৯২ সহীহ নিয়্যাত
* সবাই সুখী হতে চায়। সুখের মালিক কে
* ঈমান ও আমলের মধ্যে রয়েছে সুখ শান্তি। রাবেয়া বসরী আল্লাহর নামের মধ্যে মিষ্টি তথা সুখ খুঁজে পায়
* যতক্ষণ সম্পদের লোক থাকবে ততক্ষণ সে মনের দিক দিয়েও সুখী নয়। এক ব্যক্তি হযরত জুনায়দ বাগদাদী (রহঃ) এর কাছে পাঁচ শত দীনার নিয়ে এসে বললো, 'হুযূর, এই দীনারগুলি আপনি নিন। আপনার জন্যে হাদিয়া নিয়ে এসেছি।
وَ مَنْ یُّرِدْ ثَوَابَ الدُّنْیَا نُؤْتِهٖ مِنْهَا١ۚ وَ مَنْ یُّرِدْ ثَوَابَ الْاٰخِرَةِ نُؤْتِهٖ مِنْهَا١ؕ
* দুনিয়া এবং পরকাল পাবে সেটা হবে বান্দার চেষ্টার উপর
* বিশুদ্ধ নিয়্যতোই মানযিলে মাকসাদে পৌঁছিয়ে দিবে
* আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারকের চেয়ে কামার উচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত হয়েছে
* হে আমার বান্দাহ তুমি আমার হও আমি তোমার হবো
* আল্লাহর কাছে ধনী গরীব রাখাল সবাই সমান, তিনি নজর দেন বান্দার কলবের দিকে,আল্লাহ মন দেখেন। মুসলিম ৬৪৩৬
إِنَّ اللَّهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى أَجْسَادِكُمْ وَلاَ إِلَى صُوَرِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ " وَأَشَارَ بِأَصَابِعِهِ إِلَى صَدْرِهِ
* হযরত ঈসা আঃ এর জমানায় একজন রাহেব (সন্ন্যাসী) জংগলের এক গুহায় আল্লাহর উপাসনার জন্য বসে রায়,তের বছর পর হঠাৎ এক কাক পথ ভুলে ডুকে পরলো এই গুহায় (কে সে জন-76
____________________________________
* আল্লাহর কাছে ধনী গরীব রাখাল সবাই সমান, তিনি নজর দেন বান্দার কলবের দিকে,আল্লাহ মন দেখেন,সহিহ মুসলিম ৬৪৩৬
حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ سَرْحٍ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ أُسَامَةَ، - وَهُوَ ابْنُ زَيْدٍ - أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَعِيدٍ، مَوْلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَامِرِ بْنِ كُرَيْزٍ يَقُولُ سَمِعْتُ أَبَا، هُرَيْرَةَ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَذَكَرَ نَحْوَ حَدِيثِ دَاوُدَ وَزَادَ وَنَقَصَ وَمِمَّا زَادَ فِيهِ " إِنَّ اللَّهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى أَجْسَادِكُمْ وَلاَ إِلَى صُوَرِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ " . وَأَشَارَ بِأَصَابِعِهِ إِلَى صَدْرِهِ .
