Header Ads

Header ADS

5/118  জুলুম করার পরিনীতি মুহারম মাস

*  মৃত্যুর পরে আরেকটি জীবন আছে গেছে সন্দেহ আছে কারো?

কাইফা তাকফুরুনা বিল্লা মিনহা খালাকনাকুম 

*  আবহাওয়ার বার্তায় বলে হতে পারে,আল্লাহ কয় হবেই

إِذَا السَّمَاءُ انفَطَرَتْ

وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انتَثَرَتْ

وَإِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ

وَإِذَا الْقُبُورُ بُعْثِرَتْ

عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ

يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ

*  আবহাওয়ার বার্তায় #সন্দেহ থাকতে পারে। কিয়ামতের ময়দানে ঝাররা ঝাররা হিসাব হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই দিনের কথা চিন্তা করতে বলা হয়েছে,আল হাশ্‌র - ১৮

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

*  যারা জুলুম করো তোমরা মনে রাখিও তোমাদেরও বিচার হবে কোন সন্দেহ নাই । ইব্রাহীম-৪২

وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ ۚ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الْأَبْصَارُ

* অচিরেই জানতে পারবে তাদের অবস্থান কোথায় ২৬  আশ-শুআরা ২২৭

وَ سَیَعْلَمُ الَّذِیْنَ ظَلَمُوْۤا اَیَّ مُنْقَلَبٍ یَّنْقَلِبُوْنَ۠

*  ব্যবস্হা নেয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় 42 : আশ-শূরা 42

إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَظْلِمُونَ النَّاسَ وَيَبْغُونَ فِى الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۚ أُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

*  জুলুম নির্যাতন কারীরকে আল্লাহ দুনিয়ায় ছারদেন ছেড়ে দেননি। জনৈক ঐতিহাসিক বলেন। একবার আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম তার এক হাত ঘাড় থেকে কর্তিত। সে উচ্চস্বরে বলছে : যারা আমাকে দেখবে তারা যেন কারো ওপর অত্যাচার না করে। আমি তার কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম , তোমার কি হয়েছে। ভাই ? সে বললো : একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে। আমি একজন অত্যাচারী ব্যক্তির বরকন্দাজ (দেহরক্ষী) ছিলাম। একদিন দেখলাম , এক জেলে বড় একটা মাছ নিয়ে যাচ্ছে। মাছটি দেখে আমার ভীষণ লোভ হলো এবং জেলেকে প্রহার করে তার মাছটি কেড়ে নিলাম

*  মনে রেখো জুলুম করে #মাফ পাবে এটা আল্লাহর আইনে নাই। সিংওয়ালা বকরি সিং বিহীন বকরির প্রতি জুলুমের বিচার আল্লাহ করবেন। তুমি মাফ পাবে কেমন করে। আল্লাহ ফেরাউন নমরুদ সাদ্দাত আবু জাহেলকে ছাড় দিয়েছেন ছেড়ে দেননি। মনে রাখবেন কোন জালেম বাচতে পারবেনা

*  মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া #মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮

*  কেউ যদি আগামীকালের চিন্তা করে তার পক্ষে অন্যের উপর জুলুম নির্যাতন করা সম্ভব নয়

*  বাদশা মালিক শাহের আগামীকালের কথা মনে পরে। বাদশার ন্যায় বিচার

বাদশাহ মালিক শাহ ছিলেন আন্দালুসের (স্পেনের) স্বাধীন সুলতান। তার শখ ছিল হরিণ শিকার করা। (ওয়াজ ও খুতবা- ২/৪৭৮)

*  সুলতান বাহাউদ্দিনের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তার পুত্র #শাইখ হামিদুদ্দিন সেবিকা জিনাত বিছানায় শুইলে একশত বেত্রাঘাতের নির্দেশ ( ওয়াজ ও খুতবা-  ২/৪৭৯)

*  আমরা আগামী কালের চিন্তা করি যখন গলায় গেরগিরি ইষ্টার্ট দেয়। যখন হাত আমার কথা শুনেনা। জীবনভর সূদ ঘোষ অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন জুলুম অন্যের হক নষ্ট করে মৃত্যুর সময় তৌবা কবুল হবেনা৷ আন নিসা- ১৮

وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ


*  সবচেয়ে গরিব কে?সহিহ মুসলিম, ৬৪৭৩ সহিহ

*  পরকালীন ভয় মানুষকে নীতির গতি তথা ইবাদতের গতি বাড়িয়ে দেয়। আর জুলুম তথা গুনাহের প্রবনতা কমিয়ে দেয় ৷

*  জুলুম সম্পর্কে কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’ (সূরা হূদ : ১১৩)


________________________________________________________


5/118  জুলুম করার পরিনীতি

*  মৃত্যুর পরে আরেকটি জীবন আছে সন্দেহ আছে কারো?

