোলামদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ এমন কোন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না যে আত্মঅহংকারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং নিজের বড়াই করে।
* প্রতিবেশীর হক অনাদায়ী মুমিন নয়
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قال سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِى يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “সে মুমিন নয়, যে ভরপেট খায় অথচ তার পাশে তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে।” (বুখারীর আদাব ১১২, ত্বাবারানী ১২৫৭৩, হাকেম, বাইহাকী ২০১৬০, সহীহুল জামে ৫৩৮২ নং)
হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৭৬৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
* তিন শ্রেণীর জন্য জান্নাত হারাম
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ ثَلاَثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمْ اَلْجَنَّةَ مُدْمِنُ الخَمْرِ وََالعَاقُّ وَالدَّيُوْتُ الَّذِيْ يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ.
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করেছেন। (১) সর্বদা মদপানকারী, (২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ও (৩) পরিবারে বেপর্দার সুযোগ দানকারী (দায়ূছ)’ (নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৬৫৫)।
ঊপদেশ, হাদিস নং ৭৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
* একজন মন্দ প্রতিবেশীর সাথে ইমাম আবু হানিফার র কি ব্যবহার:—
আবু হানিফা রহ.-এর একটি ঘটনা:
ইমাম আবু হানিফা রহ. সম্পর্কে একটি ঘটনা বর্ণিত, তার একজন প্রতিবেশী ছিল, যে তাকে প্রতিদিন তার চলার পথে কষ্ট দিত। ইমাম আবু হানিফা রহ. প্রতিদিন কষ্টদায়ক বস্তু পথ থেকে দূর করত এবং তার কষ্টের উপর ধৈর্য ধারণ করত। একদিন তিনি ঘর থেকে বের হলেন, কিন্তু নির্ধারিত কোনো কষ্টদায়ক বস্তু পথের মধ্যে দেখতে পেলেন না। তিনি লোক জনের নিকট তার প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নিলেন। তখন সবাই তাকে জানালো যে লোকটি একটি ঘটনা ঘটিয়েছে, যার কারণে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে জেল খানায় প্রেরণ করেছে। এ কথা শুনে আবু হানিফা রহ. থানায় গিয়ে সুপারিশ করে, তাকে জেল খানা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। কিন্তু লোকটি জানতো না যে, কে তার জন্য সুপারিশ করল?। জেল খানা থেকে বের হয়ে সে মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করল, কে আমার জন্য সুপারিশ করল। মানুষ তাকে বলল, তোমার প্রতিবেশী তোমার জন্য থানায় গিয়ে সুপারিশ করেছে। লোকটি বলল, কোন প্রতিবেশী? সবাই বলল, আবু হানিফা। তারপর সে তাকে কষ্ট দেয়ার কারণে লজ্জিত হল এবং কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকল। এই ছিল প্রতিবেশীর সাথে ইমামের সুন্দর ব্যবহার
* হজরত সাহল বিন আবদুল্লাহ তাসতারির ঘটনা : প্রতিবেশীর প্রতি সহিংসতার পরিচয় দেয়া মহৎ কাজ। হজরত সাহল বিল আবদুল্লাহ তাসতারি র:-এর একজন অগ্নি উপাসক প্রতিবেশী ছিল। প্রতিবেশীর ঘর থেকে প্রতিদিন প্রচুর ময়লা-আবর্জনা তার অলক্ষে ঘরে এসে পড়ত। কিন্তু সে জন্য তিনি প্রতিবেশীর কাছে কোনো অভিযোগ করতেন না। দিনের বেলা আবর্জনা জমা করে ঢেকে রাখতেন এবং রাতে বাইরে ফেলে দিতেন। সাহলের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে তিনি তার প্রতিবেশীকে ডেকে আবর্জনার স্তূপ দেখিয়ে বললেন, আমার মৃত্যু ঘনিয়ে না এলে আপনাকে এটা দেখাতাম না। আমার আশঙ্কা যে, আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবারের আর কেউ আমার মতো সহনশীলতা দেখাতে পারবে না। তাই আপনাকে দেখালাম। আপনি যা ভালো মনে হয় করুন। প্রতিবেশী অগ্নি উপাসকের বিস্ময়ের অবধি রইল না। সে সাহলের হাতে হাত রেখে ইসলাম গ্রহণ করল।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারীমে এটাই বলেছেন হামিদ আস সাজেদা ৩৪
)
