Header Ads

Header ADS

46 পিতামাতার হক

৪৬ পিতামাতার হক

পিতামাতার  সেবা করা ফরজ 

  وَ قَضٰى رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا١ؕ اِمَّا یَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَ قُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِیْمًا

وَ اخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَ قُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّیٰنِیْ صَغِیْرًاؕ

* বৃদ্ধা অবস্থার কথা কেন বললেন? আবার কেন শিশু কালের লালন পালনের কথা ও স্বরণ করে দিলেন

*  এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ খেদমত করবো কার? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেনঃ তোমার মা। চতুর্থবার পিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে,আর্থিক জোগানে থাকে পিতা মাতার বিশেষ ভূমিকা (তিরমিযী,আদাবুল মুফরাদ-৩

* জাহিমা (রাঃ) রাসুল (সা:)-এর খিদমতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি। এখন আপনার নিকট পরামর্শ জিজ্ঞাসা করতে এসেছি। তিনি বললেনঃ তোমার মা আছেন কি? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাঁর খিদমতে লেগে থাক। কেননা, জান্নাত তাঁর দু’পায়ের নিচে।,সুনানে আন-নাসায়ী- ৩১০৪ হাসান

* পিতামাতার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নেই। যেভাবে আবূ হুরাইরার মা হিদায়াতের দৌলত লাভ করেন।সহিহ মুসলিম, ৬২৯০

*  মুস্তাজাবুদ দাওয়াত তিন ব্যক্তি 

*  মা বাবার নেক দোয়া ও বদ দোয়া উভয় কবুল হয়। মায়ের ডাকে গুরুত্ব না দেয়ায় হযরত জুরাইজের যে পরিনীতি ভোগ করতে হলো,সহিহ বুখারী-২৪৮৩

*  সমুদ্র তলদেশে মানুষের ইবাদত - -:-.হযরত সুলাইমান (আ) প্রায় সময় আকাশ ওভুমির মাঝে বাতাসের উপর উড়তেন

* মা বাবার খেদমত করে মুস্তাজাবুদ দাওয়াত হয়েছে, পিতা মাতা যদি আল্লাহর নাফরমানি করে এরপর ও তাদের খেদমত করতে হবে, দুইটি শুয়োরের ঘটনা ইরাকে এক ব্যক্তি বাস করতো,সে শুনতে পেল যে, সিরিয়ায় এক আশ্চর্য ব্যক্তি আছে।সে যে দোয়া করে সেটাই কবুল হয়ে (ওয়াজ ও খুতবা-১/৩১৩


------------------------------


46 নামায ফরয পিতামাতার সেবা করা ফরজ 

  وَ قَضٰى رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا١ؕ اِمَّا یَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَ قُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِیْمًا

وَ اخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَ قُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّیٰنِیْ صَغِیْرًاؕ

* বৃদ্ধা অবস্থার কথা কেন বললেন? আবার কেন শিশু কালের লালন পালনের কথা ও স্বরণ করে দিলেন

*  এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ খেদমত করবো কার? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেনঃ তোমার মা। চতুর্থবার পিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে,আর্থিক জোগানে থাকে পিতা মাতার বিশেষ ভূমিকা (তিরমিযী,আদাবুল মুফরাদ-৩

* জাহিমা (রাঃ) রাসুল (সা:)-এর খিদমতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি। এখন আপনার নিকট পরামর্শ জিজ্ঞাসা করতে এসেছি। তিনি বললেনঃ তোমার মা আছেন কি? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাঁর খিদমতে লেগে থাক। কেননা, জান্নাত তাঁর দু’পায়ের নিচে।,সুনানে আন-নাসায়ী- ৩১০৪ হাসান

* পিতামাতার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নেই। যেভাবে আবূ হুরাইরার মা হিদায়াতের দৌলত লাভ করেন।সহিহ মুসলিম, ৬২৯০

*  মুস্তাজাবুদ দাওয়াত তিন ব্যক্তি 

*  মা বাবার নেক দোয়া ও বদ দোয়া উভয় কবুল হয়। মায়ের ডাকে গুরুত্ব না দেয়ায় হযরত জুরাইজের যে পরিনীতি ভোগ করতে হলো,সহিহ বুখারী-২৪৮৩

*  সমুদ্র তলদেশে মানুষের ইবাদত - -:-.হযরত সুলাইমান (আ) প্রায় সময় আকাশ ওভুমির মাঝে বাতাসের উপর উড়তেন

* মা বাবার খেদমত করে মুস্তাজাবুদ দাওয়াত হয়েছে, পিতা মাতা যদি আল্লাহর নাফরমানি করে এরপর ও তাদের খেদমত করতে হবে, দুইটি শুয়োরের ঘটনা ইরাকে এক ব্যক্তি বাস করতো,সে শুনতে পেল যে, সিরিয়ায় এক আশ্চর্য ব্যক্তি আছে।সে যে দোয়া করে সেটাই কবুল হয়ে (ওয়াজ ও খুতবা-১/৩১৩


46/ 34 পিতামাতার হক  


* আল্লাহর আনুগত্য করার পর পিতা মাতার প্রতি অনুগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ১৭: বনী ইসরাঈল-২৩

وَ قَضٰى رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا١ؕ اِمَّا یَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَ قُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِیْمًا

وَ اخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَ قُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّیٰنِیْ صَغِیْرًاؕ

* ওয়ালিদাইন শব্দের অর্থ পিতা মাতা, মাতা পিতা ও হতে পারে,খেদমত আগে কার হবে?এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ সা: সদ্ব্যবহার পেতে কে অগ্রগণ্য? খেদমত করবো কার? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেনঃ তোমার মা। চতুর্থবার পিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে,আর্থিক জোগানে থাকে পিতা মাতার বিশেষ ভূমিকা (তিরমিযী,আদাবুল মুফরাদ-৩

* বৃদ্ধা অবস্থার কথা কেন বললেন? আবার কেন শিশু কালের লালন পালনের কথা ও স্বরণ করে দিলেন

* জাহিমা (রাঃ) রাসুল (সা:)-এর খিদমতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি। এখন আপনার নিকট পরামর্শ জিজ্ঞাসা করতে এসেছি। তিনি বললেনঃ তোমার মা আছেন কি? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাঁর খিদমতে লেগে থাক। কেননা, জান্নাত তাঁর দু’পায়ের নিচে।,সুনানে আন-নাসায়ী- ৩১০৪ হাসান


عَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيمٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أُمَّكَ ، قُلْتُ: مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أُمَّكَ ، قُلْتُ: مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أُمَّكَ ، قُلْتُ: مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أَبَاكَ، ثُمَّ الْأَقْرَبَ فَالْأَقْرَبَ


* বৃদ্ধা অবস্থার কথা কেন বললেন? আবার কেন শিশু কালের লালন পালনের কথা ও স্বরণ করে দিলেন


* আল্লাহর হাবীব মা এর কথা তিনবার কেন বললেন,৩১: লুকমান-১৪


وَ وَصَّیْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَیْهِ١ۚ حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ وَهْنًا عَلٰى وَهْنٍ وَّ فِصٰلُهٗ فِیْ عَامَیْنِ اَنِ اشْكُرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیْكَ١ؕ اِلَیَّ الْمَصِیْرُ


* সম্পদ কোথায় ব্যয় করবে আগে পিতা মাতার কথা বলা হয়েছে, পিতা মাতার জন্য খরচ করে হিসাব নিকাশ করিও না,বাক্বারাহ-২১৫


یَسْئَلُوْنَكَ مَا ذَا یُنْفِقُوْنَ١ؕ۬ قُلْ مَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ خَیْرٍ فَلِلْوَالِدَیْنِ وَ الْاَقْرَبِیْنَ وَ الْیَتٰمٰى وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ١ؕ وَ مَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَیْرٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِیْمٌ


* সন্তানের প্রতি যদি থাকে পিতা মাতা খুশি আল্লাহ ও খুশি (তিরমিযী,আদাবুল মুফরাদ-২


عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: رِضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدِ، وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ


* জাহিমা (রাঃ) রাসুল (সা:)-এর খিদমতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি। এখন আপনার নিকট পরামর্শ জিজ্ঞাসা করতে এসেছি। তিনি বললেনঃ তোমার মা আছেন কি? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাঁর খিদমতে লেগে থাক। কেননা, জান্নাত তাঁর দু’পায়ের নিচে।,সুনানে আন-নাসায়ী- ৩১০৪ হাসান


فَإِنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ رِجْلَيْهَا


* পিতা মাতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূল সা: এর কাছে আগমন করেন এবং তার পিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, আমার পিতা আমার সম্পদ নিয়ে যেতে চান। তিনি বললেন, তোমার পিতাকে নিয়ে আস,এমন সময়ই জিবরাইল আগমন করলেন এবং রাসূল সা: কে বললেন, তার পিতা আসলে আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, ঐ বাক্যগুলো কি, যেগুলো সে মনে মনে বলেছে এবং স্বয়ং তার কানও শুনতে পায় নি।


* পিতা মাতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই,হযরত আবু হুরায়রা রা রাসূল সা এর কাছে মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, সেটা ছিল হেদায়াতের দোয়া,সহিহ মুসলিম-৬২৯০ সহিহ


* পিতা মাতা যদি আল্লাহর নাফরমানি করে এরপর ও তাদের খেদমত করতে হবে, দুইটি শুয়োরের ঘটনা ইরাকে এক ব্যক্তি বাস করতো,সে শুনতে পেল যে, সিরিয়ায় এক আশ্চর্য ব্যক্তি আছে।সে যে দোয়া করে সেটাই কবুল হয়ে (ওয়াজ ও খুতবা-১/৩১৩


* তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়দারিমী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)আদাবুল মুফরাদ-৩২ হাসান