কাইফা তাকফুরুনা বিল্লা মিনহা খালাকনাকুম 

*  আবহাওয়ার বার্তায় বলে হতে পারে,আল্লাহ কয় হবেই

إِذَا السَّمَاءُ انفَطَرَتْ

وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انتَثَرَتْ

وَإِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ

وَإِذَا الْقُبُورُ بُعْثِرَتْ

عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ

يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ


*  আবহাওয়ার বার্তায় বলে হতে পারে,আল্লাহ কয় হবেই


82:1)

اِذَا السَّمَآءُ انْفَطَرَتْۙ


শব্দার্থ:        إِذَا =  যখন ,     السَّمَاءُ =  আকাশ,     انْفَطَرَتْ =  ফেটেযাবে,


অনুবাদ:    যখন আকাশ ফেটে যাবে,


(82:2)

وَ اِذَا الْكَوَاكِبُ انْتَثَرَتْۙ


শব্দার্থ:        وَإِذَا =  এবং যখন ,     الْكَوَاكِبُ =  তারা গুলো,     انْتَثَرَتْ =  বিক্ষিপ্ত হবে ,


অনুবাদ:    যখন তারকারা চারদিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে,


(82:3)

وَ اِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْۙ


শব্দার্থ:        وَإِذَا =  এবং যখন ,     الْبِحَارُ =  সাগরগুলো,     فُجِّرَتْ =  উথলেউঠবে,


অনুবাদ:    যখন সমুদ্র ফাটিয়ে ফেলা হবে


(82:4)

وَ اِذَا الْقُبُوْرُ بُعْثِرَتْۙ


শব্দার্থ:        وَإِذَا =  এবং যখন ,     الْقُبُورُ =  কবরগুলো,     بُعْثِرَتْ =  উন্মোচিত হবে ,


অনুবাদ:    এবং যখন কবরগুলো খুলে ফেলা হবে,


(82:5)

عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَ اَخَّرَتْؕ


শব্দার্থ:        عَلِمَتْ =  জানবে,     نَفْسٌ =  প্রত্যেকব্যক্তি,     مَا =  যা,     قَدَّمَتْ =  সেআগেপাঠিয়েছে,     وَأَخَّرَتْ =  এবং পিছনেছেড়েছে,


অনুবাদ:    তখন প্রত্যেক ব্যক্তি তার সামনের ও পেছনের সবকিছু জেনে যাবে।


(82:6)

یٰۤاَیُّهَا الْاِنْسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِیْمِۙ


শব্দার্থ:        يَاأَيُّهَا =  হে,     الْإِنْسَانُ =  মানুষ,     مَا =  কিসে,     غَرَّكَ =  তোমাকেধোঁকা  দিয়েছে,     بِرَبِّكَ =   তোমার রবেরব্যাপারে,     الْكَرِيمِ =  মহান,


অনুবাদ:    হে মানুষ! কোন জিনিষ তোমাকে তোমার মহান রবের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে,


غَرَّكَ-- তোমাকে ধোকা দিয়েছে


*  আবহাওয়ার বার্তায় #সন্দেহ থাকতে পারে। কিয়ামতের ময়দানে ঝাররা ঝাররা হিসাব হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই দিনের কথা চিন্তা করতে বলা হয়েছে,আল হাশ্‌র - ১৮

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

*  যারা জুলুম করো তোমরা মনে রাখিও । ইব্রাহীম-৪২

وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ ۚ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الْأَبْصَارُ


*  জালেমরা যা করে,সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না,ইব্রাহীম-৪২


وَ لَا تَحْسَبَنَّ اللّٰهَ غَافِلًا عَمَّا یَعْمَلُ الظّٰلِمُوْنَ١ؕ۬ اِنَّمَا یُؤَخِّرُهُمْ لِیَوْمٍ تَشْخَصُ فِیْهِ الْاَبْصَارُۙ


শব্দার্থ:        وَلَا =   এবং  না ,     تَحْسَبَنَّ =  কখনই তুমি মনেকরো (যেন) ,     اللَّهَ =  আল্লাহকে,     غَافِلًا =  উদাসীন,     عَمَّا =  তাহতে যা,     يَعْمَلُ =  করছে,     الظَّالِمُونَ =   সীমা লঙ্ঘনকারীরা,     إِنَّمَا =   শুধু  মাত্র,     يُؤَخِّرُهُمْ =   তিনি অবকাশদিচ্ছেনতাদের কে,     لِيَوْمٍ =  পর্যন্তদিন,     تَشْخَصُ =  স্থির হবে ,     فِيهِ =  তার মধ্যে ,     الْأَبْصَارُ =  দৃষ্টি সমূহ ,


অনুবাদ:    এখন এ জালেমরা যা কিছু করছে আল্লাহকে তোমরা তা থেকে গাফেল মনে করো না। আল্লাহ‌ তো তাদেরকে সময় দিচ্ছেন সেই দিন পর্যন্ত যখন তাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়ে যাবে,


* অচিরেই জানতে পারবে তাদের অবস্থান কোথায় ২৬  আশ-শুআরা ২২৭

وَ سَیَعْلَمُ الَّذِیْنَ ظَلَمُوْۤا اَیَّ مُنْقَلَبٍ یَّنْقَلِبُوْنَ۠

*  ২৬  আশ-শুআরা, আয়াত: ২২৭

وَ سَیَعْلَمُ الَّذِیْنَ ظَلَمُوْۤا اَیَّ مُنْقَلَبٍ یَّنْقَلِبُوْنَ۠

আর জুলুমকারীরা শীঘ্রই জানবে তাদের পরিণাম কি!

