Header Ads

Header ADS

149 তাওবা ও ইসতিগফার

  149 তাওবা ও ইসতিগফার




قُلۡ يٰعِبَادِىَ الَّذِيۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰٓى اَنۡفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَةِ اللّٰهِ‌ؕ اِنَّ اللّٰهَ يَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِيۡعًا‌ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِيۡمُ﴾




 




৫৩.) (হে নবী,) বলে দাও, হে আমার বান্দারা৭০ যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ‌ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।৭১




মনে রাখা দরকার, তওবা তিনটি জিনিসকে শামিল করে:


• গুনাহ থেকে ফিরে আসা।


• গুনার কাজের জন্য অনুশোচনা।


• কৃতগুনাহের দিকে ভবিষ্যতে ফিরে না যাওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত।


যখন মুসলিম সত্যিকারার্থে তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন, তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন, তার মন্দ কাজগুলো মিটিয়ে দেন তিনি বলেন :


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ


"হে মুমিনগণ! তোমরা খালেসভাবে আল্লাহর কাছে তওবা কর সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।" সূরা আত তাহরীম: ৮




* #কেমন_দয়ার_মালিক_আল্লাহ...!!




প্রিয় নবী (সাঃ) এর একজন সাহাবী ছিলেন। নাম তার সালাবাতুল আনসারী (রাঃ) আনহু। অনেক দিন আগে তার জীবনের একটা ঘটনা শোনেছিলাম। যা আজও আমার হৃদয়কে নাড়া দেয়। যখনই তার সেই ঘটনাটি মনে হয়, তখন নিজের অজান্তেই চোখের পাতাগুলো খানিকটা ঝাপসা হয়ে আসে...!!!




আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তার জীবনের সেই ঘটনাটি "আল্লাহ"-ভিরু সকল মুমিন-মুসলমানের হৃদয়কেও স্পর্ষ করবে। তাই সকল ঈমানদারদের খেদমতে ঘটনাটি শেয়ার করলাম....




হযরত সালাবাতুল আনসারীর সাথে প্রিয় নবীর আরেক সাহাবী হযরত আবদুর রহমান (রাঃ) আনহুর খুব বন্ধুত্ব ছিলো। তো হযরত আবদুর রহমান একবার জিহাদে যাওয়ার জন্য মনস্থির করলেন। তাই, স্ত্রীর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে, বন্ধু সালাবাতুল আনসারীকে তার বাড়ীতে রেখে গেলেন। কিন্তু হযরত সালাবাতুল আনসারী শয়তানের প্ররোচনার স্বীকার হলেন। 


অর্থাৎ বন্ধুর স্ত্রীকে একা পেয়ে তার হাত চেপে ধরলেন, নিজের মন্দ খায়েশ পূরণের উদ্দেশ্যে...!!!




তখন আবদুর রহমানের স্ত্রী তাকে বললেন, আপনার বন্ধু আমাকে আপনার কাছে আমানত রেখে গেছেন। সুতরাং আমানতের খিয়ানত করবেন না। এবং "আল্লাহকে" ভয় করুন...!!!




তখন "আল্লাহর" ভয়ের কথা শোনার পর, তার মন্দ খেয়াল ছুটে গেলো। এবং তিনি লজ্জিত হয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে গেলেন। নিজের এই মন্দ কাজের কথা তিনি পর্যায়ক্রমে হযরত আলী (রাঃ), হযরত ওমর (রাঃ) এবং হযরত আবুবক্কর (রাঃ) আনহুর কাছে খুলে বললেন। এবং জানতে চাইলেন "আল্লাহ" তাকে মাফ করবেন কিনা..? কিন্তু ঘটনা শুনে, তারা তিনজনই তাকে তাড়িয়ে দিলেন।




অবশেষে, প্রিয় নবী (সাঃ) এর কাছে গেলেন, এবং তার ঘটনাটি খুলে বললেন। এবং জানতে চাইলেন "আল্লাহ" তার এই অন্যায়কে ক্ষমা করবেন কিনা। কিন্তুু ঘটনা শোনে প্রিয় নবীও খুব রাগান্বিত হয়ে তাকে তাড়িয়ে দিলেন...!!!




সবার কাছ থেকে লান্ছিত হয়ে, হতাশ মন নিয়ে "আল্লাহর" বান্দা গহীন জঙ্গলে পাহারের গুহায় গিয়ে আশ্রয় নিলেন।এবং"আল্লাহর" দরবারে অনেক কান্না-কাটি করলেন। নিজের গুনাহের কথা স্মরণ করে তওবা করলেন...!!!


