25/60 অর্থই অনার্থের মূল, হায়রে দুনিয়া দুনিয়া আমাদের শেষ করে দিল। মানুষ কখন আল্লাহকে ভুলে?
যখন দুনিয়ার মুহাব্বত তথা সম্পদে লোভ এসে যায় ৷
কাটাকাটি মারামারি হানাহানি খুন ঘুম রক্তপাত বিবাদ বলতে যত প্রকার বুঝায় সব কিছুই সম্পদের লোভে পরে করে ৷
* এ দেশে হাজার হাজার লোক দুর্নিতি বন্ধ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে আসলে কি দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে ?
*
দুর্নিতি বন্ধের জন্য যা প্রয়োজন,সেটা হচ্ছে তাকওয়া ৷
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى الرَّازِيُّ، أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، عَنْ بَشِيرِ بْنِ الْمُهَاجِرِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ امْرَأَةً، - يَعْنِي مِنْ غَامِدَ - أَتَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ إِنِّي قَدْ فَجَرْتُ . فَقَالَ " ارْجِعِي " . فَرَجَعَتْ فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ أَتَتْهُ فَقَالَتْ لَعَلَّكَ أَنْ تَرُدَّنِي كَمَا رَدَدْتَ مَاعِزَ بْنَ مَالِكٍ فَوَاللَّهِ إِنِّي لَحُبْلَى . فَقَالَ لَهَا " ارْجِعِي " . فَرَجَعَتْ فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ أَتَتْهُ فَقَالَ لَهَا " ارْجِعِي حَتَّى تَلِدِي " . فَرَجَعَتْ فَلَمَّا وَلَدَتْ أَتَتْهُ بِالصَّبِيِّ فَقَالَتْ هَذَا قَدْ وَلَدْتُهُ . فَقَالَ لَهَا " ارْجِعِي فَأَرْضِعِيهِ حَتَّى تَفْطِمِيهِ " . فَجَاءَتْ بِهِ وَقَدْ فَطَمَتْهُ وَفِي يَدِهِ شَىْءٌ يَأْكُلُهُ فَأَمَرَ بِالصَّبِيِّ فَدُفِعَ إِلَى رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَأَمَرَ بِهَا فَحُفِرَ لَهَا وَأَمَرَ بِهَا فَرُجِمَتْ وَكَانَ خَالِدٌ فِيمَنْ يَرْجُمُهَا فَرَجَمَهَا بِحَجَرٍ فَوَقَعَتْ قَطْرَةٌ مِنْ دَمِهَا عَلَى وَجْنَتِهِ فَسَبَّهَا فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " مَهْلاً يَا خَالِدُ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا صَاحِبُ مَكْسٍ لَغُفِرَ لَهُ " . وَأَمَرَ بِهَا فَصُلِّيَ عَلَيْهَا فَدُفِنَتْ .
‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতা
গামিদ গোত্রের এক নারী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, আমি ব্যাভিচার করেছি, তিনি বললেনঃ ফিরে যাও। সে ফিরে চলে গেলো। পরদিন সকালে সে আবার তাঁর নিকট এসে বললো, আপনি যেরূপ মাঈয ইবনু মালিককে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, সম্ভবত আমাকেও সেরূপ ফিরিয়ে দিতে চান। আল্লাহর কসম! আমি নিশ্চয়ই গর্ভবতী। তিনি এবারো তাকে ফিরে যেতে বললে সে চলে গেলো। পরদিন সে পুনরায় আসতেই তিনি বললেনঃ তুমি ফিরে যাও যতক্ষণ না সন্তান প্রসব করো। সে ফিরে গেলো। যখন সে পুত্র সন্তান প্রসব করলো, সে সেই শিশুটিকে কোলে করে নিয়ে এসে বললো, আমি এই শিশুটিকে প্রসব করেছি। তিনি বললেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত তাকে দুধ পান করাতে থাকো। অবশেষে দুধ ছাড়ানো হলে শিশুটিকে নিয়ে সে হাযির হলো। শিশুটি খাদ্য হাতে নিয়ে খাচ্ছিল। তিনি একজন মুসলিমকে তার ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন। অতঃপর তার জন্য গর্ত খনন করতে আদেশ দিলে তা খনন করা হলো এবং পাথর মেরে হত্যার আদেশ দিলে তাকে এভাবে হত্যা করা হলো। তাকে পাথর মারার জন্য নিয়োজিত ব্যাক্তিদের মধ্যে খালিদ (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি তাকে পাথর মারলে এক ফোটা রক্ত ছিটে এসে তাঁর গালে পড়তেই তিনি তাকে গালি দেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হে খালিদ! অনুগ্রহ করো। