69/184 - আমানতের খিয়ানত করা
* আমানতসমুহ তাদের (যথার্থ) মালিকের কাছে সোপর্দ করো,ফায়সালা করার সময়,আদল ও ন্যায়নীতি সহকারে ফায়সালা করো,৪: আন-নিসা:৫৮
اِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُكُمْ اَنْ تُؤَدُّوا الْاَمٰنٰتِ اِلٰۤى اَهْلِهَاۙ وَ اِذَا حَكَمْتُمْ بَیْنَ النَّاسِ اَنْ تَحْكُمُوْا بِالْعَدْلِؕ اِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا یَعِظُكُمْ بِهٖؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ سَمِیْعًۢا بَصِیْرًا
* মানুষের উপর বিপদ তখনই আসে,জনগণের সম্পদ যখন লুন্ঠন হবে, যখন আমানতের মাল লুটের মালে পরিণত হবে,তখন তোমরা অগ্নিবায়ু, ভূমিধস, ভূমিকম্প, চেহারা বিকৃতি ও পাথর বর্ষণরূপ শাস্তির এবং আরো আলামতের অপেক্ষা করবে যা একের পর এক নিপতিত হতে থাকবে, যেমন পুরানো পুঁতিরমালা ছিড়ে গেলে একের পর এক তার পুঁতি ঝরে পড়তে থাকে।জামে' আত-তিরমিজি-২২১১:দুর্বল হাদিস
وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا وَتُعُلِّمَ لِغَيْرِ الدِّينِ وَأَطَاعَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ وَعَقَّ أُمَّهُ وَأَدْنَى صَدِيقَهُ
* একজন মানুষ তখনই ভালো মানুষ হিসেবে চিহ্নিত হবে, যখন তার মধ্যে আমানতকারী থাকবে,২৮:আল-ক্বাসাস:২৬
قَالَتْ اِحْدٰىهُمَا یٰۤاَبَتِ اسْتَاْجِرْهُ٘ اِنَّ خَیْرَ مَنِ اسْتَاْجَرْتَ الْقَوِیُّ الْاَمِیْنُ
* সমস্ত নবীগন আমানতদার ছিলেন,২৬: আশ-শুআরা:১০৬
اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوْهُمْ نُوْحٌ اَلَا تَتَّقُوْنَۚ
اِنِّیْ لَكُمْ رَسُوْلٌ اَمِیْنٌۙ
فَاتَّقُوا اللّٰهَ وَ اَطِیْعُوْنِۚ
* প্রকৃত আমানতদারদের আল্লাহপাক সুসংবাদ দিয়েছেন,চারটি গুনের অধিকারী মানুষ,সম্মানের সাথে জান্নাতের বাগানসমূহে অবস্থান করবে। ৭০:-মাআরিজ:৩২
وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِاَمٰنٰتِهِمْ وَ عَهْدِهِمْ رٰعُوْنَ
وَ الَّذِیْنَ هُمْ بِشَهٰدٰتِهِمْ قَآئِمُوْنَ
أُولَٰئِكَ فِیْ جَنّٰتٍ مُّكْرَمُوْنَ
* যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে সতর্ক থাকে তারাই প্রকৃত জান্নাতের অধিকারী ২৩: আল-মু’মিনূন: ৮
وَ الَّذِیْنَ هُمْ لِاَمٰنٰتِهِمْ وَ عَهْدِهِمْ رٰعُوْنَۙ
أُولَٰئِكَ هُمُ الْوٰرِثُوْنَۙ
* আবু জাহেল ছিল আমানতের খিয়ানতকারী,১০৭: আল-মাউন:২
فَذٰلِكَ الَّذِیْ یَدُعُّ الْیَتِیْمَۙ
কাজী আবুল হাসান আল মাওয়ারদী তাঁর “আলামূন নুবুওয়াহ” কিতাবে একটি অদ্ভূত ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ঘটনাটি হচ্ছেঃ আবু জেহেল ছিল একটি এতিম ছেলের অভিভাবক
* শ্রেষ্টতম আমানতদার ছিলেন মুহাম্মদ সা, হিজরতের সময় নবীজি আমানতের মাল হযরত আলী রা,কে বুঝিয়ে দিয়েছেন
* মুনাফিক দের স্থান জাহান্নামের কোন যায়গায় হবে,৪: আন-নিসা:১৪৫
اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ فِی الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِۚ وَ لَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِیْرًاۙ
___________
* আবু জাহেল ছিল আমানতের খিয়ানতকারী,কাজী আবুল হাসান আল মাওয়ারদী তাঁর “আলামূন নুবুওয়াহ” কিতাবে একটি অদ্ভূত ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ঘটনাটি হচ্ছেঃ আবু জেহেল ছিল একটি এতিম ছেলের অভিভাবক। ছেলেটি একদিন তার কাছে এলো। তার গায়ে এক টুকরা কাপড়ও ছিল না। সে কাকুতি মিনতি করে তার বাপের পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তাকে কিছু দিতে বললো। কিন্তু জালেম আবু জেহেল তার কথায় কানই দিল না। সে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর শেষে নিরাশ হয়ে ফিরে গেলো। কুরাইশ সরদাররা দুষ্টুমি করে বললো, “যা মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে চলে যা। সেখানে গিয়ে তাঁর