لَا شَكَّ فِيهِنَّ: دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ


* দলিলুন আরেফিন’ কিতাবে উল্লেখ আছে ‘মাতা-পিতার’ খেদমত ইবাদত সমতুল্য। হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) এর মুরিদ স্বপ্নে দেখলো যে, হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) এর দাঁড়ি মুবারক গুলো হীরের টুকরা হয়ে গেছে। মুরিদ সকালে হুজুরের নিকট বললো, আমি রাত্রে এই স্বপ্নটা দেখেছি। হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) বরলেন, তুমি ঠিকই দেখেছো। কারণ আমি গতকাল আমার দাঁড়ি মুবারক দিয়ে আমার মায়ের পা দুখানা মুছে দিয়েছি


* মায়ের দোয়ায় হযরত বায়জিদ বোস্তামী (র:) আল্লাহর ওলি হন


* মায়ের ডাকে গুরুত্ব না দেয়ায় হযরত জুরাইজের যে পরিনীতি ভোগ করতে হলো,সহিহ বুখারী-২৪৮৩ সহিহ


* হযরত সুলাইমান (আ) সমুদ্রের উপরদিয়ে অতিক্রম করছিলেন তিনি (তারসংগী) জ্বিনদের (সমুদ্রের তলদেশের অবস্থা)দেখার জন্য পানিতে ডুব দিতে আদেশ করলেন


* পিতা মাতা যদি অসন্তুষ্ট থাকে, ঈমান হারা হয়ে মৃত্যু বরণ করতে হবে, হযরত আলকামা রা: এর ঘটনা তার বাস্তব প্রমাণ,( ইমাম তাবরানী ও ইমাম আহমদ একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন


_______________


34 পিতা মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য-২✓


* বনী ইসরাইল জাতি আল্লাহর অবাধ্য হয়েছিল, আমারা যেন তাদের মতো না হই, আল্লাহ আমাদের সেই ঘটনা স্বরণ করাইয়া দিচ্ছেন২:বাক্বারাহ-৮৩


وَ اِذْ اَخَذْنَا مِیْثَاقَ بَنِیْۤ اِسْرَآءِیْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللّٰهَ١۫ وَ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ ذِی الْقُرْبٰى وَ الْیَتٰمٰى وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ قُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَّ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ١ؕ ثُمَّ تَوَلَّیْتُمْ اِلَّا قَلِیْلًا مِّنْكُمْ وَ اَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَ


* নিন্মোক্ত আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ‌ এমন কোন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না যে আত্মঅহংকারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং নিজের বড়াই করে। তার মানে হলো আল্লাহ তায়ালা পিতা মাতার অবাধ্য হওয়াকে অহংকারী ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছেন,৪: নিসা-৩৬


وَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْئًا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ بِذِی الْقُرْبٰى وَ الْیَتٰمٰى وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْجَارِ ذِی الْقُرْبٰى وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ١ۙ وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَاۙ


* বাপ মায়ের অবাধ্য কখন হওয়া যাবে আল্লাহ তায়ালা বলেন,৯: আত-তওবা-২৩


یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْۤا اٰبَآءَكُمْ وَ اِخْوَانَكُمْ اَوْلِیَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْاِیْمَانِ١ؕ وَ مَنْ یَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ


* আর হাদীসে রাসূল সা: বলেন, স্রষ্টার অবাধ্যতা করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য নেই।(ত্বাবারানী ১৪৭৯৫, আহমাদ ২০৬৫৩,হাদিস সম্ভার-১৮২৩ সহিহ


عَنْ عِمْرَانَ بن حُصَيْنٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ


* তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয় (দারিমী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)আদাবুল মুফরাদ-৩২ হাসান


لَا شَكَّ فِيهِنَّ: دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ


* পিতা মাতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই,হযরত আবু হুরায়রা রা রাসূল সা এর কাছে মায়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, সেটা অভিযোগ নয়, সেটা ছিল হেদায়াতের দোয়া,সহিহ মুসলিম-৬২৯০ সহিহ


* পিতা মাতা সন্তানের জন্য যখন দোয়া করে, সেটা নেক দোয়া হউক আর বদ দোয়া হউক,সেই দোয়া কখনো বিফলে যায়না


* হযরত সুলাইমান আ: সমুদ্রের উপরদিয়ে অতিক্রম করছিলেন তিনি (তারসংগী) জ্বিনদের (সমুদ্রের তলদেশের অবস্থা)দেখার জন্য পানিতে ডুব দিতে আদেশ করলেন


* মা বাবার খেদমত করে মুস্তাজাবুদ দাওয়াত হয়েছে, পিতা মাতা যদি আল্লাহর নাফরমানি করে এরপর ও তাদের খেদমত করতে হবে, দুইটি শুয়োরের ঘটনা ইরাকে এক ব্যক্তি বাস করতো,সে শুনতে পেল যে, সিরিয়ায় এক আশ্চর্য ব্যক্তি আছে।সে যে দোয়া করে সেটাই কবুল হয়ে (ওয়াজ ও খুতবা-১/৩১৩


* দলিলুন আরেফিন’ কিতাবে উল্লেখ আছে ‘মাতা-পিতার’ খেদমত ইবাদত সমতুল্য। হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) এর মুরিদ স্বপ্নে দেখলো যে, হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) এর দাঁড়ি মুবারক গুলো হীরের টুকরা হয়ে গেছে। মুরিদ সকালে হুজুরের নিকট বললো, আমি রাত্রে এই স্বপ্নটা দেখেছি। হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) বরলেন, তুমি ঠিকই দেখেছো। কারণ আমি গতকাল আমার দাঁড়ি মুবারক দিয়ে আমার মায়ের পা দুখানা মুছে দিয়েছি


* মায়ের দোয়ায় হযরত বায়জিদ বোস্তামী (র:) আল্লাহর ওলি হন


* মায়ের ডাকে গুরুত্ব না দেয়ায় হযরত জুরাইজের যে পরিনীতি ভোগ করতে হলো,সহিহ বুখারী-২৪৮৩ সহিহ


_______________


* দলিলুন আরেফিন’ কিতাবে উল্লেখ আছে ‘মাতা-পিতার’ খেদমত ইবাদত সমতুল্য। হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) এর মুরিদ স্বপ্নে দেখলো যে, হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) এর দাঁড়ি মুবারকগুলো হীরের টুকরা হয়ে গেছে। মুরিদ সকালে হুজুরের নিকট বললো, আমি রাত্রে এই স্বপ্নটা দেখেছি। হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) বরলেন, তুমি ঠিকই দেখেছো। কারণ আমি গতকাল আমার দাঁড়ি মুবারক দিয়ে আমার মায়ের পা দুখানা মুছে দিয়েছি।


পিতা-মাতার খেদমতে আল্লাহর পক্ষ হতে যে কত বড় নিয়ামত অর্জিত হয়, তা কল্পনাও করা যায় না। পিতা-মাতার খেদমতে যা অর্জন হয়, তা অনেক ইবাদত বন্দেগীতেও অর্জন হয় না। তাই ওলি আল্লাহদের জীবনীতে দেখা যায়, তাঁরা পিতা-মাতার খেদমত ব্যতিত ওলি হতে পারেননি


* পিতা মাতার উপর সন্তানের হক: —


সমুদ্র তলদেশে মানুষের ইবাদত - -:-.হযরত সুলাইমান (আ) প্রায় সময় আকাশ ওভুমির মাঝে বাতাসের উপর উড়তেন।একদা তিনি গভীর সমুদ্রের উপরদিয়ে অতিক্রম করছিলেন।তিনি সমুদ্রে বাতাসের কারণে বিশাল ঢেউ উঠতে দেখলেন।তিনি বাতাসকে নির্দেশ দিলেন,বাতাস থেমে গেল। অতপর তিনি (তারসংগী) জ্বিনদের (সমুদ্রের তলদেশের অবস্থা)দেখার জন্য পানিতে ডুব দিতে আদেশ করলেন।তারা একের পর এক ডু্ব দিতে লাগল।তারা সমুদ্রের তলদেশে একটি শুভ্র মুক্তার ক্ষুদে ঘর পেল, যার কোন দরজা নেই।তারা এ সম্পর্কে সুলাইমান(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে অবহিত করলো। হযরত সুলাইমান (আ)তা উত্তোলন করার আদেশ দিলেন। হযরতসুলাইমান (আ)এটা দেখে আশ্চার্যান্বিতহলেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার নিকট দুআ করলেন। ফলে তা ফেটে গেল এবং তারএকটি দরজা উন্মুক্ত হল। তিনি আশ্চর্যহয়ে দেখলেন, তাতে একজন সুদর্শন যুবকআল্লাহর উদ্দেশ্যে সেজদারত অবস্থায়আছে।হযরত সুলাইমান (আ)তাকে জিজ্ঞাসা করলেনতুমি মানুষ নাকি জ্বিন?যুবকটি বলল, না আমি মানুষ। হযরত সুলাইমান (আ) বললেন, কিসের বদৌলতে তুমি এ মর্যাদা লাভ করেছ?যুবকটি বললঃ পিতা মাতার সাথে সদাচারণ করে। আমার একটি বৃদ্ধ মাতা ছিলেন।তিনি চলতে ফিরতে পারতেন না।আমি উনাকে আমার পিঠে করে বহন করতাম। তিনি আমার জন্য দোয়া করতেন,"হে আল্লাহ তাকে সৌভাগ্য দান করো। তার উপর তুমি রাজি ও খুশি হয়ে যাও। আমার মৃত্যুর পরতার আবাস এমন স্থানে বানাও যা ভূপৃষ্ঠেও নয় এবং আকাশেও নয়। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করলেন আমি তখন সর্বহারা হয়ে গেলাম। সমুদ্রের উপকূলে ঘুড়ে বেড়াতাম।একদা আমি সেখানে একটি সুন্দর শুভ্র মুক্তার ঘর দেখতে পেলাম। যখন আমি তার কাছে গেলাম,তখন তা খুলে গেল।আমি তাতে প্রবেশ করলাম, আল্লাহর কুদরতে সেটি বন্ধ হয়ে গেল। তাই আমি জানি না আমি ভূপৃষ্ঠে না শূন্যে!আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার অভ্যন্তরেও আমাকে রিজিক দান করেন। হযরতসুলাইমান(আ) জিজ্ঞাসা করলেন, তার অভ্যন্তরে কিভাবে তোমার নিকট রিজি্ক আসে? সে বলল, যখন আমি ক্ষুধার্ত হই, তখন পাথর থেকে একটা গাছ বের হয়। সেই গাছে ফল ধরে এবং তা থেকে দুধের চেয়ে শুভ্র,মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং বরফের চেয়ে ঠান্ডা(সহনীয়) পানি বেরহয়ে আসে আর আমি তা খাই ও পান করি। যখন আমি পরিতৃপ্ত হই এবং পিপাসা মিটে যায়, তখনতা অদৃশ্য হয়ে যায়। হজরত সুলাইমান(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি এখানে দিন রাত্রির পার্থক্য কিভাবে বুঝ? সে বললঃ যখন সুবহে সাদিক হয় তখন ঘরটি শুভ্র আলোয় আলোকিত হয়ে যায়। আর যখন সুর্য অস্তমিত হয়, তখন তা আঁধার হয়ে যায়।অতপর হযরত সুলাইমান (আ) আল্লাহর কাছে দু'আ করলেন। ফলে ঘরটি জোড়া লেগে গেল।অতপর সমুদ্রের গভীরে আপন স্থানে ফিরে গেল।( হেকায়াতুল আম্বিয়া ).সুবহানাল্লাহ*আল্লাহ্ আমাদের পিতামাতার সঠিকভাবে খেদমত করার তৌফিক দিন.আমিন।