وَسَيَعْلَمُ =  এবং  শীঘ্রই জানবে,     الَّذِينَ =  যারা,     ظَلَمُوا =  নির্যাতনকরেছে,     أَيَّ =  কোনো,     مُنْقَلَبٍ =  প্রত্যাবর্তনস্থলে,     يَنْقَلِبُونَ =  তারা প্রত্যাবর্তনকরছে


*  ব্যবস্হা নেয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় 42 : আশ-শূরা 42

إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَظْلِمُونَ النَّاسَ وَيَبْغُونَ فِى الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۚ أُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

*  মনে রেখো জুলুম করে #মাফ পাবে এটা আল্লাহর আইনে নাই। সিংওয়ালা বকরি সিং বিহীন বকরির প্রতি জুলুমের বিচার আল্লাহ করবেন। তুমি মাফ পাবে কেমন করে। আল্লাহ ফেরাউন নমরুদ সাদ্দাত আবু জাহেলকে ছাড় দিয়েছেন ছেড়ে দেননি। মনে রাখবেন কোন জালেম বাচতে পারবেনা

*  কেউ যদি আগামীকালের চিন্তা করে তার পক্ষে অন্যের উপর জুলুম নির্যাতন করা সম্ভব নয়

*  বাদশা মালিক শাহের আগামীকালের কথা মনে পরে। বাদশার ন্যায় বিচার

বাদশাহ মালিক শাহ ছিলেন আন্দালুসের (স্পেনের) স্বাধীন সুলতান। তার শখ ছিল হরিণ শিকার করা। (ওয়াজ ও খুতবা- ২/৪৭৮)


*   সুলতান মালিক শাহের প্রসিদ্ধ ঘটনা । তিনি একবার ইস্পাহানের জঙ্গলে শিকার ছিল খেলছিলেন । কোনো এক গ্রামে তিনি অবস্থান করলেন । ওখানে এক বৃদ্ধ বিধবার একটি গাভী দ্বারা বৃদ্ধা তার তিন সন্তানের লালন পালন করত । একদিন বাদশার কর্মচারীগণ গাভীটি জবাই করে কাবাব বানিয়ে মজা করে খেয়ে ফেলল । দরিদ্র বৃদ্ধা এটা শুনে অচেতন হয়ে যায় । বাদশার লোকদের সঙ্গে লড়াই সহজ ছিল না । তাদের কেউ ফরিয়াদ শুনতেও প্রস্তুত ছিল না । আমজনতার মধ্যেও অসহায় দরিদ্র বৃদ্ধার সমর্থন দেওয়ার মতো প্রভাবশালী কোনো লোকও ছিল না । বৃদ্ধা সারারাত অস্থিরতায় কাটাল । সকাল হলে তার চিন্তা জাগল , আমি সরাসরি কেন বাদশার সাথে সাক্ষাৎ করব না ? আল্লাহ তায়ালা তাঁকে এত বড় সম্রাজ্য তো এজন্যই দান করেছেন , যাতে সে মানুষের প্রতি সুবিচার করেন । জালেম থেকে তাদের অধিকার আদায় করে দেন । বৃদ্ধা বাদশার দরবারের হাজির হওয়ার চেষ্টা করল । কিন্তু দরবারের নিরাপত্তারক্ষীগণ এক দরিদ্র বৃদ্ধার রাজমহলে পৌঁছার সব চেষ্টাই নিষ্ফল করে দেয় । বুদ্ধা কিভাবে যেন জানতে পারে , বাদশা অনুক পথে শিকারে যাবেন । বৃদ্ধা ইস্পাহানের প্রসিদ্ধ নদী জিন্দাহ হ্রদের পুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় । বাদশার আরোহী পুলের উপর আসলে বৃদ্ধা সাহস করে বাদশার ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরল । অত্যন্ত নির্ভীকতার সঙ্গে বলল , হে আলাপ আরসালানের   পুত্র ! কী মনে কর – আমার ইনসাফ তুমি এ পুলের উপর করবে , না - কি ওই পুলের উপর অর্থাৎ পুলসিরাত? যে পুল পছন্দ হয় ঠিক করে নাও ! দরবারি চাটুকারগণ বৃদ্ধার এ সাহস দেখে তো বিস্ময়ে হতবাক । তাদের আরো বিস্ময় হল , বাদশা বৃদ্ধাকে ধমকি দেওয়ার স্থলে যেন নিথর - নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন । তাঁর চেহারায় তাঁর মনের অবস্থা ফুটে উঠে । তিনি তৎক্ষণাৎ ঘোড়া থেকে নিচে নেমে পড়েন । আবেগ আপ্লুত ভাষায় বৃদ্ধাকে বললেন , আম্মাজান ! আমার মধ্যে পুলসিরাতের শক্তি কোথায় ? আমি এখানেই ফয়সালা করে দিতে চাই । বুলন ! আপনার কি হয়েছে ? বৃদ্ধা পুরো ঘটনা খুলে বলল । বাদশা সৈন্য বাহিনীকে এ অন্যায় আচরণের জন্য তিরস্কার করলেন এবং তার তৎক্ষণাৎ একটি গাভীর বদলে সত্তরটি গাভী প্রদানের নির্দেশ দিলেন । বৃদ্ধা খুশি হয়ে বাদশার জন্য দোয়া শুরু করে । এরপর বাদশা অশ্বারোহণ করে চলে যান ।। সুলতান মালিক শাহের উপর ওই বৃদ্ধার কথার এরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার একটিই কারণ ছিল , তাঁর পরকালের প্রতি বিশ্বাস । অন্যথায় তিনি বাদশাহির নেশায় ডুবে বলতে পারতেন , যাও ! আমার এ পুল আর ওই পুল কোনোটার পরওয়া নাই । কিন্তু কিয়ামত দিবসের উপর পূর্ণ বিশ্বাস থাকার কারণে বৃদ্ধার কথায় তিনি আঁকে উঠলেন । সাথে সাথে তিনি তার উপর হওয়া জুলুমের ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিলেন । পরিস্থিতি বদলে গেল শেষ বিচারে বিশ্বাসী এমনই এক বাদশার সত্য ঘটনা । শুধু একটি বাক্যই তাঁর জীবনচিত্র পাল্টে দিয়েছে । তাঁর নাম ছিল শাইখ হামিদুদ্দিন আবু হাকিম কুরাইশি । তিনি এমন বংশে । জন্মগ্রহণ করেন , যারা গুয়েচ ও মাকরান অঞ্চলে রাজত্ব করত । তিনি আপন পিতা সুলতান বাহাউদ্দিনের মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করেন । এরপর ২১ বছর পর্যন্ত দাপটের সাথে রজত্ব করেন । ‘ যিকরে কিরাম ' গ্রন্থে তাঁর ঘটনার শেষে লিখা রয়েছে , শাইখ হামিদুদ্দিন রহ . - এর সাথে ক্ষুদ্র একটি ঘটনা ঘটে । সেটিই তাঁর জীবনচিত্র পাল্টে দেয় । তাঁকে বানিয়ে দেয় সুলতানের হলে শাইখ ।

