56/124 কথা বার্তায় শিষ্টাচার
وَعِبَادُ الرَّحْمَـٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا
* আমরা সবাই দ্বীনের দায়ী আর দায়ীদের ভাষা হবে নম্র। কুনতুম খাইরা উম্মাতিন। আল ইমরান - 110
* নম্র কন্ঠে কথা সকলেরই প্রিয় আল্লাহ তার বার্তাবাহক নবী রাসুলদের কে নম্র বাসায় কথা বলার আদব শিখিয়েছেন ৷ হযরত মুসাও হারুন আলাই সাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন
اذْهَبَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ
فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ
* ফেরাউনকে আল্লাহ কত যে ক্ষমতা দিয়েছিলেন।যুখরুফ ৫১
وَنَادَىٰ فِرْعَوْنُ فِي قَوْمِهِ قَالَ يَا قَوْمِ أَلَيْسَ لِي مُلْكُ مِصْرَ وَهَـٰذِهِ الْأَنْهَارُ تَجْرِي مِن تَحْتِي ۖ أَفَلَا تُبْصِرُونَ
শেষ পর্যন্ত ফেরাউনের দাম্ভিকতা দূলির সাথে মিশে যায়
* সুতরাং কর্কশতা নয় নম্র মেজাজের হতে হবে।
* ইহুদীদের আলেম যায়িদ ইবনে সু’নাহ থেকে নবীজি ঋণ নেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই ঋন চেয়ে নবীর মেজাজ পরিক্ষা করেন
* এইভাবে নবী তার সুন্দর ব্যবহার দিয়ে দুনিয়ার সমস্ত মানুষের মনো প্রাণ কেড়ে নিয়েছেন। তাই দেখা গেল বিদায় হজ্বের ভাষণ এক লক্ষ চব্বিশ হাজার সাহাবী এসে দাঁড়ালো
وَ لَا تَسْتَوِی الْحَسَنَةُ وَ لَا السَّیِّئَةُ١ؕ اِدْفَعْ بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ فَاِذَا الَّذِیْ بَیْنَكَ وَ بَیْنَهٗ
______________________________________________________
৩: আলে-ইমরান:আয়াত: ১১০
كُنْتُمْ خَیْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ تَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ١ؕ وَ لَوْ اٰمَنَ اَهْلُ الْكِتٰبِ لَكَانَ خَیْرًا لَّهُمْ١ؕ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ وَ اَكْثَرُهُمُ الْفٰسِقُوْنَ
এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল। তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য। তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো। এই আহলি কিতাবরা ঈমান আনলে তাদের জন্যই ভালো হতো। যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ঈমানদার পাওয়া যায়; কিন্তু তাদের অধিকাংশই নাফরমান।
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، قَالَ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ بْنِ مَسْعُودٍ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ قَامَ أَعْرَابِيٌّ فَبَالَ فِي الْمَسْجِدِ فَتَنَاوَلَهُ النَّاسُ، فَقَالَ لَهُمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " دَعُوهُ وَهَرِيقُوا عَلَى بَوْلِهِ سَجْلاً مِنْ مَاءٍ، أَوْ ذَنُوبًا مِنْ مَاءٍ، فَإِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِينَ، وَلَمْ تُبْعَثُوا مُعَسِّرِينَ ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেনঃ একদা জনৈক বেদুঈন দাঁড়িয়ে মসজিদে পেশাব করল। তখন লোকেরা তাকে বাধা দিতে গেলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং ওর পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কারণ তোমাদেরকে কোমল ও সুন্দর আচরণ করার জন্য পাঠানো হয়েছে, রূঢ় আচরণ করার জন্য পাঠানো হয়নি।
(৬১২৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২২০)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২২০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