وَ لَا تَسْتَوِی الْحَسَنَةُ وَ لَا السَّیِّئَةُ١ؕ اِدْفَعْ بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ فَاِذَا الَّذِیْ بَیْنَكَ وَ بَیْنَهٗ عَدَاوَةٌ كَاَنَّهٗ وَلِیٌّ حَمِیْمٌ
শব্দার্থ: وَلَا = এবং না , تَسْتَوِي = সমানহয়, الْحَسَنَةُ = ভালো, وَلَا = আর না, السَّيِّئَةُ = মন্দ, ادْفَعْ = প্রতিহতকরো, بِالَّتِي = সেই (জ্ঞান) দ্বারা, هِيَ = যা, أَحْسَنُ = উত্তম, فَإِذَا = ফলে (দেখবে) তখন , الَّذِي = যে, بَيْنَكَ = তোমারমাঝে, وَبَيْنَهُ = ওতারমাঝে, عَدَاوَةٌ = শত্রুতা (আছে) , كَأَنَّهُ = সেযেন (হয়েযাবে) , وَلِيٌّ = বন্ধু, حَمِيمٌ = অন্তরঙ্গ,
অনুবাদ: হে নবী, সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান নয়। তুমি অসৎ কাজকে সেই নেকী দ্বারা নিবৃত্ত করো যা সবচেয়ে ভাল। তাহলে দেখবে যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গিয়েছে।
* প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়ায় মহিলা নামাজ রোজা দানকারী হওয়ার পর ও জাহান্নামী জাহান্নামের কারন।
অপর একটি হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত একদা জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)!
إِنَّ فُلَانَةَ تُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلَاتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِيْ جِيْرَانَهَا بِلِسَانِهَا قَالَ هِيَ فِي النَّارِ، قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَإِنَّ فُلاَنَةَ تُذْكَرُ مِنْ قِلَّةِ صِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا وَصَلَاتِهَا وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنْ الْأَقِطِ وَلَا تُؤْذِيْ بِلِسَانِهَا جِيْرَانَهَا قَالَ هِيَ فِي الْجَنَّةِ- ‘
অমুক মহিলা অধিক ছালাত পড়ে, ছিয়াম রাখে এবং দান-ছাদাক্বাহ করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তবে সে নিজের মুখের দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয়। তিনি বললেন, সে জাহান্নামী। লোকটি আবার বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক মহিলা সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে কম ছিয়াম পালন করে, দান-ছাদাক্বাও কম করে এবং ছালাতও কম আদায় করে। তার দানের পরিমাণ হ’ল পনীরের টুকরা বিশেষ। কিন্তু সে নিজের মুখ দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয় না। তিনি বললেন, সে জান্নাতী’।[15]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ فُلَانَةَ يُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلَاتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِي جِيرَانَهَا بِلِسَانِهَا قَالَ هِيَ فِي النَّارِ)) قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ فَإِنَّ فُلَانَةَ يُذْكَرُ مِنْ قِلَّةِ صِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا وَصَلَاتِهَا وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنْ الْأَقِطِ وَلَا تُؤْذِي جِيرَانَهَا بِلِسَانِهَا قَالَ هِيَ فِي الْجَنَّةِ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! অমুক মহিলা বেশী বেশী (নফল) নামায পড়ে, সিয়াম রাখে ও দান-খয়রাত করে বলে উল্লেখ করা হয়; কিন্তু সে নিজ জিভ দ্বারা (অসভ্য কথা বলে বা গালি দিয়ে) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। (তার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?)’ তিনি বললেন, “সে দোযখে যাবে।” লোকটি আবার বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! অমুক মহিলা অল্প (নফল) নামায পড়ে, সিয়াম রাখে ও দান-খয়রাত করে বলে উল্লেখ করা হয়; কিন্তু সে নিজ জিভ দ্বারা (অসভ্য কথা বলে বা গালি দিয়ে) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। (তার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?)’ তিনি বললেন, “সে বেহেশ্তে যাবে।” (আহমাদ ৯৬৭৫, ইবনে হিব্বান ৫৭৬৪, হাকেম ৭৩০৫, সহীহ তারগীব ২৫৬০ নং)
হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৭৭৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
No comments