"আল্লাহ'তায়ালা" তার তওবাকে কবুল করলেন। এবং হযরত জীবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে ওহী নাজিল করে, প্রিয় নবীকে জানিয়ে দিলেন, 


আপনি কেনো আমার গোলামকে নিরাশ করে তাড়িয়ে দিলেন..!?




"সুবহানআল্লাহ"।....কেমন দয়ার মালিক "আল্লাহ"..!!! 




দুনিয়ার সর্বোত্তম এবং শ্রেষ্ঠ মানুষগুলো সালাবাতুল আনসারীর অন্যায়ের কথা শোনে, রাগান্বিত হলেন। এবং তাকে নিরাশ করে তাড়িয়ে দিলেন....!


কিন্তুু পরম-করুনাময়, অসীম-দয়ালু "আল্লাহ" তার গোলামকে মাফ করে ওহী নাজিল করে দিলেন....!!




★দুনিয়ার সবাই আপনাকে ফিড়িয়ে দিলেও, 


অসীম-দয়ালু "আল্লাহ" আমাকে/আপনাকে কখোনই ফিড়িয়ে দিবেন না...


আমার/আপনার গুনাহগুলো যদি সমুদ্রের ফেনা পরিমাণও হয়...!!




حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي الصِّدِّيقِ النَّاجِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ كَانَ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ رَجُلٌ قَتَلَ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ إِنْسَانًا ثُمَّ خَرَجَ يَسْأَلُ، فَأَتَى رَاهِبًا فَسَأَلَهُ، فَقَالَ لَهُ هَلْ مِنْ تَوْبَةٍ قَالَ لاَ‏.‏ فَقَتَلَهُ، فَجَعَلَ يَسْأَلُ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ ائْتِ قَرْيَةَ كَذَا وَكَذَا‏.‏ فَأَدْرَكَهُ الْمَوْتُ فَنَاءَ بِصَدْرِهِ نَحْوَهَا، فَاخْتَصَمَتْ فِيهِ مَلاَئِكَةُ الرَّحْمَةِ وَمَلاَئِكَةُ الْعَذَابِ، فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَى هَذِهِ أَنْ تَقَرَّبِي‏.‏ وَأَوْحَى اللَّهُ إِلَى هَذِهِ أَنْ تَبَاعَدِي‏.‏ وَقَالَ قِيسُوا مَا بَيْنَهُمَا‏.‏ فَوُجِدَ إِلَى هَذِهِ أَقْرَبُ بِشِبْرٍ، فَغُفِرَ لَهُ ‏"‏‏.‏




আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)




নবী‎ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বনী ইসরাঈলের মাঝে এমন এক ব্যক্তি ছিল যে, নিরানব্বইটি মানুষ হত্যা করেছিল। অতঃপর বের হয়ে একজন পাদরীকে জিজ্ঞেস করল, আমার তওবা কবুল হবার আশা আছে কি? পাদরী বলল, না। তখন সে পাদরীকেও হত্যা করল। অতঃপর পুনরায় সে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল। তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সে রওয়ানা হল এবং পথিমধ্যে তার মৃত্যু এসে গেল। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমত ও আযাবের ফেরেশতামন্ডলী তার রূহকে নিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত হলেন। আল্লাহ্‌ সামনের ভূমিকে আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও। এবং পশ্চাতে ফেলে স্থানকে (যেখানে হত্যাকান্ড ঘটেছিল) আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর ফেরেশতাদের উভয় দলকে নির্দেশ দিলেন- তোমারা এখান থেকে উভয় দিকের দূরত্ব পরিমাপ কর। পরিমাপ করা হল, দেখা গেল যে, মৃত লোকটি সামনের দিকে এক বিঘত বেশি এগিয়ে আছে। কাজেই তাকে ক্ষমা করা হল।




সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৪৭০


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস




* হামজা (রা.) ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পিতৃব্য। তিনি তৃতীয় হিজরি সনের ১৫ শাবান শনিবার অহুদে শহীদ হন। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার নাক-কান কেটে নেয়া হয়। এমনকি তার বুক চিরে কলিজা বের করে চিবানো হয়। বতনে ওয়াদিতে প্রিয় চাচার ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ দেখে তিনি সীমাহীন কষ্টে কেঁদেছিলেন। এ অবস্থায় প্রিয় নবী (সা.) এর সান্ত্বনার জন্য আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে জিবরাঈল (আ.) কে পাঠান। তিনি এসে বলেন, হে রাসুল! (আপনার সান্ত্বনার জন্য) আল্লাহ তায়ালা আপনার প্রিয় পিতৃব্যের নাম আসমানে লিখে দিয়েছেন। সেখানে লেখা হয়েছে, 'হামজা হলো আল্লাহ এবং তার রাসুলের সিংহ'। (ফাতহুল বারী ৭/৩৭১)। এতে নবীজি (সা.) এর মনোকষ্ট প্রশমিত হয়। তিনি সত্তরবার প্রিয় পিতৃব্যের জানাজার নামাজ পড়েছেন। (আওনুল মাবুদ ২০/৪০, আল আরফুশশারজী ২/৪২৪)।




রাসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রিয় চাচার ঘাতকের নাম ওয়াহশি ইবনে হারব। ইসলাম গ্রহণের আগে তার হাতেই হজরত হামজা (রা.) নিহত হন। ওয়াহশি জাহিলি যুগে কৃতদাস ছিলেন। অহুদে তার মনিব হজরত হামজা (রা) কে হত্যার শর্তে তাকে মুক্তির আশ্বাস দেয়। মুক্তির নেশাই মূলত তাকে হজরত হামজা (রা.) কে হত্যা করতে প্ররোচিত করে। তাতে হত্যার পর শর্ত অনুযায়ী ওয়াহশি মুক্তি পান এবং পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থান করতে শুরু করেন। মক্কা বিজয়ের পর তিনি তায়েফ চলে যান। একসময় ইসলাম গ্রহণের জন্য তায়েফের জনগণ দল বেঁধে প্রিয় নবী (সা.) দরবারে হাজির হয়। তখন তিনি নিজের বসবাসের জায়গা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তার নিজের ভাষায়, 'প্রশস্ত পৃথিবীটা আমার জন্য তখন সংকীর্ণ হয়ে ওঠে।' একটু স্থিতির আশায় তিনি শাম ইয়ামেনসহ বিভিন্ন শহরে সফর করতে থাকেন। তার মনে এ ধারণা বাসা বাঁধে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে ধৃত হলেই মৃত্যুদ- অবধারিত। তাই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে তিনি হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন। এরই মধ্যে এক লোকের সঙ্গে তার দেখা হয়। একপর্যায়ে নিজের ধারণার কথা প্রকাশ করলে ওই ব্যক্তি বলে, ইসলাম গ্রহণ করলে মুহাম্মদ (সা.) কাউকে আগের অপরাধের কারণে মৃত্যুদ- প্রদান করেন না। এ কথায় ওয়াহশি কিছুটা আশান্বিত হন। (উসদুল গাবাহ : ৩/১০৩)।




হামজা (রা.) ছিলেন নবীজি (সা.) এর সবচেয়ে প্রিয় পিতৃব্য। একটি 'মারফু' বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'আমার সবচেয়ে প্রিয় পিতৃব্য হলেন হামজা (রা.)।' (উসদুল গাবাহ ১/১৫১, তারিখে দিমাস্ক ৬৪/১২১)। তিনি নবীজির দুধভাইও ছিলেন। (নাইলুল আওতার ১২/১৭০, শরহে ইনবে বাত্তাল ১৪/১৩, শরহে নববি ১/৯)। তার বিয়োগে তিনি সীমাহীন ব্যথিত হন। তবু তিনি ওয়াহশিকে ইসলাম গ্রহণের প্রতি আহ্বান জানান। দাওয়াত পেয়ে ওয়াহশি বলে পাঠালেন, হে মুহাম্মদ! আপনি আমাকে কীভাবে ইসলামের দাওয়াত প্রদান করছেন? অথচ আপনি নিজেই বলেন, 'যে মানুষ হত্যা করে, শিরক করে অথবা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, সে দোজখে নিক্ষিপ্ত হবে, কেয়ামতের দিন তার আজাব দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল থাকবে।' আর আমি তো এসব কর্ম করেছি। আমার শাস্তি থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ আপনার জানা আছে কি? তখন আয়াত নাজিল হয়, 




اِلَّا مَنۡ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓٮِٕكَ يَدۡخُلُوۡنَ الۡجَنَّةَ وَلَا يُظۡلَمُوۡنَ شَيۡـًٔاۙ‏﴾