ক্ষমা ও মহানুভবতার মূর্ত প্রতীক: ক্ষমা ও মহানুভবতা ছিল মহানবীর (সাঃ) সহজাত অভ্যাস। প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ থাকা সত্তে¡ও তিনি চরম শত্র“কেও ক্ষমা করে দিতেন। মক্কার কাফির, মুশরিকরা হুজুরকে (সাঃ) প্রাণে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছে, অত্যাচারের স্টীম-রোলার চালিয়ে তার উপর। তারপরও তিনি মক্কা বিজয়ের দিনে ঘোষণা করলেন, ‘হে কুরাইশরা! তোমরা আমার কাছ থেকে আজ কেমন ব্যবহার আশা করো?’ তারা বলল, সম্মানিত ভাই ও ভ্রাতুষ্পুত্রের মতো! তিনি বললেন, ‘তোমরা চলে যাও! আজ তোমরা মুক্ত!’ বিনা রক্তপাতের এমন বিজয়, আর বিজয়ের পরে সাধারণ ক্ষমার এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবী কি কখনও দেখেছে ? এক ইহুদী বুড়ি তাকে বিষ প্রয়োগ করেছিল, তারপরও তিনি তাকে মাফ করে দিয়েছিলেন।
* ইসলাম একজন মুমিনকে যেসব গুণ আয়ত্ত করার নির্দেশ বা উৎসাহ প্রদান করেছে, বিনয়ী হওয়া বা নম্রতা অবলম্বন করা তার অন্যতম। একজন মুসলিম সবার সঙ্গে সর্বক্ষেত্রে বিনয়ী আচরণ করবে, নম্রতা হবে তার চরিত্রের অন্যতম দিক এটাই ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) শিক্ষা। বিনয়ী ব্যক্তিকে আলস্নাহ যেমন ভালোবাসেন, তেমনি মানুষও তাকে ভালোবাসেন। যে ব্যক্তি আলস্নাহর উদ্দেশে বিনয়ী হয়, আলস্নাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।
* কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া :
আঘাতের ক্ষত ও ব্যথা দ্রুত সেরে যায়। কিন্তু কথার মাধ্যমে দেওয়া আঘাত ও ক্ষতের নিরাময় সহজে হয় না। সেজন্য কবি বলেন,
جِرَاحَاتُ السِّنَانِ لَهَا الْتِئَامُ * وَلاَ يَلْتَامُ مَا جَرَحَ اللِّسَانُ
‘তরবারির আঘাতের ক্ষতের প্রতিষেধক আছে, কিন্তু জিহবার ক্ষতের কোন প্রতিষেধক নেই’।[2] তাই কথার মাধ্যমে দেওয়া আঘাত মানুষ সবচেয়ে বেশী স্মরণে রাখে এবং এ আঘাত সর্বাধিক ব্যথাতুর হয়। কথার দ্বারা মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-
* যেভাবে কথা বলতে কোরআনের একাধিক আয়াতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَقُولُواْ لِلنَّاسِ حُسْناً
‘মানুষের সঙ্গে (নরম ভাষায়) উত্তম কথাবার্তা বলবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৮৩)
وَعِبَادُ الرَّحْمَـٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا
(আল ফুরকান - ৬৩)
রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।
সালাম' বলার অর্থ মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ও তর্ক-বিতর্ক ছেড়ে দেওয়া। অর্থাৎ, ঈমানদাররা জাহেল ও মুর্খ লোকদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে না। বরং তারা এমতাবস্থায় এড়িয়ে চলার পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং ফালতু বিতন্ডা বর্জন করে।
هَوْنًا--নম্রভাবে
خَاطَبَهُمُ--সম্বোধন করে তাদেরকে,
,কথা বলে তাদের সাথে,
* নম্র কন্ঠে কথা সকলেরই প্রিয় আল্লাহ তার বার্তাবাহক নবী রাসুলদের কে নম্র বাসায় কথা বলার আদব শিখিয়েছেন ৷ হযরত মুসাও হারুন আলাই সাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন
اذْهَبَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ
(ত্বোয়াহ - ৪৩)
তোমরা উভয়ে ফেরআউনের কাছে যাও সে খুব উদ্ধত হয়ে গেছে।
فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ
(ত্বোয়াহ - ৪৪)
অতঃপর তোমরা তাকে নম্র কথা বল, হয়তো সে চিন্তা-ভাবনা করবে অথবা ভীত হবে।
لَّيِّنًا--নম্র ভাবে,,
يَتَذَكَّرُ-- উপদেশ গ্রহন করবে
يَخْشَىٰ-ভয় করবে,
لَّعَلَّهُ--হয়তো সে
* ফেরাউনকে আল্লাহ কত যে ক্ষমতা দিয়েছিলেন।যুখরুফ ৫১
وَنَادَىٰ فِرْعَوْنُ فِي قَوْمِهِ قَالَ يَا قَوْمِ أَلَيْسَ لِي مُلْكُ مِصْرَ وَهَـٰذِهِ الْأَنْهَارُ تَجْرِي مِن تَحْتِي ۖ أَفَلَا تُبْصِرُونَ
ফেরাউন তার সম্প্রদায়কে ডেকে বলল, হে আমার কওম, আমি কি মিসরের অধিপতি নই? এই নদী গুলো আমার নিম্নদেশে প্রবাহিত হয়, তোমরা কি দেখ না?