*  সুলতান বাহাউদ্দিনের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তার পুত্র #শাইখ হামিদুদ্দিন সেবিকা জিনাত বিছানায় শুইলে একশত বেত্রাঘাতের নির্দেশ ( ওয়াজ ও খুতবা-  ২/৪৭৯)


*   শাইখ হামিদুদ্দিন তার শাসনামলে দুপুরে আহারের পর নিজ বাগানবাড়িতে সামান্য বিশ্রাম গ্রহণ করতেন । ওই বাগানে তাঁর এক রাজমহল ছিল । মহলটি দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল জিনাত নামে জনৈক সেবিকার ওপর । এ সেবিকার কাজ ছিল , প্রতিদিন যথাসময়ে বিছানা | ঠিকঠাক করে দেওয়া । যাতে শাইখ হামিদুদ্দিন আগমন করে বিশ্রাম নিতে পারেন । কথিত আছে , একদিন শাইখ হামিদুদ্দিন আসার পূর্বে ওই সেবিকা বিছানা বিছাল । বিছানাটি খোদ তারই বেশ মনঃপূত হল । কিছু সময়ের জন্য সে ওই বিছানায় শুইয়ে পড়ল । কিছুক্ষণের মধ্যে তার ঘুম চলে আসে । তখনও সে বিছানা থেকে উঠে নি । ইত্যবসরে নিয়মমাফিক শাইখ হামিদুদ্দিন বিশ্রামের লক্ষ্যে মহলে পৌঁছেন । দেখেন , সেবিকা জিনাত বিছানায় শুইয়ে রয়েছে । সেবিকাকে বিছানায় শুইয়ে থাকতে দেখে সুলতানের রাগ উঠে যায় । কাজেই এ বেয়াদবির জন্য সেবিকাকে একশ বেত্রাঘাতের আদেশ করেন । সঙ্গে সঙ্গে তার হুকুম পালন করা হয় । সেবিকাকে বেত্রাঘাত করা শুরু হয় । কিন্তু অবাক কাণ্ড ! সেবিকা বেত্রাঘাতে উহ ! আহ ! না করে শুধু হাসছে । শাইখ হামিদুদ্দিন এ দৃশ্য দেখে বিস্মিত হয়ে অস্বাভাবিক হাসার কারণ কী ? গেলেন । তাই তিনি সাজা মওকুফ করে সেবিকাকে ডাকলেন । জিজ্ঞাসা করলেন , এ সেবিকা অত্যন্ত গাম্ভীর্যের সাথে জবাব দিলেন , আমার চিন্তা হল – এ নরম বিছানায় একবার অনিচ্ছাকৃত ঘুমের শাস্তি যদি এ - ই হয় , তাহলে প্রতাহ যারা এমন আরামবিছানায় ঘুমায় , তাদের পরিণতি কী হতে পারে ? সেবিকার এ জবাব শাইখ হামিদুদ্দিনের উপর দারুণ প্রতিক্রিয়া করে । তাঁর জীবন সম্পূর্ণ পাল্টে যায় । তিনি দুনিয়া ও তার সমস্ত স্বাদ থেকে বিমুখ হয়ে যান । এমনকি তিনি দরবেশির জীবন গ্রহণ করে নেন । রাজত্ব ছেড়ে শাইখ হামিদুদ্দিন লাহোর চলে আসেন । সেখানে হযরত সাইয়িদ আহমদ তোখতা [ সম্পর্কে যিনি তাঁর নানা ছিলেন ] -এর খেদমতে হাজির হন এবং তাঁর হাতে শাতারিয়া তরিকায় বাইয়াত গ্রহণ করেন । দীর্ঘ রিয়াযত - মুজাহাদার পর তাঁর থেকে খিলাফত লাভ করেন । শাইখ হামিদুদ্দিন ১৬৭ বছর জীবিত ছিলেন । জীবন সায়াহ্নে তিনি উচ ও সাখার অঞ্চলে তাবলিগ ওয়াজ - নসিহত করতেন । ওই এলাকায় অসংখ্য লোক তাঁর হাতে ঈমান আনয়ন করেছেন । আমি বলছিলাম — কিয়ামত দিবসের উপর যদি সত্যিকারের ঈমান থাকে , তবে সে ঈমান মানুষকে অসংখ্য মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে । উদ্ভুত্ব করে অসংখ্য ভালো ও সৎকাজের প্রতি । তাই কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান আনার পর পরকালের উপর ঈমান আনার প্রতি সবচেয়ে বেশি তাগিদ করা হয়েছে । বাচনভঙ্গি , শব্দ এবং শিরোনাম পরিবর্তন করে বারবার কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । আল্লাহ তায়ালা শপথের পর শপথ করে মানুষকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার নিশ্চয়তা দান করেছেন । সূরা আয্ - যারিয়ায় চারবার এবং সূরা আল - মুরসালাতে পাঁচবার শপথ করে বলেছেন : • ' নিশ্চয় তা [ কেয়ামত ] সত্য , তোমাদেরকে যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে । ' সূরা ইউনুসে ইরশাদ হয়েছে , • ogy LG , Tignati for g " হে নবী ! এরা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে , তা কি সত্য ? আপনি বলে দিন , হাঁ ! আমার প্রভুর শপথ ! নিশ্চয় তা সত্য । বস্তুত তোমরা আমাকে বিব্রত করছ । ' ( সূরা ইউনুস : ৫৩ ) ‘ পরকালে বিশ্বাস ' - এর উপর এত তাগিদ ও গুরুত্বারোপ এবং এত বেশি বেশি তা বর্ণনা করার একমাত্র কারণ , যাবৎ না জান্নাত - জাহান্নাম আর হাশর - নশরের উপর দৃঢ় বিশ্বাস জন্ম নিবে