* পিতা মাতা সম্পর্কে তিনটি বিশেষ ঘটনা


যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমন করেন এবং তার পিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, আমার পিতা আমার সম্পদ নিয়ে যেতে চান। তিনি বললেন, তোমার পিতাকে নিয়ে আস। এমন সময়ই জিবরাইল আগমন করলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, তার পিতা আসলে আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, ঐ বাক্যগুলো কি, যেগুলো সে মনে মনে বলেছে এবং স্বয়ং তার কানও শুনতে পায় নি। যখন লোকটি তার পিতাকে নিয়ে হাজির হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ব্যাপার কি, আপনার পুত্র আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল কেন? আপনি কি তার আসবাবপত্র ছিনিয়ে নিতে চান? পিতা বলল, আপনি তাকে এ প্রশ্ন করুন, আমি তার ফুফু, খালা ও নিজের জীবন রক্ষার প্রয়োজন ব্যতিত তা কোথায় ব্যয় করি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ব্যাস! অভিযোগ ব্যাখ্যার জন্যে এতটুকুই যথেষ্ট। এরপর তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ বাক্যগুলো কি, যেগুলো এখন পর্যন্ত স্বয়ং আপনার কানও শোনেনি? ইয়া রাসূলুল্লাহ! প্রত্যেক ব্যাপারেই আল্লাহ তাআলা আপনার প্রতি আমাদের ঈমানকে বৃদ্ধি করে দিন। (যে কথা কেউ শুনেনি তা আপনার জানা হয়ে গেছে। এটা একটা মুজিজা। অতঃপর সে বলল, এটা ঠিক যে, আমি মনে মনে কয়েক লাইন কবিতা বলেছিলাম, যেগুলো আমার কানও শুনে নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কবিতাগুলো আমাকে শুনান। তখন সে নিম্নোক্ত পংক্তিগুলো আবৃত্তি করল, আমি শৈশবে তোমাকে খাবারের ব্যবস্থা করেছি এবং যৌবনেও তোমার দায়িত্ব বহন করেছি। তোমার যাবতীয় খাওয়া-পরা আমারই উপার্জন থেকে ছিল। কোন রাতে যখন তুমি অসুস্থ হয়ে পড়েছ, তখন আমি সারা রাত জেগে কাটিয়েছি। যেন তোমার রোগ আমাকেই স্পর্শ করেছে, তোমাকে নয়। ফলে সারা রাত আমি ক্রন্দন করেছি। আমার অন্তর তোমার মৃত্যুর ভয়ে ভীত হত; অথচ আমি জানতাম যে, মৃত্যুর জন্য দিন নির্দিষ্ট রয়েছে- আগে পিছে হতে পারবে না। অতঃপর যখন তুমি বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছ এবং আমার আকাঙ্খিত বয়সের সীমা পর্যন্ত পৌঁছে গেছ, তখন তুমি কঠোরতা ও রুঢ় ভাষাকে আমার প্রতিদান করে দিয়েছ, যদি তুমি আমার প্রতি অনুগ্রহ ও কৃপা না করতে, আফসোস! যদি তোমার দ্বারা আমার পিতৃত্বের হক আদায় না হয়, তবে কমপক্ষে ততটুকুই করতে যতটুকু একজন ভদ্র প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর সাথে করে থাকে। তুমি কমপক্ষে আমাকে প্রতিবেশীর হক তো দিতে এবং আমার সম্পদে আমার সাথে কৃপণতা না করতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবিতাগুলো শুনার পর ছেলের জামার কলার চেপে ধরলেন এবং বললেন, যাও, তুমি ও তোমার সম্পদ সবই তোমার পিতার। (তাফসীরে কুরতুবী, ৬:২৪)


আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন:


একদা তিন ব্যক্তি পথিমধ্যে বৃষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ায় একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করল। একটি পাথর গড়িয়ে এসে গুহার মুখকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিলে তিন ব্যক্তিই গর্তের মধ্যে আটকা পড়ে গেল। তারা পরস্পর পরস্পরকে বলল, চল, আমরা আমাদের এমন কোন পূণ্য কাজের কথা স্মরণ করি যা আমরা একান্তভাবে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য করেছি এবং তার উসীলায় আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন তিনি গর্ত থেকে পাথরটি সরিয়ে দেন। তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার বৃদ্ধ ও দুর্বল পিতামাতা রয়েছে এবং ছোট ছেলেমেয়েও আছে। যাদের জন্য আমি ভেড়া পালন করি। যখন আমি রাতের বেলা ঘরে ফিরি প্রথমে পিতামাতাকেই আমি দুগ্ধ পান করতে দেই এবং অতঃপর ছেলেমেয়েকে দেই। একদিন আমি রাতের বেলা দেরীতে ঘরে ফিরে পিতামাতা উভয়কেই নিদ্রিত অবস্থায় পেলাম। আমি অন্যদিনের মত দুধ নিয়ে তাদের কাছে গেলাম এবং তাদের নিকটে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি তাদেরকে ঘুম থেকে জাগানো পছন্দ করলাম না এবং এও চাইলাম না যে, প্রথমে আমার ছেলেমেয়েকে দুধ পান করতে দেব। যদিও আমার ছেলেমেয়েরা ক্ষুধার তাড়নায় কান্নাকাটি করছিল। আমি ভোর হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। হে আল্লাহ! যদি আমি এই কাজটি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি তবে আমাদের উপর থেকে পাথরটিকে সরিয়ে দিন। এতে আল্লাহ তাআলা গর্তের উপর থেকে পাথরটিকে কিছুটা সরিয়ে দিলেন।


দ্বিতীয় লোকটি বলল, সে তার এক চাচাত বোনকে ভালবাসত এবং সে তার সাথে পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। যখন সে (চাচাত বোন) তাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিল সে পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকল। অতঃপর সে দোয়া করে বলল, হে আল্লাহ! যদি আমি এই কাজটি কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যে করে থাকি তবে গর্তের উপর থেকে পাথরটিকে সরিয়ে দিন। আল্লাহ তাআলা তার দুআ কবুল করেন এবং পাথরটি গর্তের মুখ থেকে আরও কিছুটা সরে গেল।


তৃতীয় ব্যক্তি বলল, সে এক লোকের সাথে একটি অংশীদারী কারবার করত। লোকটি অন্যত্র চলে গেলে সে একাই তা দেখাশুনা করতে থাকে এবং তার অংশীদারের অংশের হিসাব রাখত। যখন অংশীদার ফিরে এল সে তার অংশ লাভসহ বুঝিয়ে দিল। অতঃপর সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলল, হে আল্লাহ! যদি আমি এই কাজ কেবলমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, আপনি এর উসীলায় গর্তের মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে দিন। আল্লাহ তাআলা তার প্রার্থনা কবুল করলেন এবং গর্তের মুখ সস্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত হয়ে গেল। আর তারা তা থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হলো। (বুখারি, মুসলিম)