تَحْتِي--আমার অধীনে,,
আমার নিম্নদেশে
* একবার অনাবৃষ্টির জন্য দেশে দারুণ অজন্মা হয়েছিলো। এমন কি নীলনদের পানি পর্যন্ত শুকিয়ে গিয়েছিলো। প্রজারা সুযোগ মতো বাদশাহকে বললোঃ জাঁহাপনা আপনি যদি খোদা হন, তবে আপনি খেঅদার মতো ক্ষমতা আমাদের একবার দেখান।এবার বৃষ্টির অভাবে নীলনদ পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে এবং মাঠের সমস্ত ফসল পুড়ে গেছে। আপনি নীলনদ পানিতে পূর্ণ করে আমাদের ফসল রক্ষা করে দেবার ব্যবস্থা করে দিন।
এবার ফেরাউন বড় বিপদে পড়লেন! কিন্তু চতুরতার সঙ্গে তাদের আশ্বাস দিয়ে বললেনঃ এর আর এমন বেশি কথা কি! আগে এ সংবাদ আমায় জানাও নি কেন? আজ আমার অনেক কাজ-আজ সময় হবেনা। আগামীকাল তোমাদের নীলনগ পানিতে ভর্তি করে দেবো। তোমরা সেই পানি দিয়ে ফসল রক্ষা করো।
প্রজারা খুশী হয়ে বাড়ি চলে গেলো।
প্রজারা বিদায় হলে ফেরাউন চিন্তা করতে লাগলেন, কি করা যায়! সারাদিন কেটে গেলো –তারপর সন্ধ্যা হয়ে এলো। গভীর রাত্রে একাকী ঘোড়ায় চড়ে রাজধানী থেকে বেরিয়ে পড়লেন। শহর থেকে ময়দান পার হয়ে গ্রাম, গ্রাম পার হয়ে এক ভীষণ জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করলেন। সেখানে ছিল এক মস্ত বড় কূপ। সে কূপের ধারে এসে ফেরাউন ঘোড়া থেকে নামলেন। তারপর একগাছি দড়ি আপনার পায়ে বাঁধলেন, সে দড়ি একটা গাছের গোড়ায় শক্ত করে বেঁধে সেই কূপের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে পড়লেন। দোদুল্যমান অবস্থায় তিনি উচ্চঃস্বরে কেঁদে কেঁদে খোদার কাছে প্রার্থনা করতে লাগলেনঃ হে দয়াময় প্রভু, তুমি অনেক পাপীর ইচ্ছা পূরণ করছো। এক্ষণে আমি বিপদগ্রস্ত। আমাকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করে মালিক। এবারের মতো তুমি আমার মান বাঁচাও। তা’না হলে আমি রাত্রি প্রভাতে আর কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবো না। পরকালে তুমি আমাকে যে শাস্তি হয় দিও।
ফেরাউন যখন আল্লাহ পাকের দরবারে এরূপ ক্রন্দন করছিল ৷ ঠিক তখন ঐ একটি লোক এসে গুহার দরজায় দাঁড়িয়ে ফেরাউন কে বলল ,জাহাঁপনা আমি আপনার নিকট লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছি, আপনি আমার অভিযোগটি শুনে ন্যায্য বিচার করে দিন ,লোকটির কথা শুনে ফেরাউন বলল বাপু এটাতো বিচারের স্থান নয় ,এখানে কেন এসেছ ? কে তোমাকে আসতে বলেছে এখানে অভিযোগ নিয়ে? তুমি এখন যাও আগামীকল্য দরবারে গিয়ে অভিযোগ কর ৷ আমি তা ভালভাবে শুনে বিচার করে দিব ৷ কিন্তু লোকটি বলল না আমি বিচার না শুনে কিছুতেই এখন থেকে যাব না ৷ আর আপনাকেও এখান হতে বের হতে দিবোনা ৷ আপনি যাই বলুন না কেন আপনাকে এখনো বিচার করতে হবে ৷ এ সময় ফেরাউন নীলনদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখল যে তা পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে ৷ এই দৃশ্য