ওয়াজ ও খুতবা- ২/৪৭৮-৪৮০)


*  আমরা আগামী কালের চিন্তা করি যখন গলায় গেরগিরি ইষ্টার্ট দেয়। যখন হাত আমার কথা শুনেনা। জীবনভর সূদ ঘোষ অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন জুলুম অন্যের হক নষ্ট করে মৃত্যুর সময় তৌবা কবুল হবেনা৷ আন নিসা- ১৮

وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ


*  জুলুম নির্যাতন কারীরকে আল্লাহ দুনিয়ায় ছারদেন ছেড়ে দেননি। জনৈক ঐতিহাসিক বলেন। একবার আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম তার এক হাত ঘাড় থেকে কর্তিত। সে উচ্চস্বরে বলছে : যারা আমাকে দেখবে তারা যেন কারো ওপর অত্যাচার না করে। আমি তার কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম , তোমার কি হয়েছে। ভাই ? সে বললো : একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে। আমি একজন অত্যাচারী ব্যক্তির বরকন্দাজ (দেহরক্ষী) ছিলাম। একদিন দেখলাম , এক জেলে বড় একটা মাছ নিয়ে যাচ্ছে। মাছটি দেখে আমার ভীষণ লোভ হলো এবং জেলেকে প্রহার করে তার মাছটি কেড়ে নিলাম


*  সবচেয়ে গরিব কে?সহিহ মুসলিম, ৬৪৭৩ সহিহ

*  পরকালীন ভয় মানুষকে নীতির গতি তথা ইবাদতের গতি বাড়িয়ে দেয়। আর জুলুম তথা গুনাহের প্রবনতা কমিয়ে দেয় ৷

*  জুলুম সম্পর্কে কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’ (সূরা হূদ : ১১৩)

*  মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮


*  জুলুম নির্যাতন কারীরকে আল্লাহ দুনিয়ায় ছারদেন ছেড়ে দেননি। জনৈক ঐতিহাসিক এ প্রসংগে আরো একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, একবার আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম তার এক হাত ঘাড় থেকে কর্তিত। সে উচ্চস্বরে বলছে : যারা আমাকে দেখবে তারা যেন কারো ওপর অত্যাচার না করে। আমি তার কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম , তোমার কি হয়েছে । ভাই ? সে বললো : একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । আমি একজন অত্যাচারী ব্যক্তির বরকন্দাজ ছিলাম । একদিন দেখলাম , এক জেলে বড় একটা মাছ নিয়ে যাচ্ছে । মাছটি দেখে আমার ভীষণ লোভ হলো এবং জেলেকে প্রহার করে তার মাছটি কেড়ে নিলাম । মাছটি নিয়ে সানন্দে বাড়ী যাচ্ছি । সহসা মাছটি আমার বুড়ো আংগুলে ভীষণ জোরে কামড় দিল । অতঃপর বাড়ী গিয়ে মাছটি আছড়ে ফেলে দিলাম । ব্যাথায় সেদিন রাত্রে আমার ঘুম হলোনা । পরদিন সকালে দেখি আংগুলটা ভীষণভাবে ফুলে উঠেছে । আমি দ্রুত চিকিৎসকের কাছে গেলাম । তিনি আমাকে জানালেন , বুড়ো আংগুলটা কেটে ফেলতে হবে । নচেৎ পরে পুরো হাত আক্রান্ত হবে । অগত্যা বুড়ো আংগুল কাটা হলো । কিন্তু এতেও ব্যথার উপশম হলো না । পুনরায় চিকিৎসকের কাছে গেলাম । এবার তিনি আমার হাতের পাতাটি পুরো কেটে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলেন । কিন্তু তাতেও উপশম হলোনা । ক্রমে আমার পুরো হাতটাই কাটতে হলো । অতঃপর এক ব্যক্তি আমার সব ঘটনা শুনে আমাকে মাছের মালিকের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে বললেন , নচেৎ আমার পুরো দেহই রোগক্রান্ত হতে পারে বলে সতর্ক করে দিলেন । আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করে জেলেটির সন্ধান পেয়েছি এবং তার কাছে পূর্বের সমস্ত ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে পা ধরে মাফ চেয়েছি । এখন আমার বাদবাকী শরীর সুস্থ আছে । কেননা ঐ জেলে আমাকে মাফ করে দিয়েছে এবং আমাকে যে বদদোয়া করেছিল তা ফিরিয়ে নিয়েছে । বস্তুতঃ মানুষের ওপর অত্যাচার এমন এক ভয়ংকর গুনাহ , যার শাস্তি কোন না কোন উপায়ে দুনিয়ার জীবনেই পাওয়া শুরু হয়ে যায় । যদিও অনেকেই তা উপলব্ধি করেনা ।