৬০.) তবে যারা তাওবা করবে, ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের সামান্যতম অধিকারও ক্ষুণ্ন হবে না।




'তবে যারা তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, সে (প্রকৃত) প্রত্যাবর্তনস্থল আল্লাহর দিকে ফিরে আসে (তারা ক্ষমার যোগ্য)।' (সূরা মরিয়ম : ৬০)।




এ আয়াত শুনে ওয়াহশি বললেন, হে মুহাম্মদ! তওবা, ঈমান ও নেক আমলের এ শর্ত তো বড়ই কঠিন। হয়তো আমি তা যথাযথভাবে পালনে সক্ষম হবো না। তাহলে আমার করণীয় কী? তার এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে নাজিল করেন, '




اِنَّ اللّٰهَ لَا يَغۡفِرُ اَنۡ يُّشۡرَكَ بِهٖ وَيَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِكَ لِمَنۡ يَّشَآءُ‌ۚ وَمَنۡ يُّشۡرِكۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤى اِثۡمًا عَظِيۡمًا‏﴾




 




৪৮.) আল্লাহ অবশ্যই শিরককে মাফ করেন না।৭৯ এছাড়া অন্যান্য যত গোনাহর হোক না কেন তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন।৮০যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক করেছে সেতো এক বিরাট মিথ্যা রচনা করেছে এবং কঠিন গোনাহের কাজ করেছে




নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তার সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।' (সূরা নিসা : ৪৮)।




এ আয়াত শুনে ওয়াহশি বললেন, হে মুহাম্মদ! মাফ পাওয়া তো আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার ওপর মওকুফ রইল। তিনি ক্ষমা করবেন কিনা, তা তো নিশ্চিতভাবে জানা গেল না। এর চেয়ে সহজ আর কিছু আছে কি?




তখন সর্বশেষ নাজিল হয় আরেকটি আয়াত, 'বলুন, হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' (জুমার : ৫৩, হায়াতুস সাহাবা ১/৪১)।




একজন বিশেষ দূত পাঠিয়ে নবীজি (সা.) তাকে এ সুসংবাদ পাঠান। সান্ত্বনার বাণী শোনার পর ওয়াহশি আপন মুখ ঢেকে নবীজির (সা.) দরবারে হাজির হয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঘোষণা করলেন, 'আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আপনি মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।' তৎক্ষণে উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম তরবারি কোষমুক্ত করে দাঁড়িয়ে তাকে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের থামিয়ে দিয়ে বলেন, তোমরা নিবৃত হও। সে তো কালেমা পড়ে নিয়েছে। সে এখন একজন মুসলিম। হাজার কাফের হত্যার চেয়ে একজন মানুষের ঈমান গ্রহণ আমার কাছে অনেক বেশি প্রিয়। এরপর তিনি আগন্তুককে লক্ষ করে বললেন, তুমিই কি ওয়াইশি? তার জবাব, জি, আমিই ওয়াইশি। নবীজি (সা.) বললেন, আমার সামনে বসো। বলো তো, আমার প্রিয় পিতৃব্যকে তুমি কীভাবে হত্যা করলে? এর পরে হজরত ওয়াহশি (রা.) হত্যার বিবরণ দেন। নবীজি (সা.) সব শুনে তার অপরাধ ক্ষমা করার পর বললেন, শোন! তুমি কখনও আমার সামনে এসো না। হজরত ওয়াহশি (রা.) জীবদ্দশায় আর কখনও নবীজি (সা.) এর সামনে পড়েননি। ইসলামপূর্ব যুগে তার এ কর্ম তাকে সর্বদাই পীড়া দিত। প্রিয় নবী (সা.) এর ওফাতের পর ইমামার বাসিন্দা মুসায়লামা তদানীন্তন রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে বিদ্রোহ করে এবং নবুয়তের অসত্য দাবি করে বসে। রাষ্ট্রপক্ষ বিদ্রোহ দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ওই সৈন্যবাহিনীতে হজরত ওয়াহশি (রা.)ও অংশগ্রহণ করেন। অভিযানের একপর্যায়ে তার হাতেই মুসায়লামা কাজ্জাবের মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়টি স্মরণ করে তিনি নিজেকে প্রবোধ দিতেন।

No comments

Powered by Blogger.