দেখে সে অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বাইরে যাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ল ৷ এবং আগন্তুক লোকটিকে লক্ষ্য করে বললো, আগুন্তক এবার বলো দেখি তোমার অভিযোগটি কি শুনি ? লোকটি বলল জাহাপনা আমার অভিযোগটি আপনার নিকট পেশ করবার পূর্বে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি ,আপনি এর সঠিক জবাব দিবেন , ধরুন একটি গোলাম তার প্রভুর সম্পূর্ণ অবাধ্য , এতদসত্ত্বেও তার প্রভু তার সাথে সর্বদা উত্তম আচরণ করে , তাকে উত্তম ভরণপোষণ দেয় , তা সত্য গোলাম তার মনিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে বরাবরের মতোই অকৃতজ্ঞ পরিচয় দেয় , এখন এই অকৃতজ্ঞ গোলামের সাথে ওই মনিবের কিরূপ আচরণ করা উচিত, ফেরাউন বলল এরূপ গোলামকে নীল নদের পানিতে ডুবিয়ে মারা উচিত ৷ আগন্তুক বলল এটা কি মনিবের জন্য সঠিক আচরণ হবে? ফেরাউন বলল নিশ্চয় ৷ আগন্তুক বলল এটা তো আপনি মুখে বলেন কিন্তু কাগজে লিখে দিতে পারবেন কি? ফেরাউন বলল পারব না ৷ এখানে যদি আমার নিকট কাগজ-কলম থাকত তবে এখনই লিখে দিতাম ৷ আগন্তুক কলম বের করে দিয়ে বলল তবে লিখেই দেন ৷ তখন ফেরাউন লিখে দিল যে কোন অকৃতজ্ঞ গোলাম যাকে তার মনির উত্তম ভরণপোষণও আরো বহু কিছু দেয়া সত্ত্বেও তাঁর অবাধ্য হয়ে যায় তাকে নীল নদের পানিতে ডুবিয়ে মারা উচিত ৷ এ কথা লিখে নিচে তার নামটিও স্বাক্ষর করে কাগজ খানি আগন্তুক-এর হস্তে অর্পণ করল ৷ তৎক্ষণাৎ আগন্তুক লোকটি এটা নিয়ে চলে গেল ৷ এই আগন্তুক আর কেউ নয় এই ছিল আল্লাহ হযরত জিবরাঈল আঃ সালাম ৷ ফেরাউন এক অদৃশ্য আওয়াজ শুনলে হে ফেরাউন আজ থেকে নীল নদ কে তোমার সম্পূর্ণ অধীন করে দেয়া হল ৷ তুমি যখনি প্রবাহিত হতে বলবে তখনই প্রবাহিত হবে আর যখনই প্রবাহিত হতে নিষেধ করবে তখন হয়ে যাবে
এই দৈববাণী শুনে ফেরাউন আনন্দে অধীর হয়ে কূপ থেকে উঠে রাজধানীর দিকে ঘোড়া ছুটিয়ে দিলেন। রাত্রি প্রভাত হতে না হতেই প্রজারা প্রসাদের সমুখে এসে সমবেত হতে লাগলো। ফেরাউন তাদের সঙ্গে নিয়ে নীলনদের কাছে এসে হাজির হলেনঃ চিৎকার করে বললেনঃ নীলনদ পানিতে পূর্ণ হয়ে থাকো।
কথা শেষ হতে না হতে শুষ্খ নদীর তটভূমি জোয়ারের পানিতে ভরে উঠলো। দিগন্ত বিস্তৃত শস্যক্ষেত্র পানিতে পরিপ্লুত হয়ে গেলো।
প্রজারা ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ করলোঃ জাঁহাপনা জমি জমা ডুবে গিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে যাবার মতো হলো। হুজুর আমাদের জমির পানি একটু কমিয়ে দেবার ব্যবস্থা করুন।
ফেরাউন তাদের প্রার্থনা মতো নীলনদকে আদেশ করলেন। পানি সরে গেলো প্রজারা খুশী হয়ে তাকে খোদা বলে বিশ্বাস করে নিলো। এরা কপতী শ্রেণীর লোক। কিন্তু বনি ইসরাইল নামে অপর এক শ্রেণীর লোক ছিল, তারা তাকে কোনক্রমেই খোদা বলে স্বীকার করলো না। কিন্তু ফেরাউন নানা অসম্ভব ও আশ্চর্য কাজ করে প্রজাদের মনে দিনে দিনে বিশ্বাস জন্মিয়ে দিতে লাগলেন যে, তিনিই প্রকৃত খোদা।