____________________________


*  ঝাররা ঝাররা হিসাব হবে। আগামীকালের চিন্তা করতে বলা হয়েছে,আল হাশ্‌র - ১৮


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ


*  আমরা আগামী কালের চিন্তা করি যখন গলায় গেরগিরি ইষ্টার্ট দেয় হাত আমার কথা শুনেনা। জীবনভর সূদ ঘোষ অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন জুলুম অন্যের হক নষ্ট করে মৃত্যুর সময় তৌবা কবুল হবেনা৷আন নিসা- ১৮


وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَـٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا


*  সবচেয়ে গরিব কে?সহিহ মুসলিম, ৬৪৭৩ সহিহ


حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَعَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، - وَهُوَ ابْنُ جَعْفَرٍ - عَنِ الْعَلاَءِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ وَلاَ مَتَاعَ ‏.‏ فَقَالَ ‏"‏ إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةٍ وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا وَأَكَلَ مَالَ هَذَا وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ ‏"‏ ‏.‏


আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:


রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কি বলতে পার অভাবী লোক কে? তাঁরা বললেন, আমাদের মাঝে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও ধন-সম্পদ নেই সে তো অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সলাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক ‘আমাল থেকে দেয়া হবে, অমুককে নেক ‘আমাল থেকে দেয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হাক্ব তার নেক ‘আমাল থেকে পূরণ করা না যায় সে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।  (ই.ফা. ৬৩৪৩, ই. সে. ৬৩৯৩)


  


সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৭৩


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


*  আয়শা রা: হঠাৎ কেদে ফেলেন, আগামী কালের চিন্তায়,কিয়ামতের দিন তিন জায়গায় কেউ কারো খবর নিবেনা। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৭৫৫


حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَحُمَيْدُ بْنُ مَسْعَدَةَ، أَنَّ إِسْمَاعِيلَ بْنَ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَهُمْ قَالَ أَخْبَرَنَا يُونُسُ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ عَائِشَةَ، ‏:‏ أَنَّهَا ذَكَرَتِ النَّارَ فَبَكَتْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏"‏ مَا يُبْكِيكِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَتْ ‏:‏ ذَكَرْتُ النَّارَ فَبَكَيْتُ، فَهَلْ تَذْكُرُونَ أَهْلِيكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏"‏ أَمَّا فِي ثَلاَثَةِ مَوَاطِنَ فَلاَ يَذْكُرُ أَحَدٌ أَحَدًا ‏:‏ عِنْدَ الْمِيزَانِ حَتَّى يَعْلَمَ أَيَخِفُّ مِيزَانُهُ أَوْ يَثْقُلُ، وَعِنْدَ الْكِتَابِ حِينَ يُقَالُ ‏{‏ هَاؤُمُ اقْرَءُوا كِتَابِيَهْ ‏}‏ حَتَّى يَعْلَمَ أَيْنَ يَقَعُ كِتَابُهُ أَفِي يَمِينِهِ أَمْ فِي شِمَالِهِ أَمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِهِ، وَعِنْدَ الصِّرَاطِ إِذَا وُضِعَ بَيْنَ ظَهْرَىْ جَهَنَّمَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ يَعْقُوبُ ‏:‏ عَنْ يُونُسَ وَهَذَا لَفْظُ حَدِيثِهِ ‏.‏


আয়িশাহ (রাঃ)


একদা তিনি জাহান্নামের কথা স্মরণ করে কাঁদলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কাঁদছো কেন? তিনি বললেন, জাহান্নামের কথা স্মরণ হওয়ায় কাঁদছি। আপনি কি ক্বিয়ামাতের দিন আপনার পরিবারের কথা মনে রাখবেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অবশ্য তিনটি স্থান যেখানে কেউ কারো কথা স্মরণ রাখবে না। মীযানের নিকট, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জানতে পারবে তার আমলের পরিমান কম হবে নাকি বেশী; আমলনামা প্রাপ্তির স্থান, যখন বলা হবে, “তোমার আমলনামা পাঠ করো” (সূরাহ আল-হাক্কাহঃ ১৯); কেননা তখন সবাই পেরেশান থাকবে যে, তার আমলনামা ডান হাতে পাচ্ছে নাকি বাম হাতে পাচ্ছে নাকি পিছন দিক হতে পাচ্ছে; আর পুলসিরাতের নিকট, যখন তা জাহান্নামের উপর প্রতিষ্ঠিত করা হবে। 


সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৭৫৫


হাদিসের মান: দুর্বল হাদিস


*  এক ব্যক্তি নবী (সা:)–কে জিজ্ঞেস করল, কিয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন, তুমি কিয়ামাতের জন্য কী জোগাড় করেছ?


*  পরকালীন ভয় মানুষকে নীতির গতি তথা ইবাদতের গতি বাড়িয়ে দেয়। আর জুলুম তথা গুনাহের প্রবনতা কমিয়ে দেয় ৷


*  


*  সুলতান বাহাউদ্দিনের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তার পুত্র শাইখ


হামিদুদ্দিন সেবিকা জিনাত বিছানায় শুইলে একশত বেত্রাঘাতের নির্দেশ


( ওয়াজ ও খুতবা-  ২/৪৭৯)


 


*  সবচেয়ে গরিব কে?


অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা: এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কি জানো গরিব কে? সাহাবায়ে কেরাম রা: বললেন, আমাদের মাঝে যার টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত নেই সেই গরিব।’ রাসূলুল্লাহ সা: এরশাদ করেন- ‘আমার উম্মতের মধ্যে কিয়ামত দিবসে ওই ব্যক্তি বেশি গরিব হবে, যিনি দুনিয়া থেকে, নামাজ, রোজা ও জাকাত আদায় করে (বিপুল পরিমাণ সওয়াব নিয়ে) আসবে। আর সাথে ওই সব বিষয়ের লোকদের নিয়ে আসবে, সে যাকে গালি দিয়েছে, মিথ্যা অপবাদ রটিয়েছে, অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে, কারো ইজ্জত সম্মান ও অধিকার নষ্ট করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কিয়ামতে এমন ব্যক্তিদের তার (নামাজ রোজা ও জাকাতের) নেক আমলগুলো দিয়ে দেয়া হবে। যখন নেক আমলগুলো দিতে দিতে শেষ হয়ে যাবে, তখন অত্যাচারিত বা পাওনাদারের পাপগুলো এনে তার ওপর ঢেলে দেয়া হবে। অতঃপর অত্যাচারীকে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে’ (মুসলিম শরিফ) 


বস্তা ভর্তি আমল কি উপকারে আসবে যদি নিজের আখলাক সুন্দর না হয়


*  জুলুমের শাস্তি না পেয়ে কেউ মরবে না


রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)


*  জুলুমের শাস্তি না পেয়ে কেউ মরবে না


রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)


জুলুম একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো নির্যাতন বা অবিচার। সাধারণ অর্থে কাউকে অন্যায়ভাবে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বা যেকোনো পন্থায় অবিচার বা নির্যাতন করাকে জুলুম বলে। তবে জুলুমের সবচেয়ে উত্তম সংজ্ঞা হলো, কোনো কিছু নিজ স্থান বাদ দিয়ে অন্য কোনো স্থানে প্রয়োগ করা বা রাখা। এই সংজ্ঞাটি ব্যাপক অর্থবহ। সব ধরনের জুলুম এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।


জুলুম একটি সামাজিক ব্যাধি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এটি। অন্যের ওপর অন্যায় বা অবিচার করে নিজের পতন ও ধ্বংস ডেকে আনে জালিমরা। আপদ-বিপদ ও দুর্যোগ-বিশৃঙ্খলায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো জুলুম। তাই আল্লাহ তাআলা সবাইকে তা থেকে নিষেধ করেছেন। এমনকি আল্লাহ নিজের জন্যও এটিকে হারাম করেছেন। রাসুল (সা.) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)


আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)


মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।


পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ২২৭)


অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৭)


জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১১)


সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৪১)


মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)


রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’  (বুখারি, হাদিস : ১৪৯৬)


__________________


(ওয়াজ ও খুতবা২/ ৪৭৭)


(বারো চাদের খুতবা শাওয়াল  ২য় পৃ: ১৬৮)