আব্দুল্লাহ ইবনে ওবাই (রা.) বর্ণনা করেন সাহাবী আলকামা নামাজ রোজার ক্ষেত্রে খুবই নিয়মানুবর্তী ছিলেন। যখন তার মৃত্যু নিকটবর্তী হল, লোকেরা তাকে কালেমার তালকীন করলেন। কিন্তু, তিনি তা পড়তে সমর্থ হলেন না। এই অবস্থা তার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানোর জন্যে লোক পাঠালেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তার পিতামাতা বেঁচে আছেন কিনা। তাঁকে জানানো হল, আলকামার মা বেঁচে আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি অতি দ্রম্নত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে হাজির হলেন। তিনি আলকামা সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, সে একজন দীনদার লোক। তবে তার উপর স্ত্রীকে বেশি প্রাধান্য দেয় এবং তাকে অমান্য করে। তাই তিনি তার উপর অসন্তুষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্ষমা করে দিতে বললেন। কিন্তু তিনি তাতে সম্মত হলেন না। তিনি তখন বেলাল (রা.)-কে কাঠ সংগ্রহ করে আগুন জ্বালিয়ে জ্বলন্ত আগুনে আলকামাকে নিক্ষেপ করতে বললেন। মা একথা শুনে খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি বাস্তবিকই আলকামাকে আগুনে পোড়াতে ইচ্ছুক কিনা? তিনি তখন বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলার শাস্তি এই শাস্তি থেকেও অনেক কঠিন। আল্লাহর কসম! আপনি যতক্ষণ আপনার ছেলের উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন, তার না কোন নামাজ আল্লাহর কাছে কবুল হবে আর না কোন দান। আলকামার মা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে এবং উপস্থিত সকলকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আলকামাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আলকামার অবস্থা দেখার জন্যে কাউকে তার কাছে পাঠালেন। তখন সে এই সুসংবাদ নিয়ে ফিরে এল যে, আলকামা কালেমা পাঠ করে মৃত্যুবরণ করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং তার জানাজায় গেলেন এবং বললেন, মুহাজির ও আনসারদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি তার মায়ের অবাধ্য হবে কিংবা তাকে অসন্তুষ্ট করবে, তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেস্তা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত বর্ষিত হবে। আল্লাহ তাআলা তার কোন কাজ কিংবা নফল ইবাদত কবুল করবেন না, যতক্ষণ না সে অনুশোচিত হবে, মায়ের যথাযথ পরিচর্যা ও সেবা করবে এবং তাকে সন্তুষ্ট করবে।’ (তাবরানি)


এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজির ও আনসারদের সম্বোধন করেছেন। কেননা, তখন তার আশেপাশে কেবল তারাই ছিলেন। অধিকন্তু, তিনি কেবল মায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। কেননা, ঘটনাটি মায়ের সন্তুষ্টির সাথে সম্পর্কিত ছিল। যা হোক, এটি পরিষ্কার যে, এই নির্দেশনাটি সকল মুমিনের জন্যে এবং পিতামাতা উভয়ের সন্তুষ্টির কথা বলে, বিশেষতঃ মায়ের। আমাদের জেনে রাখা উচিৎ যে, আলকামা ছিলেন খুব ধার্মিপরায়ন লোক এবং তার নামাজ রোজার ব্যাপারে খুবই নিয়মানুবর্তী। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন সাহাবীও ছিলেন। এসব কিছুই মৃত্যুর সময় তাকে সাহায্য করতে পারে নি। তিনি মৃত্যুর সময় কালিমা শাহাদাত পাঠের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন কেবল তার মাকে অসন্তুষ্ট করার কারণে। আমাদের সেই হাদিসও স্মরণ রাখতে হবে যাতে এসেছে, যে ব্যক্তি এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে, তার শেষ কথা হবে কালেমা, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেউ বলতে পারে না কখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসবে। অতএব, আমাদেরকে শীঘ্রই আমাদের মাতা পিতার, বিশেষ করে মায়ের সন্তুষ্টি কামনা করতে হবে। অন্যথায় আমরাও মৃত্যুর সময় কালেমা পাঠের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হব।আল্লাহ আমাদের সকলকে পিতা মাতার খেদমত করার তাওফিক দান করুন।


* মায়ের ডাকে গুরুত্ব না দেয়ায় হযরত জুরাইজের যে পরিনীতি ভোগ করতে হলো,সহিহ বুখারী-২৪৮৩


 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ كَانَ رَجُلٌ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ، يُقَالُ لَهُ جُرَيْجٌ، يُصَلِّي، فَجَاءَتْهُ أُمُّهُ فَدَعَتْهُ، فَأَبَى أَنْ يُجِيبَهَا، فَقَالَ أُجِيبُهَا أَوْ أُصَلِّي ثُمَّ أَتَتْهُ، فَقَالَتِ اللَّهُمَّ لاَ تُمِتْهُ حَتَّى تُرِيَهُ الْمُومِسَاتِ‏.‏ وَكَانَ جُرَيْجٌ فِي صَوْمَعَتِهِ، فَقَالَتِ امْرَأَةٌ لأَفْتِنَنَّ جُرَيْجًا‏.‏ فَتَعَرَّضَتْ لَهُ فَكَلَّمَتْهُ فَأَبَى، فَأَتَتْ رَاعِيًا، فَأَمْكَنَتْهُ مِنْ نَفْسِهَا فَوَلَدَتْ غُلاَمًا، فَقَالَتْ هُوَ مِنْ جُرَيْجٍ‏.‏ فَأَتَوْهُ، وَكَسَرُوا صَوْمَعَتَهُ فَأَنْزَلُوهُ وَسَبُّوهُ، فَتَوَضَّأَ وَصَلَّى ثُمَّ أَتَى الْغُلاَمَ، فَقَالَ مَنْ أَبُوكَ يَا غُلاَمُ قَالَ الرَّاعِي‏.‏ قَالُوا نَبْنِي صَوْمَعَتَكَ مِنْ ذَهَبٍ‏.‏ قَالَ لاَ إِلاَّ مِنْ طِينٍ ‏"‏‏.‏


আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইজ নামক একজন লোক ছিলেন। একদিন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাঁর মা তাকে ডাকলেন। কিন্তু তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন না। তিনি বললেন, সালাত আদায় করব, না কি তার জবাব দেব। তারপর মা তাঁর কাছে এলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! তাকে মৃত্যু দিও না যে পর্যন্ত তুমি তাকে কোন বেশ্যার মুখ না দেখাও। একদিন জুরাইজ তার ইবাদতখানায় ছিলেন। এমন সময় এক মহিলা বললেন, আমি জুরাইজকে ফাঁসিয়ে ছাড়ব। তখন সে তার নিকট গেল এবং তার সাথে কথাবার্তা বলল। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। তারপর সে মহিলা এক রাখালের কাছে এসে স্বেচ্ছায় নিজেকে তার হাতে সঁপে দিল। তার কিছুদিন পর সে একটি ছেলে প্রসব করল। তখন সে বলে বেড়াতে লাগল যে, এ ছেলে জুরাইজের! এ কথা শুনে লোকেরা জুরাইজের নিকট এল এবং তার ইবাদতখানা ভেঙ্গে তাকে বের করে দিল এবং তাকে গালিগালাজ করল। এরপর তিনি (জুরাইজ) অযু করলেন এবং সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি ছেলেটির কাছে এসে বললেন, হে ছেলে! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল, রাখাল। তখন লোকেরা বলল, আমরা তোমার ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরী করে দিব। জুরাইজ বললেন, না মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও (যেমনটা পূর্বে ছিল)।


  


সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪৮৩


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


* আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যেন তিনি আবূ হুরাইরার মাকে হিদায়াত দান করেন।সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬২৯০


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


حَدَّثَنَا عَمْرٌو النَّاقِدُ، حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ يُونُسَ الْيَمَامِيُّ، حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ بْنُ عَمَّارٍ، عَنْ أَبِي كَثِيرٍ، يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ حَدَّثَنِي أَبُو هُرَيْرَةَ، قَالَ كُنْتُ أَدْعُو أُمِّي إِلَى الإِسْلاَمِ وَهِيَ مُشْرِكَةٌ فَدَعَوْتُهَا يَوْمًا فَأَسْمَعَتْنِي فِي رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا أَكْرَهُ فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أَبْكِي قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي كُنْتُ أَدْعُو أُمِّي إِلَى الإِسْلاَمِ فَتَأْبَى عَلَىَّ فَدَعَوْتُهَا الْيَوْمَ فَأَسْمَعَتْنِي فِيكَ مَا أَكْرَهُ فَادْعُ اللَّهَ أَنْ يَهْدِيَ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ اللَّهُمَّ اهْدِ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ ‏"‏ ‏.‏ فَخَرَجْتُ مُسْتَبْشِرًا بِدَعْوَةِ نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا جِئْتُ فَصِرْتُ إِلَى الْبَابِ فَإِذَا هُوَ مُجَافٌ فَسَمِعَتْ أُمِّي خَشْفَ قَدَمَىَّ فَقَالَتْ مَكَانَكَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ‏.‏ وَسَمِعْتُ خَضْخَضَةَ الْمَاءِ قَالَ - فَاغْتَسَلَتْ وَلَبِسَتْ دِرْعَهَا وَعَجِلَتْ عَنْ خِمَارِهَا فَفَتَحَتِ الْبَابَ ثُمَّ قَالَتْ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ - قَالَ - فَرَجَعْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَتَيْتُهُ وَأَنَا أَبْكِي مِنَ الْفَرَحِ - قَالَ - قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَبْشِرْ قَدِ اسْتَجَابَ اللَّهُ دَعْوَتَكَ وَهَدَى أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ ‏.‏ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَقَالَ خَيْرًا - قَالَ - قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُحَبِّبَنِي أَنَا وَأُمِّي إِلَى عِبَادِهِ الْمُؤْمِنِينَ وَيُحَبِّبَهُمْ إِلَيْنَا - قَالَ - فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ اللَّهُمَّ حَبِّبْ عُبَيْدَكَ هَذَا - يَعْنِي أَبَا هُرَيْرَةَ وَأُمَّهُ - إِلَى عِبَادِكَ الْمُؤْمِنِينَ وَحَبِّبْ إِلَيْهِمُ الْمُؤْمِنِينَ ‏"‏ ‏.‏ فَمَا خُلِقَ مُؤْمِنٌ يَسْمَعُ بِي وَلاَ يَرَانِي إِلاَّ أَحَبَّنِي ‏.‏