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ……. এরপর উসামাহ্ ইবনু যায়দ দাউদ-এর হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেছেন। তবে এ বর্ণনায় তিনি সামান্য কম-বেশি করেছেন। তারা উভয়ে যতটুকু বাড়িয়ে বলেছেন, তা হচ্ছে “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের দেহকায় ও বাহ্যিক আকৃতির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তরসমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন।” (এ বলে) তিনি তাঁর আঙ্গুলের মাধ্যমে স্বীয় বক্ষের দিকে ইঙ্গিত করেন। (ই.ফা. ৬৩১০, ই.সে. ৬৩৫৯)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৩৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
* যতক্ষণ সম্পদের লোক থাকবে ততক্ষণ সে গরিব এবং সে মনের দিক দিয়েও সুখী নয়
* ধনী কে? :
ধনী হলো সেই ব্যক্তি যাকে রসূলুল্লাহ্ ধনী বলেছেন। তিনি এরশাদ করেন :
خَيْرُ الْغِنَى عَلَى النَّفْسِ
“ধনী হলো সেই ব্যক্তি যার অন্তর ধনী।”
অর্থাৎ যার কোন চাহিদা নাই সেই ধনী। সে কখনও অভাব অনুভব করে না, তার যা’ আছে তাতেই সে সন্তুষ্ট। এই সন্তুষ্টিটাই ধনীত্ব। বিষয়টা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে একটি ঘটনা থেকে। ঘটনাটি হলো এই ঃ
অভাবী এক ধনীর ঘটনা :
এক ব্যক্তি হযরত জুনায়দ বাগদাদী (রহঃ) এর কাছে পাঁচ শত দীনার নিয়ে এসে বললো, 'হুযূর, এই দীনারগুলি আপনি নিন। আপনার জন্যে হাদিয়া নিয়ে এসেছি।' তিনি বললেন, 'আমি গরীবের হাদিয়া গ্রহণ করি না।' লোকটি বললো, 'আমি গরীব নই। আপনি এইগুলি গ্রহণ করুন। হযরত বললেন, 'এই পাঁচ শত দীনার ছাড়া আরও কি তোমার কোন দীনার আছে?' সে বললো, 'জী হাঁ, আমার আরও অনেক দীনার আছে।' তিনি বললেন, 'তুমি কি আর অধিক দীনার চাও না?' সে বললো, 'চাই। আরও অধিক হলে ভাল হয়।' হযরত জুনায়দ বললেন, 'তাহলে এখনও তোমার চাহিদা আছে। আর যার চাহিদা আছে সে অভাবী। সুতরাং তুমি গরীব। এই পাঁচ শ' দীনারে আমার চেয়ে তোমার হক বেশী। সুতরাং তুমি এগুলি নিয়ে যাও। আমার যা আছে আমি তাতেই সন্তুষ্ট। আমার কোন চাহিদা নাই। সুতরাং আমি ধনী। আর তুমি গরীব। ধনী হয়ে গরীবের হাদিয়া গ্রহণ করতে পারি না।'
সুতরাং আমরা যাদেরকে ধনী মনে করছি তারা যে ধনী নয় সেকথা প্রমাণিত হয়ে গেল । আরেকটি প্রমাণ হলো এই যে, এরা সম্পদ জমা করে ঠিকই, কিন্তু ভোগ করতে কেউ পারে না। এখানে বাংলাদেশের একজন শ্রেষ্ঠ ধনীর ঘটনা উল্লেখ করলে সব ধনীর অবস্থা বুঝে নিতে পারবেন।
* হযরত ঈসা আঃ এর জমানায় একজন রাহেব (সন্ন্যাসী) জংগলের এক গুহায় আল্লাহর উপাসনার জন্য বসে রায়,তের বছর পর হঠাৎ এক কাক পথ ভুলে ডুকে পরলো এই গুহায় (কে সে জন-76