আয়শা রা: হঠাৎ কেদে ফেলেন


*  বাদশা মালিক শাহের আগামীকালের কথা মনে পরে


বাদশার ন্যায় বিচার


বাদশাহ মালিক শাহ ছিলেন আন্দালুসের (স্পেনের) স্বাধীন সুলতান। তার শখ ছিল হরিণ শিকার করা। তাই রাজকার্যে একটু ফুরসত পেলেই হরিণ শিকারের উদ্দেশ্যে ইস্পাহানের জঙ্গলে গমন করতেন। একদিন কিছু সৈন্য নিয়ে তিনি হরিণ শিকারে বের হ’লেন এবং বনের পাশে এক গ্রামে অবস্থান নিলেন। সেই গ্রামে ছিল এক গরীব বিধবা মহিলা। সে তার সন্তানদের নিয়ে এক পর্ণ কুটিরে বাস করত। তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন বলতে ছিল একটি গাভী, যার দুধ পান করে তার তিনটি শিশু লালিত-পালিত হ’ত। কিন্তু বাদশাহর অজান্তে সৈন্যরা সেই গাভীটি যবেহ করে খেয়ে ফেলল। বিধবা তাদের কাছে অনেক কাকুতি-মিনতি করল যে, তার গাভীটি যেন তারা ছেড়ে দেয়। কারণ এটাই তাদের জীবন ধারণের একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু সৈন্যরা তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিল। এতে অসহায় মহিলা চোখে অন্ধকার দেখল। গাভী হারিয়ে সে পাগলপ্রায় হয়ে গেল। সৈন্যদের কাজে বাঁধা দেওয়ার কেউ ছিল না বলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে গাভী যবহের দৃশ্য দেখা ছাড়া তার কিছুই করার ছিল না। রাতে সে ঘুমাতে পারল না। ক্ষুধার্ত শিশুদের বুকফাটা কান্না ও চিৎকার তার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করল। হঠাৎ উৎকণ্ঠার কুহেলিকা ভেদ করেও তার মনে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠল যে, বাদশাহ যেহেতু ন্যায়বিচারক সেহেতু অবশ্যই তাঁর কাছে এর সঠিক বিচার পাওয়া যাবে। সুতরাং প্রত্যুষেই সে বাদশাহর কাছে যাবার জন্য মনস্থির করল। কিন্তু বাদশাহর কাছে পৌঁছা তার কাছে দুরূহ ছিল। ইতিমধ্যে সে জানতে পারল বাদশাহ শিকারে বের হয়েছেন এবং অমুক স্থান দিয়ে রাজপ্রাসাদে ফিরবেন। বিধবা মহিলাটি এই সুযোগকে হাতছাড়া না করে ইস্পাহানের এক প্রসিদ্ধ পুলে দাঁড়িয়ে থেকে বাদশাহর আগমনের প্রহর গুণতে লাগল। কিছুক্ষণ পরেই অভিযোগ পেশ করার সেই মহেন্দ্রক্ষণটি উপস্থিত হ’ল। বাদশাহ পুলের উপর পৌঁছার সাথে সাথেই বিধবা সাহস ও দাপটের সাথে বলল, ‘হে আন্দালুসের সুলতান! আমার ব্যাপারে এই পুলের উপরেই ইনছাফ করবেন, নাকি আখেরাতের পুলছিরাতে? আপনার যেটা পসন্দ বেছে নিন। বিধবার কথাটি যেন বিষাক্ত বান হয়ে বাদশাহর কলিজায় বিঁধে গেল। মহিলার এমন নির্ভিক ও অকপট কথায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় সৈন্যরাও একে অপরের দিকে তাকাতাকি করতে লাগল। বাদশাহ দ্রুত ঘোড়া থেকে নেমে সাগ্রহে বললেন, ‘হে মা! পুলছিরাতে কিছু করার কোনই সামর্থ্য আমার নেই, এই পুলেই আমি ফায়ছালা করতে চাই। আপনি নির্ভয়ে আপনার অভিযোগ পেশ করুন। বিধবা তাকে সবকিছু খুলে বলল। ঘটনা শুনে বাদশাহ অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেন এবং তার চোখে ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠল। সাথে সাথেই তিনি অপরাধী সৈন্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলেন। আর সৈন্যদের এমন নিপীড়নে আফসোস ও দুঃখ প্রকাশ করলেন। বাদশাহ গাভীটির পরিবর্তে বিধবাকে ৭০টি গাভী প্রদান করলেন। বাদশাহর ইনছাফে বিধবা প্রীত হ’ল এবং সন্তুষ্ট চিত্তে তার কুটিরে ফিরে গেল। সম্মানিত পাঠক মন্ডলী! সেই যামানার অভিযোগকারীরা কতই না সাহসী ছিলেন আর শ্রবণকারীরাও কতবড় ন্যায়ের প্রতীক ছিলেন, যা বর্তমান সভ্যতায় রূপকথার গল্পের মতই মনে হয়। কিন্তু তাদের ন্যায়পরায়ণতার প্রধান কারণ ছিল তারা ছিলেন আল্লাহভীরু। আখেরাতের শাস্তিকে তারা ভীষণভাবে ভয় পেতেন। সবুজের বুকে লাল পতাকার এই স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকদের হৃদয়তন্ত্রীতে যদি একবার আল্লাহভীতির দীপশিখা জ্বলে ওঠে, তবে বাংলার আকাশেও উদিত হবে ইনছাফের সোনালী সূর্য। মহান আল্লাহর সকাশে আমাদের বিনীত প্রার্থনা তিনি যেন সত্বর সেই দিনের উন্মেষ ঘটান এবং এদেশ ও জাতিকে রক্ষা করেন- আমীন!


( ওয়াজ ও খুতবা-  ২/৪৭৮)


*  সুলতান বাহাউদ্দিনের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তার পুত্র শাইখ


হামিদুদ্দিন সেবিকা জিনাত বিছানায় শুইলে একশত বেত্রাঘাতের নির্দেশ


( ওয়াজ ও খুতবা-  ২/৪৭৯)


حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ ثَابِتٍ عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنْ السَّاعَةِ فَقَالَ مَتَى السَّاعَةُ قَالَ وَمَاذَا أَعْدَدْتَ لَهَا قَالَ لَا شَيْءَ إِلَّا أَنِّيْ أُحِبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَالَ أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ قَالَ أَنَسٌ فَمَا فَرِحْنَا بِشَيْءٍ فَرَحَنَا بِقَوْلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ قَالَ أَنَسٌ فَأَنَا أُحِبُّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ وَأَرْجُوْ أَنْ أَكُوْنَ مَعَهُمْ بِحُبِّيْ إِيَّاهُمْ وَإِنْ لَمْ أَعْمَلْ بِمِثْلِ أَعْمَالِهِمْ


আনাস (রাঃ)


এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞেস করল, কিয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন, তুমি কিয়ামাতের জন্য কী জোগাড় করেছ? সে বলল, কোন কিছু জোগাড় করতে পরিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালবাসি। তখন তিনি বললেন, তুমি তাঁদের সঙ্গেই থাকবে যাঁদেরকে তুমি ভালবাস। আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর কথা দ্বারা আমরা এত আনন্দিত হয়েছি যে অন্য কোন কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে ভালবাসি এবং আবূ বাক্‌র ও ‘উমার (রাঃ)-কেও। আশা করি তাঁদেরকে আমার ভালবাসার কারণে তাদের সঙ্গে জান্নাতে বসবাস করতে পারব; যদিও তাঁদের ‘আমলের মত ‘আমল আমি করতে পারিনি। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২০)


সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৬৮৮


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


----------------------------------------------------------------------

No comments

Powered by Blogger.