আবূ কাসীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) রিওয়ায়াত করেছেন যে, আমি আমার মাকে ইসলামের দিকে আহ্বান করতাম, তখন তিনি মুশরিকা ছিলেন। একদা আমি তাকে ইসলাম গ্রহণের জন্য আহ্বান জানালে তখন তিনি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপারে আমাকে এমন কথা শুনালেন, যা আমার নিকট অনেক অপছন্দনীয় মহে হচ্ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার মাকে ইসলামের দা‘ওয়াত দিয়েছিলাম আর তিনি আমার দা‘ওয়াত অস্বীকার করে আসছেন। তাপর আমি তাকে আজ দা‘ওয়াত দেয়াতে তিনি আমাকে আপনার ব্যাপারে এমন কথা শুনালেন, যা আমি সর্বদাই অপছন্দ করি। অতএব আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যেন তিনি আবূ হুরাইরার মাকে হিদায়াত দান করেন। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ“হে আল্লাহ! আবূ হুরাইরার মাকে হিদায়াত দান করো।” তারপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দু’আর কারণে আমি খুশী মনে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি ঘরে পৌঁছলাম তখন তার দরজা বন্ধ দেখতে পেলাম। আমার মা আমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তারপর তিনি বললেন, আবূ হুরায়রা্! একটু দাঁড়াও (থামো)। তখন আমি পানির কলকল শব্দ শুনছিলাম। তিনি বলেন, এরপর তিনি (আমার মা) গোসল করলেন এবং শরীরে চাদর দিলেন। আর তাড়াতাড়ি করে ওড়না জড়িয়ে নিলেন, তারপর বাড়ীর দরজা খুলে দিলেন। অতঃপর বললেন, “হে আবূ হুরায়রা্! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রসূল।” তিনি বলেন, তখন আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে উপস্থিত হলাম। তারপর তাঁর নিকট গেলাম এবং আমি তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাঁদছিলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সুখবর শুনুন। আল্লাহ আপনার দু’আ কবূল করেছেন এবং আবূ হুরাইরার মাকে হিদায়াতপ্রাপ্ত করেছেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন ও তাঁর প্রশংসা করলেন। আর বললেন, ‘উত্তম’।


তিনি বলেন, তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে এবং আমার মাকে মু’মিন বান্দাদের নিকট প্রিয়পাত্র করেন এবং তাঁদের ভালবাসা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ“হে আল্লাহ! তোমার এ বান্দা আবূ হুরাইরাকে এবং তাঁর মাকে মু’মিন বান্দাদের নিকট প্রিয়পাত্র করে দাও এবং তাঁদের নিকটও মু’মিন বান্দাদের প্রিয়পাত্র করে দাও।” তারপর এমন কোন মু’মিন বান্দা পয়দা হয়নি, যে আমার কথা শুনেছে কিংবা আমাকে দেখেছে অথচ আমাকে ভালবাসেনি। (ই.ফা. ৬১৭১, ই.সে. ৬২১৫)


  


সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬২৯০


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

___________________________


* আল্লাহর আনুগত্য করার পর পিতা মাতার প্রতি অনুগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ১৭: বনী ইসরাঈল-২৩


وَ قَضٰى رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا١ؕ اِمَّا یَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَ قُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِیْمًا


وَ اخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَ قُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّیٰنِیْ صَغِیْرًاؕ


* ওয়ালিদাইন শব্দের অর্থ পিতা মাতা, মাতা পিতা ও হতে পারে,খেদমত আগে কার হবে?এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ সা: সদ্ব্যবহার পেতে কে অগ্রগণ্য? খেদমত করবো কার? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেনঃ তোমার মা। চতুর্থবার পিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে,আর্থিক জোগানে থাকে পিতা মাতার বিশেষ ভূমিকা (তিরমিযী,আদাবুল মুফরাদ-৩


عَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيمٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أُمَّكَ ، قُلْتُ: مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أُمَّكَ ، قُلْتُ: مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أُمَّكَ ، قُلْتُ: مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أَبَاكَ، ثُمَّ الْأَقْرَبَ فَالْأَقْرَبَ


* বৃদ্ধা অবস্থার কথা কেন বললেন? আবার কেন শিশু কালের লালন পালনের কথা ও স্বরণ করে দিলেন


* আল্লাহর হাবীব মা এর কথা তিনবার কেন বললেন,৩১: লুকমান-১৪


وَ وَصَّیْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَیْهِ١ۚ حَمَلَتْهُ اُمُّهٗ وَهْنًا عَلٰى وَهْنٍ وَّ فِصٰلُهٗ فِیْ عَامَیْنِ اَنِ اشْكُرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیْكَ١ؕ اِلَیَّ الْمَصِیْرُ


* সম্পদ কোথায় ব্যয় করবে আগে পিতা মাতার কথা বলা হয়েছে, পিতা মাতার জন্য খরচ করে হিসাব নিকাশ করিও না,বাক্বারাহ-২১৫


یَسْئَلُوْنَكَ مَا ذَا یُنْفِقُوْنَ١ؕ۬ قُلْ مَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ خَیْرٍ فَلِلْوَالِدَیْنِ وَ الْاَقْرَبِیْنَ وَ الْیَتٰمٰى وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ١ؕ وَ مَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَیْرٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِیْمٌ


* সন্তানের প্রতি যদি থাকে পিতা মাতা খুশি আল্লাহ ও খুশি (তিরমিযী,আদাবুল মুফরাদ-২


عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: رِضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدِ، وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ


* জাহিমা (রাঃ) রাসুল (সা:)-এর খিদমতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি। এখন আপনার নিকট পরামর্শ জিজ্ঞাসা করতে এসেছি। তিনি বললেনঃ তোমার মা আছেন কি? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাঁর খিদমতে লেগে থাক। কেননা, জান্নাত তাঁর দু’পায়ের নিচে।,সুনানে আন-নাসায়ী- ৩১০৪ হাসান


فَإِنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ رِجْلَيْهَا


* পিতা মাতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূল সা: এর কাছে আগমন করেন এবং তার পিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, আমার পিতা আমার সম্পদ নিয়ে যেতে চান। তিনি বললেন, তোমার পিতাকে নিয়ে আস,এমন সময়ই জিবরাইল আগমন করলেন এবং রাসূল সা: কে বললেন, তার পিতা আসলে আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, ঐ বাক্যগুলো কি, যেগুলো সে মনে মনে বলেছে এবং স্বয়ং তার কানও শুনতে পায় নি।


* পিতা মাতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই,হযরত আবু হুরায়রা রা রাসূল সা এর কাছে মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, সেটা ছিল হেদায়াতের দোয়া,সহিহ মুসলিম-৬২৯০ সহিহ


* পিতা মাতা যদি আল্লাহর নাফরমানি করে এরপর ও তাদের খেদমত করতে হবে, দুইটি শুয়োরের ঘটনা ইরাকে এক ব্যক্তি বাস করতো,সে শুনতে পেল যে, সিরিয়ায় এক আশ্চর্য ব্যক্তি আছে।সে যে দোয়া করে সেটাই কবুল হয়ে (ওয়াজ ও খুতবা-১/৩১৩


* তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়দারিমী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)আদাবুল মুফরাদ-৩২ হাসান


لَا شَكَّ فِيهِنَّ: دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ


* দলিলুন আরেফিন’ কিতাবে উল্লেখ আছে ‘মাতা-পিতার’ খেদমত ইবাদত সমতুল্য। হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) এর মুরিদ স্বপ্নে দেখলো যে, হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) এর দাঁড়ি মুবারক গুলো হীরের টুকরা হয়ে গেছে। মুরিদ সকালে হুজুরের নিকট বললো, আমি রাত্রে এই স্বপ্নটা দেখেছি। হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) বরলেন, তুমি ঠিকই দেখেছো। কারণ আমি গতকাল আমার দাঁড়ি মুবারক দিয়ে আমার মায়ের পা দুখানা মুছে দিয়েছি


* মায়ের দোয়ায় হযরত বায়জিদ বোস্তামী (র:) আল্লাহর ওলি হন


* মায়ের ডাকে গুরুত্ব না দেয়ায় হযরত জুরাইজের যে পরিনীতি ভোগ করতে হলো,সহিহ বুখারী-২৪৮৩ সহিহ


* হযরত সুলাইমান (আ) সমুদ্রের উপরদিয়ে অতিক্রম করছিলেন তিনি (তারসংগী) জ্বিনদের (সমুদ্রের তলদেশের অবস্থা)দেখার জন্য পানিতে ডুব দিতে আদেশ করলেন


* পিতা মাতা যদি অসন্তুষ্ট থাকে, ঈমান হারা হয়ে মৃত্যু বরণ করতে হবে, হযরত আলকামা রা: এর ঘটনা তার বাস্তব প্রমাণ,( ইমাম তাবরানী ও ইমাম আহমদ একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন




_______________


34 পিতা মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য-২✓


* বনী ইসরাইল জাতি আল্লাহর অবাধ্য হয়েছিল, আমারা যেন তাদের মতো না হই, আল্লাহ আমাদের সেই ঘটনা স্বরণ করাইয়া দিচ্ছেন২:বাক্বারাহ-৮৩


وَ اِذْ اَخَذْنَا مِیْثَاقَ بَنِیْۤ اِسْرَآءِیْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللّٰهَ١۫ وَ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ ذِی الْقُرْبٰى وَ الْیَتٰمٰى وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ قُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَّ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ١ؕ ثُمَّ تَوَلَّیْتُمْ اِلَّا قَلِیْلًا مِّنْكُمْ وَ اَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَ


* নিন্মোক্ত আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ‌ এমন কোন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না যে আত্মঅহংকারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং নিজের বড়াই করে। তার মানে হলো আল্লাহ তায়ালা পিতা মাতার অবাধ্য হওয়াকে অহংকারী ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছেন,৪: নিসা-৩৬


وَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْئًا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ بِذِی الْقُرْبٰى وَ الْیَتٰمٰى وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْجَارِ ذِی الْقُرْبٰى وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ١ۙ وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَاۙ


* বাপ মায়ের অবাধ্য কখন হওয়া যাবে আল্লাহ তায়ালা বলেন,৯: আত-তওবা-২৩


یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْۤا اٰبَآءَكُمْ وَ اِخْوَانَكُمْ اَوْلِیَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْاِیْمَانِ١ؕ وَ مَنْ یَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ


* আর হাদীসে রাসূল সা: বলেন, স্রষ্টার অবাধ্যতা করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য নেই।(ত্বাবারানী ১৪৭৯৫, আহমাদ ২০৬৫৩,হাদিস সম্ভার-১৮২৩ সহিহ


عَنْ عِمْرَانَ بن حُصَيْنٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ


* তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয় (দারিমী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)আদাবুল মুফরাদ-৩২ হাসান


لَا شَكَّ فِيهِنَّ: دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ


* পিতা মাতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই,হযরত আবু হুরায়রা রা রাসূল সা এর কাছে মায়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, সেটা অভিযোগ নয়, সেটা ছিল হেদায়াতের দোয়া,সহিহ মুসলিম-৬২৯০ সহিহ


* পিতা মাতা সন্তানের জন্য যখন দোয়া করে, সেটা নেক দোয়া হউক আর বদ দোয়া হউক,সেই দোয়া কখনো বিফলে যায়না


* হযরত সুলাইমান আ: সমুদ্রের উপরদিয়ে অতিক্রম করছিলেন তিনি (তারসংগী) জ্বিনদের (সমুদ্রের তলদেশের অবস্থা)দেখার জন্য পানিতে ডুব দিতে আদেশ করলেন


* মা বাবার খেদমত করে মুস্তাজাবুদ দাওয়াত হয়েছে, পিতা মাতা যদি আল্লাহর নাফরমানি করে এরপর ও তাদের খেদমত করতে হবে, দুইটি শুয়োরের ঘটনা ইরাকে এক ব্যক্তি বাস করতো,সে শুনতে পেল যে, সিরিয়ায় এক আশ্চর্য ব্যক্তি আছে।সে যে দোয়া করে সেটাই কবুল হয়ে (ওয়াজ ও খুতবা-১/৩১৩


* দলিলুন আরেফিন’ কিতাবে উল্লেখ আছে ‘মাতা-পিতার’ খেদমত ইবাদত সমতুল্য। হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) এর মুরিদ স্বপ্নে দেখলো যে, হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) এর দাঁড়ি মুবারক গুলো হীরের টুকরা হয়ে গেছে। মুরিদ সকালে হুজুরের নিকট বললো, আমি রাত্রে এই স্বপ্নটা দেখেছি। হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) বরলেন, তুমি ঠিকই দেখেছো। কারণ আমি গতকাল আমার দাঁড়ি মুবারক দিয়ে আমার মায়ের পা দুখানা মুছে দিয়েছি


* মায়ের দোয়ায় হযরত বায়জিদ বোস্তামী (র:) আল্লাহর ওলি হন


* মায়ের ডাকে গুরুত্ব না দেয়ায় হযরত জুরাইজের যে পরিনীতি ভোগ করতে হলো,সহিহ বুখারী-২৪৮৩ সহিহ




_______________




* দলিলুন আরেফিন’ কিতাবে উল্লেখ আছে ‘মাতা-পিতার’ খেদমত ইবাদত সমতুল্য। হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) এর মুরিদ স্বপ্নে দেখলো যে, হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) এর দাঁড়ি মুবারকগুলো হীরের টুকরা হয়ে গেছে। মুরিদ সকালে হুজুরের নিকট বললো, আমি রাত্রে এই স্বপ্নটা দেখেছি। হযরত আবু ইসহাক (রহঃ) বরলেন, তুমি ঠিকই দেখেছো। কারণ আমি গতকাল আমার দাঁড়ি মুবারক দিয়ে আমার মায়ের পা দুখানা মুছে দিয়েছি।


পিতা-মাতার খেদমতে আল্লাহর পক্ষ হতে যে কত বড় নিয়ামত অর্জিত হয়, তা কল্পনাও করা যায় না। পিতা-মাতার খেদমতে যা অর্জন হয়, তা অনেক ইবাদত বন্দেগীতেও অর্জন হয় না। তাই ওলি আল্লাহদের জীবনীতে দেখা যায়, তাঁরা পিতা-মাতার খেদমত ব্যতিত ওলি হতে পারেননি




* পিতা মাতার উপর সন্তানের হক: —


সমুদ্র তলদেশে মানুষের ইবাদত - -:-.হযরত সুলাইমান (আ) প্রায় সময় আকাশ ওভুমির মাঝে বাতাসের উপর উড়তেন।একদা তিনি গভীর সমুদ্রের উপরদিয়ে অতিক্রম করছিলেন।তিনি সমুদ্রে বাতাসের কারণে বিশাল ঢেউ উঠতে দেখলেন।তিনি বাতাসকে নির্দেশ দিলেন,বাতাস থেমে গেল। অতপর তিনি (তারসংগী) জ্বিনদের (সমুদ্রের তলদেশের অবস্থা)দেখার জন্য পানিতে ডুব দিতে আদেশ করলেন।তারা একের পর এক ডু্ব দিতে লাগল।তারা সমুদ্রের তলদেশে একটি শুভ্র মুক্তার ক্ষুদে ঘর পেল, যার কোন দরজা নেই।তারা এ সম্পর্কে সুলাইমান(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে অবহিত করলো। হযরত সুলাইমান (আ)তা উত্তোলন করার আদেশ দিলেন। হযরতসুলাইমান (আ)এটা দেখে আশ্চার্যান্বিতহলেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার নিকট দুআ করলেন। ফলে তা ফেটে গেল এবং তারএকটি দরজা উন্মুক্ত হল। তিনি আশ্চর্যহয়ে দেখলেন, তাতে একজন সুদর্শন যুবকআল্লাহর উদ্দেশ্যে সেজদারত অবস্থায়আছে।হযরত সুলাইমান (আ)তাকে জিজ্ঞাসা করলেনতুমি মানুষ নাকি জ্বিন?যুবকটি বলল, না আমি মানুষ। হযরত সুলাইমান (আ) বললেন, কিসের বদৌলতে তুমি এ মর্যাদা লাভ করেছ?যুবকটি বললঃ পিতা মাতার সাথে সদাচারণ করে। আমার একটি বৃদ্ধ মাতা ছিলেন।তিনি চলতে ফিরতে পারতেন না।আমি উনাকে আমার পিঠে করে বহন করতাম। তিনি আমার জন্য দোয়া করতেন,"হে আল্লাহ তাকে সৌভাগ্য দান করো। তার উপর তুমি রাজি ও খুশি হয়ে যাও। আমার মৃত্যুর পরতার আবাস এমন স্থানে বানাও যা ভূপৃষ্ঠেও নয় এবং আকাশেও নয়। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করলেন আমি তখন সর্বহারা হয়ে গেলাম। সমুদ্রের উপকূলে ঘুড়ে বেড়াতাম।একদা আমি সেখানে একটি সুন্দর শুভ্র মুক্তার ঘর দেখতে পেলাম। যখন আমি তার কাছে গেলাম,তখন তা খুলে গেল।আমি তাতে প্রবেশ করলাম, আল্লাহর কুদরতে সেটি বন্ধ হয়ে গেল। তাই আমি জানি না আমি ভূপৃষ্ঠে না শূন্যে!আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার অভ্যন্তরেও আমাকে রিজিক দান করেন। হযরতসুলাইমান(আ) জিজ্ঞাসা করলেন, তার অভ্যন্তরে কিভাবে তোমার নিকট রিজি্ক আসে? সে বলল, যখন আমি ক্ষুধার্ত হই, তখন পাথর থেকে একটা গাছ বের হয়। সেই গাছে ফল ধরে এবং তা থেকে দুধের চেয়ে শুভ্র,মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং বরফের চেয়ে ঠান্ডা(সহনীয়) পানি বেরহয়ে আসে আর আমি তা খাই ও পান করি। যখন আমি পরিতৃপ্ত হই এবং পিপাসা মিটে যায়, তখনতা অদৃশ্য হয়ে যায়। হজরত সুলাইমান(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি এখানে দিন রাত্রির পার্থক্য কিভাবে বুঝ? সে বললঃ যখন সুবহে সাদিক হয় তখন ঘরটি শুভ্র আলোয় আলোকিত হয়ে যায়। আর যখন সুর্য অস্তমিত হয়, তখন তা আঁধার হয়ে যায়।অতপর হযরত সুলাইমান (আ) আল্লাহর কাছে দু'আ করলেন। ফলে ঘরটি জোড়া লেগে গেল।অতপর সমুদ্রের গভীরে আপন স্থানে ফিরে গেল।( হেকায়াতুল আম্বিয়া ).সুবহানাল্লাহ*আল্লাহ্ আমাদের পিতামাতার সঠিকভাবে খেদমত করার তৌফিক দিন.আমিন।