* হযরত ঈসা আঃ এর জমানায় একজন রাহেব (সন্ন্যাসী) জংগলের এক গুহায় আল্লাহর উপাসনার জন্য বসে যায়, নির্জনতার ভেতর সময় চলে ইবাদত-বন্দেগীতে, এই জগতের মানুষের থেকে ধীরে ধীরে পুরোপুরি আলাদা হয়ে গেলেন তিনি, একসময় ভুলে গেলেন এই পৃথিবীর কথা, নির্জন গুহার চারপাশে ঘিরে জমে উঠলো লতাগুল্ম গাছপালা, তের বছর পর একদিন এক কাক, হঠাৎ পথ ভুলে ঢুকে পড়ল এই গুহায়, ঢুকে পড়েছে ঠিক ঐ কিন্তু বাহির হবার পথ খুঁজে পাচ্ছে না, কা কা রব বেড়েই চললো, কাকের অবস্থার চিৎকারে ধ্যান ভেঙ্গে গেল রাহে বের, দীর্ঘ তেরো বছর মুহূর্তের জন্য আল্লাহর থেকে আলাদা হয়নি, আজ কাক তার সর্বনাশ করে দিল, আল্লাহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়লেন, এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন কাজটিকে, সব রাগ গিয়ে পড়ল কাকের ওপর, বিরক্তি বড়ে তাকালেন কাকের দিকে, কাকের শরীরে ধরে গেছে আগুন, ঝলসে গেছে সে। কালো পোড়া কয়লার মত কাকের দেহ কোলে এসে পড়ল রাহেবের, দিশেহারা হয়ে পড়লেন তিনি, ভয়ে দুশ্চিন্তায়। তবে কি আমার কোনো পাপ হয়ে গেল? নারাজ হয়ে গেলেন আল্লাহ তাআলা? তিনি চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন।হে আল্লাহ একি কাণ্ড হলো। তুমি কি আমার উপর অখুশি হয়ে গেলে? তা না হলে নিরীহ কাক মারা পড়লো কেন? সর্বদা অলি বজুর্গ সন্ত্রস্ত ও তটস্থ থাকেন আল্লাহর ভয়ে। ওই যুবক রাহেব আল্লাহর ভয় দিশাহারা হয়ে গেলেন, আল্লাহ অদৃশ্য থেকে বললেন ,হে রাহেব তুমি ভয় পেয়ো না, আমি তোমার প্রতি খুশি,রাহেব কয় হে আল্লাহ পাখি পুড়ে মরলো কেন? রাহেব ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো। আল্লাহ বলেন হে রাহেব, তুমি যে তেরো বছর ধরে আমাকে ডেকে চলেছে, আজ আর তুমি তোমার নাই, তোমার দেখা আমারই দেখা, তুমি বিরক্তির নজরে কাককে দেখনি আমি দেখেছি, আমার গায়রাত বা প্রতাপ ছোট্ট কাক সহ্য করতে পারে নি। আগুন ধরে ঝলসে গেছে। তেরো বছর বেরিয়া ইবাদত করে এতো নৈকট্য অর্জন করেছিলেন রাহেব।সত্তর বছর কবুল ইবাদত আমাদের কোথায় পৌঁছে দিবে ভাই।
৩: আলে-ইমরান:আয়াত: ১৪৫
وَ مَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تَمُوْتَ اِلَّا بِاِذْنِ اللّٰهِ كِتٰبًا مُّؤَجَّلًا١ؕ وَ مَنْ یُّرِدْ ثَوَابَ الدُّنْیَا نُؤْتِهٖ مِنْهَا١ۚ وَ مَنْ یُّرِدْ ثَوَابَ الْاٰخِرَةِ نُؤْتِهٖ مِنْهَا١ؕ وَ سَنَجْزِی الشّٰكِرِیْنَ
কোন প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে। যে ব্যক্তি দুনিয়াবী পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে আমি তাকে দুনিয়া থেকেই দেবো। আর যে ব্যক্তি পরকালীন পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে সে পরকালের পুরস্কার পাবে এবং শোকরকারীদেরকে আমি অবশ্যি প্রতিদান দেবো।
* মনের মাঝে সুধু সৎ কাজের বিশুদ্ধ নিয়্যত থাকবে। মানযিলে মাকসাদে পৌঁছিয়ে দিবেন কে?
* আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক ও এক কামারের গল্প
বিখ্যাত আলেম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.)। তিনি ছিলেন ফকীহ, মুজাহিদ, মুহাদ্দিস ও সুফি। উচ্চ পর্যায়ের আলেম বুযুর্গ হিসাবে সমকালীন উলামা মনিষীগণ তাকে পরম শ্রদ্ধার সাথে দেখতেন। তিনি ইন্তিকাল করলে তার সময়ের এক বুযুর্গ তাকে সপ্নে দেখলেন।
জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার অবস্থা কি? হযরত আব্দুল্লাহ বিন মোবারক (রহ.) বললেন, আল্লাহ তায়ালা আমার প্রতি অনেক দয়া ও অনুগ্রহ করেছেন। তবে আমার ঘরের সামনেই এক কামার বাস করতো, তাকে আল্লাহ তায়ালা আমার চাইতে উচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত করেছেন। যখন সেই বুযুর্গের ঘুম ভাঙলো, তখন তার মনের মধ্যে এ চিন্তার উদয় হলো, আচ্ছা।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.) এর চাইতে উচ্চ স্তরের অধিকারী হয়েছে যে কামার, তার একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখা দরকার। সে কি এমন আমল করতো যে কারণে মর্যাদায় সে আব্দুল্লাহ বিন মোবারককে ছাড়িয়ে গেছে? অবশেষে তিনি আব্দুল্লাহ বিন মোবারক বাড়িতে গেলেন, খোঁজ খবর নিলেন।
আসলেই কি সেখানে কোন কামার বাস করতো কি না। জানতে পারলেন, সত্যিই তার ঘরের পাশে এক পাশে এক কামার বাস করতো। সেও মারা গেছে। বুযুর্গ সেই কামারের ঘরে গিয়ে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাস করলেন, তোমার স্বামী দুনিয়াতে কি কাজ করতো? স্ত্রী বলল, আমার স্বামী তো একজন সাধারণ কামার ছিলেন। সারাদিন লোহা পেটাতো, এ ছিল তার কাজ।
বুযুর্গ বললেন, তোমার স্বামী নিশ্চয় বিশেষ কোন আমল করতো। যে কারণে আমি স্বপ্নে দেখেছি যে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মোবারক (রহ.) এর চাইতেও অনেক উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয়েছে। স্ত্রী বললো, আমি যতটুকু জানি আমার স্বামী লোহার কাজ করতেন। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি, আমাদের ঘরের পাশেই আব্দুল্লাহ বিন মোবারক (রহ.) এর বাড়ি।
রাত্রে তিনি তার বাড়ির ছাদের উপর দাঁড়িয়ে এমনভাবে তাহাজ্জুদ পড়তেন যে, দূর থেকে মনে হতো স্থির একটি কাষ্ঠ খ-। তিনি কোনোরুপ নড়াচড়া করতেন না, আমার স্বামী ঘুম থেকে উঠে যখনই দৃশ্য দেখতেন, তখন তিনি আক্ষেপ করে বলতেন, আহ! আল্লাহ তায়ালা তাকে অবসর দান করেছেন, তিনি রাতভর কতো সুন্দর ইবাদত করেছেন।
মনে ঈর্ষা জাগে, যদি আল্লাহ আমাকে এ কামার র্কম থেকে পরিত্রাণ দিতেন তাহলে আমিও তার মতো তাহাজ্জুদের মধ্যে রাত কাটিয়ে দিতাম। আমি রীতি তাকে এভাবে আক্ষেপ করতে দেখতাম। দ্বিতীয় আর একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি, আমার স্বামী লোহা পেটাতো, এরই মধ্যে যদি আযানের ধ্বনি কানে আসতো, তৎক্ষণাথ কাজ বন্ধ করে দিতেন।
উঁচু করা হাতুড়িটি আরেকবার মারতে পছন্দ করতো না। বরং হাতুড়িটা উপর থেকে ছেড়ে দিতেন এবং বলতেন, আযানের শব্দ কানে আসার পর হাতুড়ি মারা আমার জন্য বৈধ নয়। একথা বলে সোজা মসজিদে যেতেন। বুযুর্গ বললেন, এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা তাকে এতো উচ্চ মর্যাদান দান করেছেন।
No comments