কাছে নালিশ কর। সে আবু জেহেলের কাছে সুপারিশ করে তোর সম্পদ তোকে দেবার ব্যবস্থা করবে।” ছেলেটি জানতো না আবু জেহেলের সাথে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কি সম্পর্ক এবং এ শয়তানরা তাকে কেন এ পরামর্শ দিচ্ছে। সে সোজা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছে গেলো এবং নিজের অবস্থা তাঁর কাছে বর্ণনা করলো। তার ঘটনা শুনে নবী (সা.) তখনই দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে নিজের নিকৃষ্টতম শত্রু আবু জেহেলের কাছে চলে গেলেন। তাঁকে দেখে আবু জেহেল তাঁকে অভ্যর্থনা জানালো। তারপর যখন তিনি বললেন, এ ছেলেটির হক একে ফিরিয়ে দাও তখন সে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর কথা মেনে নিল এবং তার ধন-সম্পদ এনে তার সামনে রেখে দিল। ঘটনার পরিণতি কি হয় এবং পানি কোন দিকে গড়ায় তা দেখার জন্য কুরাইশ সরদাররা ওঁৎ পেতে বসেছিল। তারা আশা করছিল দু’ জনের মধ্যে বেশ একটা মজার কলহ জমে উঠবে। কিন্তু এ অবস্থা দেখে তারা অবাক হয়ে গেলো। তারা আবু জেহেলের কাছে এসে তাকে ধিক্কার দিতে লাগলো। তাকে বলতে লাগলো, তুমিও নিজের ধর্ম ত্যাগ করেছো। আবু জেহেল জবাব দিল, আল্লাহর কসম! আমি নিজের ধর্ম ত্যাগ করিনি। কিন্তু আমি অনুভব করলাম, মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডাইনে ও বাঁয়ে এক একটি অস্ত্র রয়েছে। আমি তার ইচ্ছার সামান্যতম বিরুদ্ধাচরণ করলে সেগুলো সোজা আমার শরীরের মধ্যে ঢুকে যাবে। এ ঘটনাটি থেকে শুধু এতটুকুই জানা যায় না যে, সে যুগে আরবের সবচেয়ে বেশী উন্নত ও মর্যাদা গোত্রের বড় বড় সরদাররা পর্যন্ত এতিম ও সহায়-সম্বলহীন লোকদের সাথে কেমন ব্যবহার করতো বরং এই সঙ্গে একথাও জানা যায় যে, রসূলুল্লাহ ﷺ কত উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ছিলেন এবং তাঁর নিকৃষ্টতম শত্রুদের ওপরও তাঁর এ চারিত্রিক প্রভাব কতটুকু কার্যকর হয়েছিল।
* শ্রেষ্টতম আমানতদার ছিলেন মুহাম্মদ সা, হিজরতের সময় নবীজি আমানতের মাল হযরত আলী রা,কে বুঝিয়ে দিয়েছেন,আমানত রক্ষা করা,কাফিরগণ যখন আমাদের নূর নবীর উপর অকথ্য অত্যাচার উৎপীড়নে তৎপর, এমন কি শত্রুগণ যখন তাঁহাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তখন সতরজন বিশিষ্ট পাহলোয়ান তরবারি হস্তে তাঁহার গৃহ পরিবেষ্টন করিয়া রাখিয়াছিল। আল্লাহর অপার মহিমা! ঐ রাত্রেই আল্লাহ তায়ালার হুকুম হইল- মক্কা হইতে মদীনায় হিজরত করিতে। তিনি আল্লাহর হুকুম পালনে বিলম্ব করিলেন না, করিতেও পারেন না। কাফিরদের অনেক টাকা-পয়সা তাঁহার নিকট আমানত ছিল। তিনি বালক আলীকে বলিলেন, প্রিয় বৎস! এই রাত্রে আমার বিছানায় শুইয়া থাকিবে। প্রাতে যাহার যে আমানত আছে, তাহা তাঁহাকে দিয়া দিবে। পারিবে তো? হযরত আলী নির্ভীক চিত্তে বলিলেন, আল্লাহ চাহেন ত পারিব।
হযরত আলী (রাঃ) হযরতের বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়া শুইয়া পড়িলেন। এইদিকে হযরত (সাঃ) শত্রুর বেড়াজাল ভেদ করিয়া গৃহ হইতে বাহির হইয়া গেলেন। তাঁহারা বিন্দুমাত্রও টের পাইল না। প্রত্যুষে কাফির দল গৃহে প্রবেশ করিয়া ফেলে। তাহারা চাদর আবৃত আলী (রাঃ) কে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মনে করিয়া কেহ কেহ বলিল, এক কোপেই শেষ করিয়া ফেল। কেহ কেহ বাধা দিয়া বলিল, না না, নিদ্রাবস্থায় হত্যা করা কাপুরুষতার পরিচায়ক। এরূপ বলাবলি করিতে করিতে একজন চাদর টান দিয়া দেখিল, এ তো তাহাদের শিকার (হযরত) মুহাম্মদ (সাঃ) নয়, এ যে আলী শুইয়া আছে! তাঁহারা বিস্মিত হইল। হযরত আলী দেখাইলেন, গচ্ছিত দ্রব্যসমূহ ফেরত দিবার জন্য, আমানতের হেফাযতের জন্য তিনি প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। ইহাকেই বলে আমানতদারী, ইহার নাম বিশ্বস্ততা।
উৎসঃ বেহেস্তি যেওর, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ)
No comments