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তার কসম! সে এরূপ তাওবাহ করেছে যে, কোন যালিম কর আদায়কারীও যদি সেরূপ তাওবাহ করতো, তাহলে অবশ্যই তাকে মাফ করা হতো। অতঃপর তাঁর আদেশে তার জানাযার সলাত পড়া হয় এবং তাকে দাফন করা হয়।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৪৪২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
(২) তার যৌবন সম্পর্কে কিভাবে তা অতিবাহিত করেছে। (৩) তার সম্পদ সম্পর্কে কিভাবে তা উপার্জন করেছে? এবং (৪) কোন পথে তা খরচ করেছে। (৫) আর যা শিখেছে সে অনুযায়ী কি আমল করেছে?" (এ হাদীছটিও বর্ণনা করেছেন তিরমিযী ও বায়হাকী, তিরমিযী বলেন, হাদীছটি হাসান গরীব)
মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১২৮
হাদিসের মান: হাসান লিগাইরিহি
হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ থেকে মুরসাল ভাবে বর্ণিত আছে: حُبُّ الدُّنْيَا رَأْسُ كُلِّ خَطِيْئَةٍ অর্থাৎ দুনিয়ার ভালবাসাই সকল পাপের মূল। (আল জামেউস সাগীর ...
একবার সালামা ইবনে হাতেম আনসারী নামক এক সাহাবী রাসূল(সা) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল(সা), আমার জন্য দোয়া করুন, যেন আমি অনেক বড় ধনী হতে পারি। রাসূল(সা) বললেন, আমি যে নীতি অনুসরণ করে চলেছি, তা কি তোমার পছন্দ নয়? আল্লাহর কসম, আমি ইচ্ছা করলে মদীনার পাহাড়গুলো সোনা হয়ে আমার সাথে সাথে ঘুরতো। কিন্তু এমন ধনী হওয়া আমার পছন্দ নয়। এ কথা শুনে লোকটি ফিরে গেল, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আাবার ফিরে এল। এবার সে বললোঃ হে রাসূল(সা)! আমি ওয়াদা করছি যে, আমি যদি ধনী হয়ে যাই তাহলে প্রত্যেক হকদারকে তার প্রাপ্য হক পৌঁছে দেব। এ কথা শুনে রাসূল(সা) তার বিপুল ধনসম্পদ হোক-এই মর্মে দোয়া করলেন। এর ফলে তার ছাগল ভেড়া প্রভৃতিতে অসাধারণ প্রবৃদ্ধি দেখা দিল। ফলে মদীনার যে জায়গায় সে বাস করতো তাতে আর তার স্থান সংকুলান হতো না। সে মদীনার বাইরে চলে গেল। তবে যোহর ও আসরের নামায মদীনার মসজিদে নববীতে পড়তো। তার অন্যান্য নামায সে নিজের বাসস্থানেই পড়তো।
এরপর তার গৃহপালিত পশুর সংখ্যা আরো বেড়ে গেল। এর ফলে নতুন জায়গাটিও তার জন্য সংকীর্ণ হয়ে দাঁড়ালো। তাই সে মদীনা হতে আরো দূরে গিয়ে থাকতে আরম্ভ করলো। সেখান থেকে সে শুধু জুমার নামায মদীনায় এসে পড়তে লাগলো। অন্যান্য নামায নিজের বাসস্থানেই পড়তো। ক্রমে তার সম্পদ আরো বেড়ে গেলে তাকে আরো দূরে চলে যেতে হলো। সেখান থেকে সে জুমার নামাযেও মসজিদে আসতে পারতো না।
কিছুদিন পর রাসূল(সা) সালাবা সম্পর্কে লোকদের কাছে খোঁজ খবর জানতে চাইলেন। তাঁকে জানানো হলো যে, সালাবার সম্পদ এত বেশি হয়েছে যে, শহরের কাছে কোথাও তার স্থান সংকুলান হয় নি। তাই এখন সে আর এদিকে আসে না। এ কথা শুনে রাসূল(সা) তিনবার বললেন, “ইয়া ওয়াইহা সালাবা!” অর্থাৎ সালাবার জন্য আফসোস।
