Header Ads

Header ADS

35 রাসুলপ্রেমিক সাহাবি তালহা ইবনে বারা (রা.


* আশেকে রাসূল (সা:) 

রাসুলপ্রেমিক সাহাবি তালহা ইবনে বারা (রা.)

 ‘যখন তার মৃত্যু হয়ে যাবে, তখন আমাকে সংবাদ দেবে। যাতে আমি তার জানাজা পড়াতে আসতে পারি। আর তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা যেন দ্রুত করা হয়। কারণ মুসলমানের মৃত্যুর পর কাফন-দাফনে বিলম্ব অনুচিত।’

মক্কা থেকে রাসুল (সা.) মদিনার উদ্দেশে হিজরত করার পর তাঁর আগমন উপলক্ষে কিছু সংখ্যক সাহাবি প্রতিদিন সকালে মদিনার বাইরে গিয়ে রাসুল (সা.) এর জন্য অপেক্ষা করতেন। সময় দ্বিপ্রহরে পৌঁছলে রাসুল (সা.) এর আগমন বিলম্বিত হওয়ার দরুন ব্যথিত মনোরথে তারা আবার মদিনার ভেতরে ফিরে যেতেন। বিপুল আগ্রহ ও ভীষণ আকাক্সক্ষা নিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যখন রাসুল (সা.) এসে পৌঁছলেন, তখন মদিনাবাসীর আনন্দ ও উল্লাসের আর সীমা থাকে না। ছোট-বড়, প্রৌঢ়-বৃদ্ধ ও গোলাম-বাঁদি সবাই উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। প্রত্যেকের মনে-প্রাণে খুশি ও আনন্দের আমেজ বিরাজ করতে থাকে।

আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যেদিন রাসুল (সা.) মদিনায় আগমন করেন, সেদিন মদিনার প্রতিটি অণুপরমাণুতে অলৌকিক আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়ে। বড়দের সঙ্গে ছোটরাও আনন্দে মেতে উঠেছিল। কিশোরীরা সুর-লহরী দিয়ে গেয়ে ছিল ‘সানিয়াতুল বিদা থেকে আমাদের আকাশে চন্দ্র হয়েছে উদিত; তাই তার প্রতি কৃতজ্ঞতার অর্ঘ্য নিবেদন করা চাই প্রতিনিয়ত।’

রাসুল (সা.) এর আগমনের খবর শুনে মদিনার চারদিক থেকে মানুষ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতে থাকে। সে ছুটে আসা মানুষের মধ্যে আনসারদের একজন যুবক ছিল। তার নাম তালহা ইবনে বারা। মানুষের ভিড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি বারবার রাসুল (সা.) এর শরীরের সঙ্গে লেগে যাচ্ছিলেন। রাসুল (সা.) এর পবিত্র হাত মোবারকে আগ্রহভরে চুমু খেয়ে তালহা ইবনে বারা বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে যে আদেশ করবেন, সে আদেশ আমি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করব।’ নওজোয়ান তালহার চেহারায় আনুগত্যের দীপ্তরেখা দেখে রাসুল (সা.) মুচকি হেসে বলেন, ‘আমি যদি বলি, তাহলে তুমি তোমার বাবা বারাকেও হত্যা করবে?’

তালহা ইবনে বারা এ কথার শোনার সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। অবস্থা দেখে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আরে থামো! আমি তো তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য বলেছি। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে আল্লাহ তায়ালা আমাকে পাঠাননি।’ কিছুদিন পর হজরত তালহা ইবনে বারা ভীষণভাবে রোগক্রান্ত হয়ে পড়লেন। এ সংবাদ শুনে রাসুল (সা.) যখন তাকে দেখতে গেলেন, তখন তার অবস্থা একদম মুমূর্ষু। রাসুল (সা.) তার পরিবারের লোকদের বলেন, ‘যখন তার মৃত্যু হয়ে যাবে, তখন আমাকে সংবাদ দেবে। যাতে আমি তার জানাজা পড়াতে আসতে পারি। আর তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা যেন দ্রুত করা হয়। কারণ মুসলমানের মৃত্যুর পর কাফন-দাফনে বিলম্ব অনুচিত।’

আনসারি সাহাবি হজরত তালহা ইবনে বারার বাড়ি ছিল বনি ওমর ইবনে আউফের তল্লাটে। ওমর ইবনে আউফের মহল্লাটা ছিল মদিনা থেকে তিন মাইল দূরে এবং মসজিদে কুবার কাছে। মদিনা থেকে তার বাড়ির মাঝখানের এ জায়গাটায় ইহুদিদের কয়েকটি বস্তি ছিল। তার মৃত্যু হয়েছিল রাতে। মৃত্যু অত্যাসন্ন দেখে তিনি তার পরিবারের লোকদের বলেন, ‘দেখো, যখন আমার মৃত্যু হয়ে যাবে, তখন তোমরা রাসুল (সা.) কে আমার মৃত্যুর সংবাদ দিও না। কারণ রাত হয়ে এসেছে। পথে ইহুদিদের বস্তি রয়েছে। হতে পারে তারা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দিতে পারে। তাই আমার মৃত্যু হয়ে যাওয়ার পর তোমরা নিজেরাই আমাকে কাফন-দাফন দিয়ে দেবে।’ মৃত্যুর পর হজরত তালহাকে তার পরিবার ও এলাকার লোকজন অসিয়ত অনুযায়ী রাতের আঁধারে দাফন দিয়ে দেয়।

সকালে তার মহল্লার লোকজন রাসুল (সা.) এর দরবারে তার মৃত্যুর খবর দেন এবং তার অসিয়ত অনুযায়ী দাফন করে দেয়ার সংবাদও দেন। হজরত তালহার (রা.) মৃত্যু বিশেষত শয্যাশায়ী হয়েও রাসুল (সা.) এর কষ্ট না হওয়ার জন্য তার চিন্তা রাসুলের মনে নিদারুণভাবে রেখাপাত করেছিল।

রাসুল (সা.) তৎক্ষণাৎ বনি ওমর ইবনে আউফের মহল্লায় গমন করেন এবং হজরত তালহার (রা.) কবরের কাছে যান। রাসুল (সা.) যখন তালহার জন্য দোয়া করতে হাত তোলেন, তখন তাঁর সঙ্গে সমবেত সাহাবায়ে কেরামও সাবিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে হাত তোলেন। রাসুল (সা.) হজরত তালহার জন্য যে দোয়া করেন সে ধরনের দোয়া আর কারও জন্য করেননি। রাসুল (সা.) দোয়ার মধ্যে বলেন, ‘হে আল্লাহ! তোমার সঙ্গে যেন তালহার সাক্ষাৎ এমন হয় যে, তাকে দেখে তুমি হাসবে আর তোমাকে দেখে সে হাসবে।’

No comments

Powered by Blogger.