* পিতা মাতা সম্পর্কে তিনটি বিশেষ ঘটনা


যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমন করেন এবং তার পিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, আমার পিতা আমার সম্পদ নিয়ে যেতে চান। তিনি বললেন, তোমার পিতাকে নিয়ে আস। এমন সময়ই জিবরাইল আগমন করলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, তার পিতা আসলে আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, ঐ বাক্যগুলো কি, যেগুলো সে মনে মনে বলেছে এবং স্বয়ং তার কানও শুনতে পায় নি। যখন লোকটি তার পিতাকে নিয়ে হাজির হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ব্যাপার কি, আপনার পুত্র আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল কেন? আপনি কি তার আসবাবপত্র ছিনিয়ে নিতে চান? পিতা বলল, আপনি তাকে এ প্রশ্ন করুন, আমি তার ফুফু, খালা ও নিজের জীবন রক্ষার প্রয়োজন ব্যতিত তা কোথায় ব্যয় করি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ব্যাস! অভিযোগ ব্যাখ্যার জন্যে এতটুকুই যথেষ্ট। এরপর তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ বাক্যগুলো কি, যেগুলো এখন পর্যন্ত স্বয়ং আপনার কানও শোনেনি? ইয়া রাসূলুল্লাহ! প্রত্যেক ব্যাপারেই আল্লাহ তাআলা আপনার প্রতি আমাদের ঈমানকে বৃদ্ধি করে দিন। (যে কথা কেউ শুনেনি তা আপনার জানা হয়ে গেছে। এটা একটা মুজিজা। অতঃপর সে বলল, এটা ঠিক যে, আমি মনে মনে কয়েক লাইন কবিতা বলেছিলাম, যেগুলো আমার কানও শুনে নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কবিতাগুলো আমাকে শুনান। তখন সে নিম্নোক্ত পংক্তিগুলো আবৃত্তি করল, আমি শৈশবে তোমাকে খাবারের ব্যবস্থা করেছি এবং যৌবনেও তোমার দায়িত্ব বহন করেছি। তোমার যাবতীয় খাওয়া-পরা আমারই উপার্জন থেকে ছিল। কোন রাতে যখন তুমি অসুস্থ হয়ে পড়েছ, তখন আমি সারা রাত জেগে কাটিয়েছি। যেন তোমার রোগ আমাকেই স্পর্শ করেছে, তোমাকে নয়। ফলে সারা রাত আমি ক্রন্দন করেছি। আমার অন্তর তোমার মৃত্যুর ভয়ে ভীত হত; অথচ আমি জানতাম যে, মৃত্যুর জন্য দিন নির্দিষ্ট রয়েছে- আগে পিছে হতে পারবে না। অতঃপর যখন তুমি বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছ এবং আমার আকাঙ্খিত বয়সের সীমা পর্যন্ত পৌঁছে গেছ, তখন তুমি কঠোরতা ও রুঢ় ভাষাকে আমার প্রতিদান করে দিয়েছ, যদি তুমি আমার প্রতি অনুগ্রহ ও কৃপা না করতে, আফসোস! যদি তোমার দ্বারা আমার পিতৃত্বের হক আদায় না হয়, তবে কমপক্ষে ততটুকুই করতে যতটুকু একজন ভদ্র প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর সাথে করে থাকে। তুমি কমপক্ষে আমাকে প্রতিবেশীর হক তো দিতে এবং আমার সম্পদে আমার সাথে কৃপণতা না করতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবিতাগুলো শুনার পর ছেলের জামার কলার চেপে ধরলেন এবং বললেন, যাও, তুমি ও তোমার সম্পদ সবই তোমার পিতার। (তাফসীরে কুরতুবী, ৬:২৪)


আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন:


একদা তিন ব্যক্তি পথিমধ্যে বৃষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ায় একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করল। একটি পাথর গড়িয়ে এসে গুহার মুখকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিলে তিন ব্যক্তিই গর্তের মধ্যে আটকা পড়ে গেল। তারা পরস্পর পরস্পরকে বলল, চল, আমরা আমাদের এমন কোন পূণ্য কাজের কথা স্মরণ করি যা আমরা একান্তভাবে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য করেছি এবং তার উসীলায় আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন তিনি গর্ত থেকে পাথরটি সরিয়ে দেন। তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার বৃদ্ধ ও দুর্বল পিতামাতা রয়েছে এবং ছোট ছেলেমেয়েও আছে। যাদের জন্য আমি ভেড়া পালন করি। যখন আমি রাতের বেলা ঘরে ফিরি প্রথমে পিতামাতাকেই আমি দুগ্ধ পান করতে দেই এবং অতঃপর ছেলেমেয়েকে দেই। একদিন আমি রাতের বেলা দেরীতে ঘরে ফিরে পিতামাতা উভয়কেই নিদ্রিত অবস্থায় পেলাম। আমি অন্যদিনের মত দুধ নিয়ে তাদের কাছে গেলাম এবং তাদের নিকটে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি তাদেরকে ঘুম থেকে জাগানো পছন্দ করলাম না এবং এও চাইলাম না যে, প্রথমে আমার ছেলেমেয়েকে দুধ পান করতে দেব। যদিও আমার ছেলেমেয়েরা ক্ষুধার তাড়নায় কান্নাকাটি করছিল। আমি ভোর হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। হে আল্লাহ! যদি আমি এই কাজটি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি তবে আমাদের উপর থেকে পাথরটিকে সরিয়ে দিন। এতে আল্লাহ তাআলা গর্তের উপর থেকে পাথরটিকে কিছুটা সরিয়ে দিলেন।


দ্বিতীয় লোকটি বলল, সে তার এক চাচাত বোনকে ভালবাসত এবং সে তার সাথে পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। যখন সে (চাচাত বোন) তাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিল সে পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকল। অতঃপর সে দোয়া করে বলল, হে আল্লাহ! যদি আমি এই কাজটি কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যে করে থাকি তবে গর্তের উপর থেকে পাথরটিকে সরিয়ে দিন। আল্লাহ তাআলা তার দুআ কবুল করেন এবং পাথরটি গর্তের মুখ থেকে আরও কিছুটা সরে গেল।


তৃতীয় ব্যক্তি বলল, সে এক লোকের সাথে একটি অংশীদারী কারবার করত। লোকটি অন্যত্র চলে গেলে সে একাই তা দেখাশুনা করতে থাকে এবং তার অংশীদারের অংশের হিসাব রাখত। যখন অংশীদার ফিরে এল সে তার অংশ লাভসহ বুঝিয়ে দিল। অতঃপর সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলল, হে আল্লাহ! যদি আমি এই কাজ কেবলমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, আপনি এর উসীলায় গর্তের মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে দিন। আল্লাহ তাআলা তার প্রার্থনা কবুল করলেন এবং গর্তের মুখ সস্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত হয়ে গেল। আর তারা তা থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হলো। (বুখারি, মুসলিম)


আব্দুল্লাহ ইবনে ওবাই (রা.) বর্ণনা করেন সাহাবী আলকামা নামাজ রোজার ক্ষেত্রে খুবই নিয়মানুবর্তী ছিলেন। যখন তার মৃত্যু নিকটবর্তী হল, লোকেরা তাকে কালেমার তালকীন করলেন। কিন্তু, তিনি তা পড়তে সমর্থ হলেন না। এই অবস্থা তার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানোর জন্যে লোক পাঠালেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তার পিতামাতা বেঁচে আছেন কিনা। তাঁকে জানানো হল, আলকামার মা বেঁচে আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি অতি দ্রম্নত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে হাজির হলেন। তিনি আলকামা সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, সে একজন দীনদার লোক। তবে তার উপর স্ত্রীকে বেশি প্রাধান্য দেয় এবং তাকে অমান্য করে। তাই তিনি তার উপর অসন্তুষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্ষমা করে দিতে বললেন। কিন্তু তিনি তাতে সম্মত হলেন না। তিনি তখন বেলাল (রা.)-কে কাঠ সংগ্রহ করে আগুন জ্বালিয়ে জ্বলন্ত আগুনে আলকামাকে নিক্ষেপ করতে বললেন। মা একথা শুনে খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি বাস্তবিকই আলকামাকে আগুনে পোড়াতে ইচ্ছুক কিনা? তিনি তখন বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলার শাস্তি এই শাস্তি থেকেও অনেক কঠিন। আল্লাহর কসম! আপনি যতক্ষণ আপনার ছেলের উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন, তার না কোন নামাজ আল্লাহর কাছে কবুল হবে আর না কোন দান। আলকামার মা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে এবং উপস্থিত সকলকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আলকামাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আলকামার অবস্থা দেখার জন্যে কাউকে তার কাছে পাঠালেন। তখন সে এই সুসংবাদ নিয়ে ফিরে এল যে, আলকামা কালেমা পাঠ করে মৃত্যুবরণ করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং তার জানাজায় গেলেন এবং বললেন, মুহাজির ও আনসারদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি তার মায়ের অবাধ্য হবে কিংবা তাকে অসন্তুষ্ট করবে, তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেস্তা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত বর্ষিত হবে। আল্লাহ তাআলা তার কোন কাজ কিংবা নফল ইবাদত কবুল করবেন না, যতক্ষণ না সে অনুশোচিত হবে, মায়ের যথাযথ পরিচর্যা ও সেবা করবে এবং তাকে সন্তুষ্ট করবে।’ (তাবরানি)


এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজির ও আনসারদের সম্বোধন করেছেন। কেননা, তখন তার আশেপাশে কেবল তারাই ছিলেন। অধিকন্তু, তিনি কেবল মায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। কেননা, ঘটনাটি মায়ের সন্তুষ্টির সাথে সম্পর্কিত ছিল। যা হোক, এটি পরিষ্কার যে, এই নির্দেশনাটি সকল মুমিনের জন্যে এবং পিতামাতা উভয়ের সন্তুষ্টির কথা বলে, বিশেষতঃ মায়ের। আমাদের জেনে রাখা উচিৎ যে, আলকামা ছিলেন খুব ধার্মিপরায়ন লোক এবং তার নামাজ রোজার ব্যাপারে খুবই নিয়মানুবর্তী। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন সাহাবীও ছিলেন। এসব কিছুই মৃত্যুর সময় তাকে সাহায্য করতে পারে নি। তিনি মৃত্যুর সময় কালিমা শাহাদাত পাঠের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন কেবল তার মাকে অসন্তুষ্ট করার কারণে। আমাদের সেই হাদিসও স্মরণ রাখতে হবে যাতে এসেছে, যে ব্যক্তি এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে, তার শেষ কথা হবে কালেমা, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেউ বলতে পারে না কখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসবে। অতএব, আমাদেরকে শীঘ্রই আমাদের মাতা পিতার, বিশেষ করে মায়ের সন্তুষ্টি কামনা করতে হবে। অন্যথায় আমরাও মৃত্যুর সময় কালেমা পাঠের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হব।আল্লাহ আমাদের সকলকে পিতা মাতার খেদমত করার তাওফিক দান করুন।