ঠিক এই সময় যাকাতের আয়াত নাযিল হয়। তাতে রাসূল(সা)কে মুসলমানদের কাছ হতে যাকাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি যাকাত আদায়ের জন্য মুসলমানদের কাছে লোক পাঠালেন। কয়েকজন লোককে সালাবার কাছে পাঠালেন। আর কয়েকজনকে বনু সুলাইমের আর এক ধনীর কাছেও পাঠালেন।
যখন আদায়কারীরা সালাবার কাছে যাকাত চাইল এবং রাসূল(সা) এর লিখিত ফরমান দেখালো; তখন সালাবা বলতে লাগলো, এতো জিযিয়া কর হয়ে গেল, যা অমুসলমানদের কাছ হতে আদায় করা হয়। তারপর বললো, এখন আপনারা যান। ফেরার পথে আসবেন। তখন তারা চলে গেলেন।
পক্ষান্তরে বনু সুলাইমের ধনী লোকটি রাসূল(সা) এর আদেশ শুনে নিজের গৃহপালিত পশুর মধ্য থেকে বেছে বেছে উৎকৃষ্ট মানের পশু যাকাত হিসেবে দিলেন। আদায়কারীরা বললেন, আমাদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে, উৎকৃষ্টমানের পশু যেন না নিই। বনু সুলাইমের ধনী লোকটি বললো, আমি নিজের ইচ্ছায় দিচ্ছি। দয়া করে গ্রহণ করুন।
অতঃপর আদায়কারীগণ সালাবার কাছে গেলে সে বললো, “কই, দেখি যাকাতের আইন আমাকে দেখাও। তারপর তা দেখে আবার বলতে লাগলোঃ আমি তো মুসলমান। অমুসলমানদের মত জিযিয়া কেন দিতে যাবো? যা হোক, আপনারা এখন যান। আমি পরে ভেবে চিন্তে জানাবো।”
যখন আদায়কারীরা রাসূল(সা) এর কাছে ফিরে গেল তখন সকল বৃত্তা্ন্ত শুনে রাসূল(সা) আবার তিনবার বললেন, “সালাবার জন্য আক্ষেপ!” আর সুলাইমের জন্য দোয়া করতে লাগলেন। এরপর সালাবার প্রতি ইঙ্গিত করে সূরা তাওবার একটি আয়াত নাযিল হয়। তাতে এই ধরনের লোকদের নিন্দা করা হয়, যারা সম্পদশালী হলে হকদারদের হক দিবে বলে ওয়াদা করেছে, কিন্তু পরে সেই ওয়াদা ভুলে গিয়ে কৃপণতা করতে আরম্ভ করেছে। আয়াতে বলা হয় যে, এই ধরনের লোকদের মনে আল্লাহ মোনাফেকী গভীরভাবে বদ্ধমূল করে দিয়েছেন।
রাসূল(সা) যখন সালাবার জন্য তিনবার আক্ষেপ প্রকাশ করলেন এবং কুরআনের আয়াতও নাযিল হলো, তখন সেখানে সালাবার একজন আত্মীয় ছিলো। সে গিয়ে সালাবাকে সব জানালো এবং তাকে তার আচরণের জন্য তিরস্কার করলো। সালাবা ভীষণ ঘাবড়ে গেল এবং মদীনায় হাজির হয়ে বললো, “হে রাসূল! আমার যাকাত গ্রহণ করুন। রাসূল(সা) বললেন, আল্লাহ তোমার যাকাত গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। এ কথা শুনে সালাবা আফসোস করতে লাগলো।
রাসূল(সা) বললেন, “এটা তো তোমার নিজের কৃতকার্যের ফল। আমি তোমাকে হুকুম করেছিলাম। তুমি তা মাননি। এখন আর তোমার যাকাত কবুল হতে পারে না। তখন সালাবা অকৃতকার্য হয়ে ফিরে গেল। এর কিছুদিন পরেই রাসূল(সা) ইন্তিকাল করেন। এরপর সালাবা যথাক্রমে হযরত আবু বকর ও ওমর(রা) কে যাকাত গ্রহণ করতে আবেদন জানায়। কিন্তু তারা রাসূল(সা) এর নীতি অনুসরণ করেন। হযরত ওসমানও তার যাকাত গ্রহণে অস্বীকার করেন। হযরত ওসমানের খেলাফতকালেই তার মৃত্যু হয়।(মাআ’রেফুল কুরআন এর সৌজন্যে)।
শিক্ষাঃ হালাল সম্পদে ধনী হওয়ার চেষ্টা করা ও আশা করা যদিও বৈধ, তবুও এত বেশি সম্পদের লোভ করা উচিত নয়, যা মানুষকে ইসলাম হতে দূরে সরিয়ে দেয়। আর প্রাপ্ত সম্পদের যাকাত ও সদকা দিতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধ করা উচিত নয়।
No comments