* ফেরাউনকে বলল তোর রক্ষা নাই তবে তোর দেহ হেফাজত করা হবে
"বনী ইসরাইলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী, অত:পর তাদের পশ্চাদ্ভাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্ধেশ্যে, এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করলো, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি কোন মাবুদ নেই তিনি ছাড়া যার ইবাদত করে বনী ইসরাঈলরা। অতএব আজকের দিনে রক্ষা করছি আমি তোমার দেহকে যাতে তা তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। নি:শন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।" (সূরা ইউনুস:৯২)।
* দীঘ ৩১১৬ বছর পানির নীচে থাকা সত্ত্বেও ফেরাউনের লাশ পচে নি / যা আল্লাহ কুরানে সুরা ইউনুস ১৪০০ বসর আগে বলে দিয়েছে/ আর এই লাশ উপর গবেশনা করে কুরানের আয়াত সত্য প্রমান পেয়ে ইসলাম গ্রহন করেন ড. মরিস বুকাইলি।
* এক ইহুদী নবীজিকে ঋন দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই ঋন চেয়ে নবীর মেজাজ পরিক্ষা করেন
যে ইহুদি নবীজীকে ঋণ দেন
একজন সাহাবীর প্রয়োজন মেটানোর জন্য নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ইহুদির কাছ থেকে ঋণ নেন। ঋণ গ্রহণের সময় বিধান হলো ঋণ ফেরতের তারিখ নির্ধারণ করা। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহুদিকে একটি তারিখ বলেন, যে তারিখে তিনি ঋণ ফেরত দিবেন
একদিন নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে নিয়ে একটি জানাজা থেকে ফিরছেন। তার সাথে ছিলেন আবু বকর, উমরের (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) মতো মহান সাহাবী।
ঠিক সেই সময় ওই ইহুদি লোকটি নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গলার চাদরে ধরে রাগতস্বরে, অভদ্র ভাষায় বললো- ‘ও মুহাম্মদ! আমার কাছ থেকে যে ঋণ নিয়েছিলে, সেই অর্থ কোথায়? আমি তো তোমার পরিবারকে চিনি। ঋণ নিলে তোমাদের আর কোনো খবর থাকে না!’নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান। তার কথায় সাহাবীরা নিজেদের জীবন দিয়ে দিতে পারেন। তিনি যদি সাহাবীদেরকে একটু ইশারা দেন, তাহলে সাহাবীরা তার (ইহুদি) গর্দান উড়িয়ে ফেলবেন। তাকে সবার সামনে এত বড়ো অপমান করা হলো? অথচ ঋণ পরিশোধের যে তারিখ ধার্য করা হয়েছিল, সেটা এখনো বাকি আছে। সময়ের আগেই সুন্দরভাবে না চেয়ে এভাবে অভদ্র ভাষায় দাবি করতে হবে?
উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সহ্য করতে পারলেন না। তিনি তার স্বভাবজাত সেই বিখ্যাত উক্তিটি বললেন- ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি অনুমতি দিন, তার গলা থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলি?’
নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক্ষেত্রে যেমন ক্ষমতা ছিল, তেমনি তিনি ন্যায় ছিলেন (কারণ, ঋণ পরিশোধের সময়ের পূর্বেই ইহুদি লোকটি তার চাদর ধরে অপমান করেছে)। ইহুদির অমার্জিত আচরণকে তিনি শাস্তি দিতে পারেন। ইহুদিরা তাকে নবী বলে স্বীকৃতি না দিক, তারা তাকে রাষ্ট্রপ্রধান, চিফ জাস্টিস হিসেবে তো স্বীকৃতি দেয় (মদিনা সনদের আলোকে)। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহুদিকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেবার অধিকার রাখেন।
কিন্তু তিনি উল্টো উমর ইবনুল খাত্তাবকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন: ‘উমর, তোমার কাছ থেকে তো উত্তম ব্যবহার আশা করা যায়। তুমি এভাবে না বলে বরং আমাকে বলতে পারতে- ‘আপনি তার ঋণ পরিশোধ করুন’। কিংবা তাকে বলতে পারতে- আপনি সুন্দরভাবে ঋণের কথা বলতে পারতেন।’অসুন্দরের জবাব সুন্দর দ্বারা, অনুত্তমের জবাব কিভাবে উত্তম দ্বারা দিতে হয় সেটা নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)সহ উপস্থিত সাহাবীদেরকে শেখালেন।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমরকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নির্দেশ দিলেন- ‘উমর, যাও তার সাথে এবং তাকে তার ঋণ পরিশোধের পর আরো বিশ সা’ (৩২ কেজি) খেজুর দিও। কারণ, তুমি তাকে ভয় দেখিয়েছো।’
উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইহুদিকে সাথে নিয়ে গেলেন। তাকে তার প্রাপ্য ঋণ প্রদান করলেন এবং সাথে আরো ৩২ কেজির মতো খেজুর দিলেন। ইহুদি তো অবাক! সে একে তো সময়ের আগেই পাওনা দাবি করেছে, তার উপর সবার সামনে নবীজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপমান করেছে; তবুও নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে পাওনা দিয়ে দিলেন, সাথে দিচ্ছেন আরো ৩২ কেজি খেজুর!?
সে জিজ্ঞেস করলো, ‘অতিরিক্ত এগুলো কেন?’
উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘কারণ আমি তোমাকে হুমকি দিয়েছি। সেটার কাফফারা হিশেবে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলো দিতে বললেন।’
এটা শুনে ইহুদি বললো, ‘উমর, তুমি কি জানো আমি কে?’
উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘না, আমি জানি না। তুমি কে?’
ইহুদি বললো, ‘আমি যায়িদ ইবনে সু’নাহ।’
তার নাম শুনে উমরের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) চক্ষু চড়কগাছ! যায়িদ ইবনে সু’নাহ? মদিনার সেই বিখ্যাত ইহুদি রাবাই (ইহুদিদের আলেম)? উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তার নাম জানতেন, কিন্তু তিনিই যে ওই ব্যক্তি, সেটা তিনি জানতেন না।
যায়িদ ইবনে সু’নাহ বললেন, ‘হ্যাঁ’ আমিই সেই ইহুদি রাবাই। আমাদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবী হবার প্রমাণের যত ভবিষ্যৎবাণী পাওয়া যায়, সবগুলোই আমি তার মধ্যে পেয়েছি। শুধু দুটো বিষয় পরীক্ষা করা বাকি ছিলো।’
সেই দুটো ছিলো:
তাকে কেউ রাগালে তিনি সহনশীলতা দেখাবেন।
কোনো মূর্খ তার কাছে এসে মূর্খের মতো আচরণ করলে তিনি বরং সেই মূর্খের সাথে ভালো আচরণ করবেন। অর্থাৎ তিনি মন্দের জবাব ভালোর মাধ্যমে দিবেন, অনুত্তমের জবাব উত্তমের মাধ্যমে।
যায়িদ ইবনে সু’নাহ নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মধ্যে সেই দুটো গুণও এবার দেখতে পান। তিনি নবীজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাগানো সত্ত্বেও নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথে রাগ করেননি; উল্টো তার পাওনা অর্থের বেশি তাকে দিয়েছেন।
এবার যায়িদ ইবনে সু’নাহ বললেন: ‘ও উমর, তুমি সাক্ষী থাকো- আমি আল্লাহকে আমার রব হিসেবে, ইসলামকে আমার ধর্ম হিসেবে এবং মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নবী হিসেবে মেনে নিলাম। আমার অনেক সম্পদ আছে। আমি আমার অর্ধেক সম্পদ ইসলামের তরে দান করে দিলাম।’
তথ্যসূত্র : সহীহ ইবনে হিব্বান : ২৮৮, আল-বায়হাকী : ১১০৬৬, মুস্তাদারক হাকিম : ৬৫৪৭। ইমাম হাকিম (রাহিমাহুল্লাহ) হাদিসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।
No comments