* মায়ের ডাকে গুরুত্ব না দেয়ায় হযরত জুরাইজের যে পরিনীতি ভোগ করতে হলো,সহিহ বুখারী-২৪৮৩


 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ كَانَ رَجُلٌ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ، يُقَالُ لَهُ جُرَيْجٌ، يُصَلِّي، فَجَاءَتْهُ أُمُّهُ فَدَعَتْهُ، فَأَبَى أَنْ يُجِيبَهَا، فَقَالَ أُجِيبُهَا أَوْ أُصَلِّي ثُمَّ أَتَتْهُ، فَقَالَتِ اللَّهُمَّ لاَ تُمِتْهُ حَتَّى تُرِيَهُ الْمُومِسَاتِ‏.‏ وَكَانَ جُرَيْجٌ فِي صَوْمَعَتِهِ، فَقَالَتِ امْرَأَةٌ لأَفْتِنَنَّ جُرَيْجًا‏.‏ فَتَعَرَّضَتْ لَهُ فَكَلَّمَتْهُ فَأَبَى، فَأَتَتْ رَاعِيًا، فَأَمْكَنَتْهُ مِنْ نَفْسِهَا فَوَلَدَتْ غُلاَمًا، فَقَالَتْ هُوَ مِنْ جُرَيْجٍ‏.‏ فَأَتَوْهُ، وَكَسَرُوا صَوْمَعَتَهُ فَأَنْزَلُوهُ وَسَبُّوهُ، فَتَوَضَّأَ وَصَلَّى ثُمَّ أَتَى الْغُلاَمَ، فَقَالَ مَنْ أَبُوكَ يَا غُلاَمُ قَالَ الرَّاعِي‏.‏ قَالُوا نَبْنِي صَوْمَعَتَكَ مِنْ ذَهَبٍ‏.‏ قَالَ لاَ إِلاَّ مِنْ طِينٍ ‏"‏‏.‏




আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:




তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইজ নামক একজন লোক ছিলেন। একদিন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাঁর মা তাকে ডাকলেন। কিন্তু তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন না। তিনি বললেন, সালাত আদায় করব, না কি তার জবাব দেব। তারপর মা তাঁর কাছে এলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! তাকে মৃত্যু দিও না যে পর্যন্ত তুমি তাকে কোন বেশ্যার মুখ না দেখাও। একদিন জুরাইজ তার ইবাদতখানায় ছিলেন। এমন সময় এক মহিলা বললেন, আমি জুরাইজকে ফাঁসিয়ে ছাড়ব। তখন সে তার নিকট গেল এবং তার সাথে কথাবার্তা বলল। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। তারপর সে মহিলা এক রাখালের কাছে এসে স্বেচ্ছায় নিজেকে তার হাতে সঁপে দিল। তার কিছুদিন পর সে একটি ছেলে প্রসব করল। তখন সে বলে বেড়াতে লাগল যে, এ ছেলে জুরাইজের! এ কথা শুনে লোকেরা জুরাইজের নিকট এল এবং তার ইবাদতখানা ভেঙ্গে তাকে বের করে দিল এবং তাকে গালিগালাজ করল। এরপর তিনি (জুরাইজ) অযু করলেন এবং সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি ছেলেটির কাছে এসে বললেন, হে ছেলে! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল, রাখাল। তখন লোকেরা বলল, আমরা তোমার ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরী করে দিব। জুরাইজ বললেন, না মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও (যেমনটা পূর্বে ছিল)।


  




সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪৮৩


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস




* আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যেন তিনি আবূ হুরাইরার মাকে হিদায়াত দান করেন।সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬২৯০


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


حَدَّثَنَا عَمْرٌو النَّاقِدُ، حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ يُونُسَ الْيَمَامِيُّ، حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ بْنُ عَمَّارٍ، عَنْ أَبِي كَثِيرٍ، يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ حَدَّثَنِي أَبُو هُرَيْرَةَ، قَالَ كُنْتُ أَدْعُو أُمِّي إِلَى الإِسْلاَمِ وَهِيَ مُشْرِكَةٌ فَدَعَوْتُهَا يَوْمًا فَأَسْمَعَتْنِي فِي رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا أَكْرَهُ فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أَبْكِي قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي كُنْتُ أَدْعُو أُمِّي إِلَى الإِسْلاَمِ فَتَأْبَى عَلَىَّ فَدَعَوْتُهَا الْيَوْمَ فَأَسْمَعَتْنِي فِيكَ مَا أَكْرَهُ فَادْعُ اللَّهَ أَنْ يَهْدِيَ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ اللَّهُمَّ اهْدِ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ ‏"‏ ‏.‏ فَخَرَجْتُ مُسْتَبْشِرًا بِدَعْوَةِ نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا جِئْتُ فَصِرْتُ إِلَى الْبَابِ فَإِذَا هُوَ مُجَافٌ فَسَمِعَتْ أُمِّي خَشْفَ قَدَمَىَّ فَقَالَتْ مَكَانَكَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ‏.‏ وَسَمِعْتُ خَضْخَضَةَ الْمَاءِ قَالَ - فَاغْتَسَلَتْ وَلَبِسَتْ دِرْعَهَا وَعَجِلَتْ عَنْ خِمَارِهَا فَفَتَحَتِ الْبَابَ ثُمَّ قَالَتْ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ - قَالَ - فَرَجَعْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَتَيْتُهُ وَأَنَا أَبْكِي مِنَ الْفَرَحِ - قَالَ - قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَبْشِرْ قَدِ اسْتَجَابَ اللَّهُ دَعْوَتَكَ وَهَدَى أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ ‏.‏ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَقَالَ خَيْرًا - قَالَ - قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُحَبِّبَنِي أَنَا وَأُمِّي إِلَى عِبَادِهِ الْمُؤْمِنِينَ وَيُحَبِّبَهُمْ إِلَيْنَا - قَالَ - فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ اللَّهُمَّ حَبِّبْ عُبَيْدَكَ هَذَا - يَعْنِي أَبَا هُرَيْرَةَ وَأُمَّهُ - إِلَى عِبَادِكَ الْمُؤْمِنِينَ وَحَبِّبْ إِلَيْهِمُ الْمُؤْمِنِينَ ‏"‏ ‏.‏ فَمَا خُلِقَ مُؤْمِنٌ يَسْمَعُ بِي وَلاَ يَرَانِي إِلاَّ أَحَبَّنِي ‏.‏




আবূ কাসীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:




তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) রিওয়ায়াত করেছেন যে, আমি আমার মাকে ইসলামের দিকে আহ্বান করতাম, তখন তিনি মুশরিকা ছিলেন। একদা আমি তাকে ইসলাম গ্রহণের জন্য আহ্বান জানালে তখন তিনি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপারে আমাকে এমন কথা শুনালেন, যা আমার নিকট অনেক অপছন্দনীয় মহে হচ্ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার মাকে ইসলামের দা‘ওয়াত দিয়েছিলাম আর তিনি আমার দা‘ওয়াত অস্বীকার করে আসছেন। তাপর আমি তাকে আজ দা‘ওয়াত দেয়াতে তিনি আমাকে আপনার ব্যাপারে এমন কথা শুনালেন, যা আমি সর্বদাই অপছন্দ করি। অতএব আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যেন তিনি আবূ হুরাইরার মাকে হিদায়াত দান করেন। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ“হে আল্লাহ! আবূ হুরাইরার মাকে হিদায়াত দান করো।” তারপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দু’আর কারণে আমি খুশী মনে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি ঘরে পৌঁছলাম তখন তার দরজা বন্ধ দেখতে পেলাম। আমার মা আমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তারপর তিনি বললেন, আবূ হুরায়রা্! একটু দাঁড়াও (থামো)। তখন আমি পানির কলকল শব্দ শুনছিলাম। তিনি বলেন, এরপর তিনি (আমার মা) গোসল করলেন এবং শরীরে চাদর দিলেন। আর তাড়াতাড়ি করে ওড়না জড়িয়ে নিলেন, তারপর বাড়ীর দরজা খুলে দিলেন। অতঃপর বললেন, “হে আবূ হুরায়রা্! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রসূল।” তিনি বলেন, তখন আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে উপস্থিত হলাম। তারপর তাঁর নিকট গেলাম এবং আমি তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাঁদছিলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সুখবর শুনুন। আল্লাহ আপনার দু’আ কবূল করেছেন এবং আবূ হুরাইরার মাকে হিদায়াতপ্রাপ্ত করেছেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন ও তাঁর প্রশংসা করলেন। আর বললেন, ‘উত্তম’।


তিনি বলেন, তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে এবং আমার মাকে মু’মিন বান্দাদের নিকট প্রিয়পাত্র করেন এবং তাঁদের ভালবাসা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ“হে আল্লাহ! তোমার এ বান্দা আবূ হুরাইরাকে এবং তাঁর মাকে মু’মিন বান্দাদের নিকট প্রিয়পাত্র করে দাও এবং তাঁদের নিকটও মু’মিন বান্দাদের প্রিয়পাত্র করে দাও।” তারপর এমন কোন মু’মিন বান্দা পয়দা হয়নি, যে আমার কথা শুনেছে কিংবা আমাকে দেখেছে অথচ আমাকে ভালবাসেনি। (ই.ফা. ৬১৭১, ই.সে. ৬২১৫)


  




সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬২৯০


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

No comments

Powered by Blogger.